Advertisement
E-Paper

চিনই ভারতের এক নম্বর চ্যালেঞ্জ

কূটনীতিতে ভারত তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে উপনীত হতে পারবে কি না, তা নির্ভর করবে দুটি বিষয়ের উপর। এক, ভারতের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের হার; দুই, তার বিদেশ নীতির কৌশলগত মুনশিয়ানা।এক রাষ্ট্রের সঙ্গে আর এক রাষ্ট্রের সম্পর্ক শুধু তাদের ইতিহাস, ভৌগোলিক অবস্থান, অর্থনীতি ও রাজনীতির উপর নির্ভর করে না, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার অবয়ব এই সম্পর্কগুলির সম্ভাবনাকে বহুলাংশে নির্ধারণ করে। বিশ্ব রাজনীতির নানা ব্যাখ্যা আছে। বাস্তববাদীরা মনে করেন, পৃথিবীর ক্ষমতার মেরুকরণ বৃহত্‌ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলিকে চালিত করে।

শিবাশিস চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০১৫ ০০:১২
দুই প্রধানমন্ত্রী।  লি খ্যছিয়াং ও নরেন্দ্র মোদী। বেজিং, ১৫ মে। ছবি: পিটিআই।

দুই প্রধানমন্ত্রী। লি খ্যছিয়াং ও নরেন্দ্র মোদী। বেজিং, ১৫ মে। ছবি: পিটিআই।

এক রাষ্ট্রের সঙ্গে আর এক রাষ্ট্রের সম্পর্ক শুধু তাদের ইতিহাস, ভৌগোলিক অবস্থান, অর্থনীতি ও রাজনীতির উপর নির্ভর করে না, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার অবয়ব এই সম্পর্কগুলির সম্ভাবনাকে বহুলাংশে নির্ধারণ করে। বিশ্ব রাজনীতির নানা ব্যাখ্যা আছে। বাস্তববাদীরা মনে করেন, পৃথিবীর ক্ষমতার মেরুকরণ বৃহত্‌ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলিকে চালিত করে। শক্তিশালী দেশগুলি ক্ষমতার ভারসাম্য গড়ে তুলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। যারা ক্ষমতার পরিবর্তনের ধারণায় বিশ্বাসী, তাদের মতে, একটি বিশ্বশক্তির প্রাধান্যের কাল শেষ হয় অন্য একটি শক্তির উত্থানের মধ্য দিয়ে, এবং বিশ্ব রাজনীতির শান্তি ও স্থায়িত্ব নির্ভর করে ক্ষমতার প্রাধান্যের উপর, ভারসাম্যের উপর নয়। আজকের পৃথিবীর অবস্থা জটিল। মার্কিন শক্তি কিছুটা দুর্বল হয়েছে ঠিকই, কিন্তু সামরিক দৃষ্টিতে বিচার করলে আজও পৃথিবীকে একমেরুবিশিষ্টই দেখায়। অন্য দিকে, চিনের ক্রমবর্ধিত উত্থান এশিয়ার রাজনীতিকে বিশেষ ভাবে প্রভাবিত করছে। ভারতের বিদেশ নীতি প্রধানত এই দুই শক্তির বিবর্তন ও মিথস্ক্রিয়ার উপর নির্ভরশীল। এশিয়া মহাদেশের অন্যতম বৃহত্‌ শক্তি হিসেবে ভারতের উত্থান বিশ্ব রাজনীতির এই কেন্দ্রীয় প্রবণতাকে স্বীকার করেই গড়ে উঠেছে। যে দলই ক্ষমতায় থাকুক, বিদেশ নীতির অভিমুখে মৌলিক পরিবর্তনের কোনও সুযোগ নেই।

নরেন্দ্র মোদী অনুসৃত বিদেশ নীতিতে আপাতত চারটি প্রবণতা চোখে পড়ে। এক, গত দেড় দশকে ভারত-মার্কিন সম্পর্কে যে উন্নতি ঘটেছে, তাকে আরও প্রসারিত ও শক্তিশালী করা। ব্যবসাবাণিজ্য তথা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার কাম্য চরিত্র ও নিয়মাবলিকে কেন্দ্র করে বিশ্বের দুই প্রধান গণতান্ত্রিক শক্তির মধ্যে নানা মতবিরোধ থেকে গেলেও নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও উদার বিশ্ব অর্থনীতি প্রভৃতি ক্ষেত্রে দু’দেশের সহযোগিতা বহুগুণ বেড়েছে। দুই, চিন-ভারত সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে মোদীর আগ্রহ। নানা বিষয়ে মতবিরোধ সত্ত্বেও দু’দেশের আলাপচারিতা বজায় রেখে বোঝাপড়ার পথে সম্পর্কে উন্নতি ঘটানো যে একান্ত প্রয়োজনীয়, উভয় দেশের শীর্ষ নেতৃত্বই তা মেনে নিয়েছে। তিন, ভারতের বিদেশ নীতিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলির গুরুত্ব বাড়ানো। চার, দক্ষিণ এশিয়ার অন্তর্গত প্রতিবেশী রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উন্নত করা। ভারতের বিদেশ নীতির ক্ষেত্রে একটা নীতিগত পরিবর্তন ঘটেছে। ভারত বিশ্ব রাজনীতিতে নিজের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে তত্‌পর। এই প্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়নে আগ্রহী সে। ক্ষমতা ও বহুপাক্ষিকতা ভারতের বিদেশ নীতির দুটি লক্ষ্য হলেও অর্থনীতি ও সামরিক স্বার্থের দাবিকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাস্তবমুখী বিদেশ নীতি রূপায়ণ করতে চাইছে সে।

ভারতের বিদেশ নীতির সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ চিন। নরেন্দ্র মোদীর চিন সফরে এশিয়ার এই দুই রাষ্ট্রের সম্পর্কে টানাপড়েন লক্ষ করেছি। মোদী দীর্ঘ দিন চিনের সঙ্গে কাজ করেছেন, সে দেশে তাঁর ভাবমূর্তি সদর্থক, যদিও তা থেকে দু’দেশের সম্পর্কে পুরনো ক্ষতগুলির নিরাময়ের সম্ভাবনা নেই। ই-ভিসা পরিকল্পনা ঘোষণার মধ্য দিয়ে মোদী দু’দেশের সাধারণ মানুষের সংযোগ বাড়াতে চেয়েছেন, যদিও এ পরিকল্পনা নিয়ে ভারতের নিরাপত্তা সংস্থাগুলির যথেষ্ট সংশয় ছিল। দ্বিতীয়ত, ভারত চিনের সামনে দ্বিপাক্ষিক সমস্ত বিষয়কে আলোচনার জন্য উন্মুক্ত করেছে, যা বৃহত্‌ শক্তিধর রাষ্ট্রের ধর্ম। এমনকী পারমাণবিক ও মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রেও ভারত চিনের সঙ্গে সহযোগিতার রাস্তা খুঁজছে। ভবিষ্যতে চিন এই সব বিষয়ে আলোচনা ও সহযোগিতায় কতটা আগ্রহী হবে, সেটা ভারত-চিন সম্পর্কের গতিপ্রকৃতিকে অনেকখানি নির্ধারণ করবে।

দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের কূটনৈতিক স্বীকৃতি যথেষ্ট জোরদার নয়। এর সুযোগ নিয়ে চিন এই অঞ্চলে তার প্রভাব বহু দূর বাড়িয়েছে। ভারত-পাকিস্তানের অবিরাম বৈরিতা ও চিন-পাকিস্তানের নিবিড় সখ্য ভারতের শক্তিবৃদ্ধির পথে বড় বাধা। নেপাল ও শ্রীলঙ্কায় চিনের প্রভাব বর্ধমান। বাংলাদেশে ক্ষমতার পট বদলালে সে দেশেও চিনের উপস্থিতি ও প্রভাব বাড়বে। তা ছাড়া, তিব্বতে ব্রহ্মপুত্রকে কেন্দ্র করে যে বহু জলাধার নির্মাণের প্রকল্প নিয়েছে, তা ভারতের কাছে এক অশনিসংকেত। অরুণাচল নিয়ে চিনের অনমনীয়তার অন্যতম কারণ নদীবাঁধ ও জলবিদ্যুতের বিপুল সম্ভাবনা। দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন সমীকরণ তৈরি ভারতের পক্ষে আগের চেয়ে কঠিন। চিনের অর্থনৈতিক প্রাচুর্য দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির কাছে চিনকে আকর্ষণীয় করে তুলছে। ভারতের অর্থনীতি চিনের এক-চতুর্থাংশ মাত্র। ভারতের আর্থিক বৃদ্ধির হার আশাব্যঞ্জক বটে, কিন্তু দুই দেশের অর্থনৈতিক ব্যবধান দীর্ঘদিন বজায় থাকবে। ফলে অন্যান্য ছোট দেশের কাছে চিনের আপেক্ষিক গ্রহণযোগ্যতাও কমবে না। অর্থনীতির হাত ধরে রাজনৈতিক অনুপ্রবেশও ঘটে চলবে। ভারত দ্রুত আর্থিক বৃদ্ধির পথে হাঁটতে না পারলে দক্ষিণ এশিয়ায় যে ক্ষমতার সমীকরণ দেখা দেবে সেটা তার অনুকূল না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের কতকগুলো স্বাভাবিক সুবিধে আছে, সে সব ক্ষেত্রে চিনের পক্ষে ভারতকে টেক্কা দেওয়া সহজ হবে না, কিন্তু দু’দেশের প্রভাব প্রতিপত্তির অঙ্কে ফারাক যে কমছে, তা অনস্বীকার্য।

ভারত অবশ্য চিনের প্রথাগত প্রভাব-বলয়ে নিজের উপস্থিতি জানান দিতে শুরু করেছে। মোদীর মঙ্গোলিয়া সফর ভারতের ‘নরম ক্ষমতা’ (সফ্‌ট পাওয়ার) বিস্তারের ভাল উদাহরণ। মঙ্গোলিয়াকে প্রদত্ত অর্থের পরিমাণের নিরিখে এই উদ্যোগের গুরুত্ব বিচার করা ঠিক হবে না। ভারত যে ভাবে বৌদ্ধধর্মকে বিদেশ নীতির অঙ্গ হিসেবে ব্যবহার করছে, তা লক্ষণীয়। ঠিক তেমনই দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের অর্থমূল্যের বিচারে ভারত চিনের তুলনায় নগণ্য, কিন্তু এই সব দেশে সে পা ফেলতে শুরু করেছে। এশিয়ার পরিবর্তিত ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রেক্ষিতে এ সব পদক্ষেপের গুরুত্ব আছে। ভারতে নতুন পরিকাঠামো ও শিল্প নির্মাণের সুযোগ হলে দক্ষিণ কোরিয়ার শিল্পসংস্থাগুলি বড় ভূমিকা নিতে পারে। চিনের তুলনায় কোরিয়ার সংস্থাগুলির ভারতে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে। চিনা মডেলে সে দেশের শ্রমিকদের ব্যবহার করার যে প্রবণতা আছে, তার তুলনায় কোরীয় মডেল ভারতের পক্ষে অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। এটা ঠিকই যে, পস্কোর প্রকল্পকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক টানাপড়েন ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়ার সম্পর্কে কিছু তিক্ততা সৃষ্টি করেছে, কিন্তু অনেক কোরীয় সংস্থাই ভারতে সফল ব্যবসা করছে। দু’দেশের আর্থিক সম্পর্কের সম্ভাবনা কম নয়। দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ার সামনে ভারতের বার্তা খুব পরিষ্কার: চিন ছাড়াও আর একটি বিকল্প আছে। চিন যদিও ভারতকে পর্যাপ্ত গুরুত্ব দিতে নারাজ, তবু দু’লক্ষ কোটি ডলার জিডিপি’র দেশ ভারতের বাজারকে উপেক্ষা করার সামর্থ্য বেজিংয়ের নেই। এবং, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কে শৈত্য যত বাড়বে, সে দেশের রাজনীতিতে ভারতের গুরুত্ব তত বাড়তে বাধ্য।

মোদীর চিন সফরের প্রাক্কালে কতকগুলো তাত্‌পর্যপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল। প্রথমত, সীমান্ত সমস্যা জিইয়ে রাখার উদ্দেশ্যে সীমান্ত লঙ্ঘনের যে প্রবণতা চিনের আচরণে দেখা গেছে, বেজিং এ বার তা থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখে। কিন্তু মোদীর সফরের কিছু দিন আগে চিন শিনজিয়াং থেকে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের গিলগিট ও বালটিস্তান হয়ে বালুচিস্তানের গ্বদর বন্দর পর্যন্ত বিস্তৃত রেল, সড়ক এবং তেল ও গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণের এক চমকপ্রদ পরিকল্পনা ঘোষণা করে, যার আর্থিক মূল্য ৪৬০০ কোটি ডলার। অনেকের মতে, এ পরিকল্পনা ভারতকে বেশ চাপের মুখে ফেলে দেবে, কারণ এটি চিনের ‘সামুদ্রিক রেশমপথ’-এর (ম্যারিটাইম সিল্ক রুট) অংশ, যার আসল লক্ষ্য ভারতকে ঘিরে ফেলা। চিন যতই ভারতের প্রতি অবজ্ঞা দেখাক, ভারত-মার্কিন ক্রমবর্ধমান জোটের প্রেক্ষিতে এবং ভারতের সঙ্গে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, মায়ানমার ও অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশের আর্থিক ও সামরিক সম্পর্কে উন্নতির ফলে ভারতকে উপেক্ষা করা চিনের পক্ষে অসম্ভব। অর্থনৈতিক বাধ্যবাধকতা আর সামরিক ও রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার জাঁতাকলে আবদ্ধ ভারত ও চিন। শত্রুতা বা মিত্রতা, কোনওটাই এই জটিল সম্পর্কের যথার্থ বর্ণনা নয়। সম্পর্কের জটিল ও গভীর বহুমাত্রিকতাকে স্বীকার করে ভারত ও চিন এক বন্ধুর, ঝুঁকিবহুল সহাবস্থানের পথে অগ্রগামী, যেখানে স্বার্থের দ্বন্দ্ব ও সহযোগিতার মেলবন্ধনের ভূমিকা সমান সমান।

এই দু’দেশের সম্পর্ককে নিছক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ভাবলে ভুল হবে। বিশ্বব্যবস্থায় ক্ষমতার বণ্টন যে কাঠামো নির্মাণ করে, শক্তিধর রাষ্ট্রসমূহের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তার নিয়মেই গড়ে ওঠে। আজকের পৃথিবী মার্কিন সামরিক ক্ষমতার আধিপত্যের কাঠামোয় রচিত হলেও সে ক্ষমতা নিরঙ্কুশ নয়। মার্কিন বিদেশ নীতি অতিসক্রিয়তায় ভারাক্রান্ত। মার্কিন অর্থনীতি দীর্ঘ মন্দা থেকে বেরিয়ে এলেও তার পুরনো আধিপত্যের পুনরুত্থান অসম্ভব। পশ্চিম এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকার ঘটনাবলি প্রমাণ করে যে, মার্কিন সামরিক আধিপত্য বাস্তবে কার্যকর না-ও হতে পারে। অন্য দিকে, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির উপর দাঁড়িয়ে চিন তার সামরিক প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করতে তৎপর। এই লক্ষ্যে অন্য দেশের সঙ্গে বিরোধ বেজিংকে আর রক্ষণাত্মক করে না। দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের আধিপত্য প্রকট। ভারতের মতো নতুন শক্তির সামনে চিনই প্রধান চ্যালেঞ্জ। ভারত তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে উপনীত হতে পারবে কি না, তা নির্ভর করবে দুটি বিষয়ের উপর। এক, ভারতের অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের হার; দুই, তার বিদেশ নীতির কৌশলগত মুনশিয়ানা। এ ক্ষেত্রে চিনের সঙ্গে ক্ষমতার নয়া সমীকরণ রচনাই ভারতের সামনে সবচেয়ে কঠিন কাজ। মোদী সরকার এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা কী ভাবে করে, সেটা ভবিষ্যৎ বলবে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের শিক্ষক।

chian vs india sino indian relation indian economic growth and china shibashis chattopadhyay abp post editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy