Advertisement
E-Paper

মুখোশটা ধরে রাখার কথাও খেয়াল থাকছে না

একক বৃহত্তম দল, নাকি ভোট পরবর্তী জোটের নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা— মান্যতা দেওয়া উচিত কোনটাকে আগে, তা নিয়ে তীব্র বিতর্ক কর্নাটকে এখন। বিতর্ক গোটা দেশেও।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০১৮ ০০:৪৫
মুখ্যমন্ত্রী পদে ইয়েদুরাপ্পাকে টিকে থাকতে দেওয়া হবে, নাকি সরকারের দখল নেবে কংগ্রেস, সে এখনও স্পষ্ট হওয়া বাকি। ছবি: সংগৃহীত।

মুখ্যমন্ত্রী পদে ইয়েদুরাপ্পাকে টিকে থাকতে দেওয়া হবে, নাকি সরকারের দখল নেবে কংগ্রেস, সে এখনও স্পষ্ট হওয়া বাকি। ছবি: সংগৃহীত।

দেশের পূর্ব প্রান্তের এক রাজ্য যখন গণতন্ত্রের সাংঘাতিক অবক্ষয়ের সাক্ষী হচ্ছে, তখন দক্ষিণের আর এক রাজ্যে গণতন্ত্রের আর এক অদ্ভুত লীলা। একক বৃহত্তম দল, নাকি ভোট পরবর্তী জোটের নিরঙ্কুশ গরিষ্ঠতা— মান্যতা দেওয়া উচিত কোনটাকে আগে, তা নিয়ে তীব্র বিতর্ক কর্নাটকে এখন। বিতর্ক গোটা দেশেও।

রাজ্যপাল একক বৃহত্তম দলকেই আগে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বিজেপি পরিষদীয় দলনেতা বি এস ইয়েদুরাপ্পা মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথও নিয়েছেন। কিন্তু তাতেই শেষ হয়ে যায়নি ‘গণতন্ত্রে’-র উপাখ্যান। মুখ্যমন্ত্রী পদে ইয়েদুরাপ্পাকে টিকে থাকতে দেওয়া হবে, নাকি সরকারের দখল নেবে কংগ্রেস-জেডি (এস) সে এখনও স্পষ্ট হওয়া বাকি। আর সেই হিসেবকে ঘিরেই সব চেয়ে রঙিন চেহারায় কর্নাটকের রাজনীতি।

কর্নাটক নিয়ে যেন ধুন্ধুমার শুরু হয়ে গিয়েছে। কেউ রাজভবন যাবেন বলছেন, অন্য কেউ তার আগেই পৌঁছে যাচ্ছেন। রাজভবন কিছু ঘোষণা করার আগেই কেউ টুইট করে জানিয়ে দিচ্ছেন, কে শপথ নেবেন এবং কখন নেবেন। তীব্র বিতর্কের মুখে সে টুইট ডিলিট করছেন। রাজ্যপাল এর পরে কোনও এক পক্ষকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। অন্য পক্ষ দিল্লি গিয়ে মধ্যরাতে সুপ্রিম কোর্ট খোলাচ্ছেন। আদালত সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের সময়সীমা কমিয়ে দিচ্ছে। কংগ্রেস-জেডি (এস) নিজেদের বিধায়কদের উপর আস্থা রাখতে পারছে না। প্রথমে বেঙ্গালুরুর অদূরে কোনও রিসর্টে তাঁদের ‘বন্দি’ করা হচ্ছে। তার পর বাসে চাপিয়ে রাতারাতি পাশের রাজ্যে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিজেপি-র বিরুদ্ধে ক্রমাগত বিধায়ক ভাঙানোর খেলা চালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠছে।

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

বেঙ্গালুরু থেকে অনেক দূরে বসেও যেন আঁচ পাওয়া যাচ্ছে, কী সাংঘাতিক উথাল-পাথালের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে সেখানকার রাজনীতি। কন্নড় রাজনীতিকদের দেখে মনে হচ্ছে, সবাই কেমন যেন উন্মত্ত এবং বাহ্যজ্ঞান রহিত হয়ে পড়েছেন। কারও বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে বিধায়ক ‘শিকারে’র চেষ্টার অভিযোগ, বিপুল টাকার থলি হাতে ঘোড়া কেনাবেচা করতে নামার অভিযোগ। কিন্তু তিনি নির্লিপ্ত। কেউ আবার নিজের দলের বিধায়কদেরই বিশ্বাস করতে পারেন না। তাই ভিন্‌রাজ্যে নিয়ে গিয়ে ‘বন্দি’ করে রাখেন বিধায়কদের। কোনও কোনও বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে যে, বিপুল অঙ্কের অর্থ বা মন্ত্রীত্বের প্রলোভনে সাড়া দিয়ে তিনি দল বদলে ফেলতে চলেছেন। কিন্তু তিনিও বেশ নির্বিকার। তাঁকে ঘিরে যা কিছু চলছে, সে সব তাঁর বেশ ভালই লাগছে, ভাবখানা অনেকটা এমন।

আরও পড়ুন
আরও জট কর্নাটকে, প্রোটেম স্পিকারকে হঠাতে কোর্টে কংগ্রেস, বেঙ্গালুরু ফিরছে বিধায়ক দল

রাজনীতিতে যে স্বচ্ছ থাকার একটা বাধ্যবাধকতা রয়েছে, জনসাধারণের সামনে নিজেদের ভাবমূর্তি সাদা রাখার একটা প্রয়োজন যে রয়েছে, জনতার রায়কে সম্মান জানানো যে কর্তব্য, সে সব কারও যেন আপাতত মনেই নেই কর্নাটকে। আমাদের দেশের রাজনীতিকদের কত শতাংশ স্বচ্ছ, কত জনের ভাবমূর্তি ভাল, জনতার রায়কে সম্মান জানানোর মতো নীতিকথা নিয়ে ক’জন ভাবিত, সে নিয়ে বিস্তর সন্দেহ রয়েছে। কিন্তু দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিকদের অধিকাংশই চেষ্টা করেন মুখোশটা অন্তত ধরে রাখতে। কর্নাটক সে সবও বোধ হয় ভুলে গিয়েছে। সব কিছু খুল্লমখুল্লা দক্ষিণের রাজনীতিতে এখন।

সদ্য নির্বাচন হল কর্নাটকে। তুমুল প্রচার-যুদ্ধ, অজস্র নীতিকথা, প্রতিশ্রুতির অশেষ বর্ষণে জনতা প্রায় দিশাহারা হয়ে পড়ছিলেন মাত্র ক’দিন আগেও। সে সবের মধ্যেই অনেক ভেবে-চিন্তে, মাথা ঠিক রেখে ভোটকেন্দ্র পর্যন্ত গিয়ে, লাইনে দাঁড়িয়ে সদ্য ভোটটা দিয়ে এসেছেন নাগরিক। ভোটের মরসুমে বিভিন্ন মঞ্চে তিনি নিজের অনেক শুভাকাঙ্খীকে দেখতে পেয়েছেন। নেতারা এত ভালবাসেন তাঁকে! তাঁর কথা এত ভাবেন! নাগরিক বার বার অবাক হয়েছেন। তার পরে নির্বাচন হয়েছে। সদ্য সে সব মিটেছে। তাই নাগরিকের ঘোর কাটেনি এখনও ঠিক মতো। তার মধ্যেই নাগরিক চোখ তুলে চেয়ে দেখছেন, সব কেমন যেন লন্ডভন্ড, ধুন্ধুমার কী একটা ঘটে যাচ্ছে নেতাদের নিজেদের মধ্যে। নাগরিকদের দেওয়া রায় নাকি এখন কেনা-বেচা করার ব্যবস্থা হচ্ছে। প্রকাশ্যেই নানা প্রান্ত থেকে যেন কারা নিলামের দর হাঁকছেন। তুমুল কোলাহল উঠেছে। তার মাঝে দাঁড়িয়ে নাগরিকের মনে হচ্ছে যে তিনি বিপন্ন, অসহায়, একা। তিনি সাহায্য চাইছেন। কিন্তু তাঁর কণ্ঠস্বর এ বার অশ্রুত থেকে যাচ্ছে। কোনও রাজনীতিক তাঁর দিকে তাকাচ্ছেন না। সবাই এখন নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত।

Newsletter Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় B.S. Yeddyurappa
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy