Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Kalbaishakhi

Kalbaishakhi: চৈত্র যে চলে গেল, কালবৈশাখী কোথায়?

কালবৈশাখীর কি কোনও ক্যালেন্ডার আছে? এমন কোনও নিয়ম আছে তাতে বলা যাবে কোন মাসে ক'টা কালবৈশাখী হয়? নিয়ম নেই, তবে একটা পরিসংখ্যান আছে।

এ বার চৈত্রের কপাল পুড়েছে। আসুন তাকিয়ে থাকি বৈশাখের দিকে।

এ বার চৈত্রের কপাল পুড়েছে। আসুন তাকিয়ে থাকি বৈশাখের দিকে। —নিজস্ব চিত্র।

দেবদূত ঘোষঠাকুর
দেবদূত ঘোষঠাকুর
শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২২ ১৬:৩১
Share: Save:

ছোটবেলায় মোহিতলাল মজুমদারের কালবৈশাখী কবিতাটা পড়ে পূর্ব ভারতের এই বিশেষ ঝড়টি সম্পর্কে সম্যক একটা ধারণা জন্মেছিল। কী ভাবে কালবৈশাখীর জন্ম হয়, ঝড়ের ধরন আর তার প্রভাব প্রকৃতিতে কতটা তা-ও বলা ছিল কবিতাটিতে।

‘মধ্যদিনের রক্তনয়ন অন্ধ করিল কে,
ধরনীর পরে বিরাট ছায়ার ছত্র ধরিল কে।’

এই ক’টি লাইনেই পরিষ্কার, কালবৈশাখীর উৎপত্তি কালে আকাশের চেহারাটা ঠিক কেমন হয়। পেশাগত কারণে প্রথম বার আলিপুর আবহাওয়া অফিসে গিয়ে এক অঙ্কপাগল আবহবিদ কালবৈশাখীর যে বিবরণ দিচ্ছিলেন তা, উপরের কবিতাটির প্রতিটি ছত্রের সঙ্গে মিলে যাচ্ছিল। বেশ মজা পাচ্ছিলাম। কারণ এ তো আমার জানা। কেন কালবৈশাখীর প্রয়োজন তার ব্যাখ্যা করতে শুরু করেছেন রাশভারী আবহবিদ— আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এল চারটি লাইন।

‘চৈত্রের চিতা ভষ্ম উড়ায়ে
জুড়াইয়া জ্বালা পৃথ্বীর,
তৃণ অঙ্কুরে সঞ্চারি রস
মধু ভরি বুকে মৃত্তির।’

আবহবিদ গাম্ভীর্যের মুখোশ খুলে আমার সঙ্গে গলা মেলালেন। তার পরে সস্নেহে বললেন, ‘‘একদম সঠিক ব্যাখ্যা। একটা কবিতাই আমাদের আবহবিদদের ছুটি করে দেবে।’’

আমাদের পূর্ব ভারতে কাশবৈশাখীর আগমন ফুটিফাটা মাটিকে ভিজিয়ে রাখার জন্য। সে না এলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কিন্তু যথেষ্ট। গত কয়েক দিন ধরেই আকাশটা সকালের দিকে মেঘলা করে আসছে। অনেকেই ভাবছেন, আজ বিকেল বা সন্ধ্যার দিকে নিশ্চয়ই একটা কালবৈশাখী ঝড় উঠবে। কিন্তু কোথায় কী! বেলা বাড়তেই মেঘ ঠেলে সূর্য যখন মুখ বাড়াচ্ছে, তখন প্রাণ ওষ্ঠাগত। তাপমাত্রা যে খুব একটা বাড়ছে, তা কিন্তু নয়। মেঘের জন্য বাড়ছে আর্দ্রতা। তা উঠে উঠে যাচ্ছে ৯০ শতাংশের আশপাশে। তার তাতেই কালবৈশাখী মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে। এমনই বলছেন‌ আবহবিদেরা।

গত কয়েক বছর ধরে স্বাভাবিক অবস্থার পরিবর্তন এসেছে।

গত কয়েক বছর ধরে স্বাভাবিক অবস্থার পরিবর্তন এসেছে। —নিজস্ব চিত্র।

কেন? আবহবিদদের সঙ্গে থাকতে থাকতে শিখেছি: ছোটনাগপুর মালভূমিতে তাপমাত্রা যত বাড়ে, ততই বাড়ে কালবৈশাখীর সম্ভাবনা। তার জন্য মূলত দু’টি প্রাকৃতিক অবস্থার প্রয়োজন। ঝাড়খণ্ড আর সন্নিহিত অঞ্চলে লাগামছাড়া তাপমাত্রা এবং বঙ্গোপসাগরের উচ্চচাপ বলয়। ঝাড়খণ্ড-ছত্তীসগঢ় হল কালবৈশাখীর রান্নাঘর। সেখানে তাপমাত্রা যত বাড়বে, ততই গরম হবে ভূপৃষ্ঠ। মাটি থেকে বিকিরিত তাপ বাতাসকে গরম করে দেয়। বাতাস যত গরম হয়, ততই তা উঠতে থাকে উপরের দিকে।

ঝাড়খণ্ড ও দক্ষিণবঙ্গে আবহাওয়ার এই অবস্থায় বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয় উচ্চচাপ বলয়, যা জলীয়বাষ্পকে ঠেলে নিয়ে যায় বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে। জলীয়বাষ্প সেই গরম বাতাসের সংস্পর্শে এলে উল্লম্ব মেঘপুঞ্জ তৈরি হয়। তার পরে জলীয় বাষ্পপূর্ণ উল্লম্ব মেঘপুঞ্জ ঝাড়খণ্ডের দিক থেকে এগিয়ে আসে দক্ষিণবঙ্গের দিকে। এক সময় তা জলীয় বাষ্প ধারণের ক্ষমতা হারিয়ে ভেঙে পড়ে। জন্ম হয় কালবৈশাখীর।

কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে স্বাভাবিক এই অবস্থার পরিবর্তন এসেছে। উত্তর ভারত ও পশ্চিম ভারতের তাপমাত্রা মার্চ থেকেই চড়চড় করে বাড়ছে। তাপপ্রবাহ বয়ে গিয়েছে কয়েকটি এলাকায়। কিন্তু বঙ্গোপোসাগরের বায়ু প্রবাহের ধরন বদলে‌ যাওয়ায় জলীয়বাষ্প ঢুকছে। যা ঢুকে যাচ্ছে পরিমণ্ডলের অনেকটা ভিতরে। তাতেই তাপমাত্রা বেশি উঠতে পারছেনা। তৈরি হচ্ছে না বজ্রগর্ভ মেঘ।

কালবৈশাখীর কি কোনও ক্যালেন্ডার আছে? এমন কোনও নিয়ম আছে যাতে বলা যাবে কোন মাসে ক'টা কালবৈশাখী হয়? নিয়ম নেই, তবে একটা পরিসংখ্যান আছে। সেটা অবশ্য বছর দশেকের পুরনো। সেই পরিসংখ্যান বলছে, সাধারণত মার্চে দু’টি, এপ্রিলে চারটি আর মে মাসে কমপক্ষে তিনটি কালবৈশাখী হওয়ার কথা দক্ষিণবঙ্গে। কিন্তু মার্চের কালবৈশাখী প্রায় বিলুপ্তই হয়েছে। অন্য বার নিয়ম মানতে চৈত্র মাসে দু’টি বা অন্তত একটি কালবৈশাখী হয়। এ বার চৈত্রের কপাল পুড়েছে। আসুন তাকিয়ে থাকি বৈশাখের দিকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kalbaishakhi summer Nor'westers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE