Advertisement
E-Paper

অন্যায় অপচয়

মাঝেরহাট ব্রিজটির মেরামতিতে খরচ হইত সাকুল্যে সওয়া তিন কোটি টাকা— মুখ্যমন্ত্রীর পূজার চাঁদার মাত্র সাড়ে বারো শতাংশ। খরচের হিসাব কষিবার পরও কাজটি এক বৎসর আটকাইয়া থাকিল।

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৫৪
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

দুর্গাপূজা চাঁদাবাবদ রাজকোষ হইতে ২৮ কোটি টাকা কেন দিতে হইল, তাহার উত্তরটি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই জানাইয়া দিয়াছেন— একই সঙ্গে দুর্গাপূজা এবং মহরম করিয়া তিনি ‘একটি উদ্ভট দল’-এর মুখ বন্ধ করিয়া দিতে চাহেন। অর্থাৎ, ক্লাবে ক্লাবে টাকা বিলি করিয়া আনুগত্য কেনাই শুধু নহে, এই দফায় আরও একটি বাড়তি তাগিদ বিদ্যমান। তিনি দেখাইয়া দিতে চাহেন, তিনি কেবল মহরমই করেন না, দুর্গাপূজাও করেন। যে কারণে এখন গণেশপূজার পৃষ্ঠপোষকতা করিতে হয়, জন্মাষ্টমীর ব্যবস্থা করিতে হয়, ২৮০০০ পূজা কমিটিকে চাঁদা দেওয়াও সেই তাগিদেই। কাজটি রাজনৈতিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ কি না, সেই বিচার তৃণমূল কংগ্রেস নামক দলটির নিজস্ব। কেহ বলিতেই পারেন, এক হিন্দুত্বের মোকাবিলা করিতে প্রতিযোগিতামূলক হিন্দুত্বের খেলায় নামা বিচক্ষণতার কাজ নহে। কিন্তু, ইহা ছাড়াও একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। রাজকোষের টাকার এই ব্যবহার কি সমর্থনযোগ্য? পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলিয়াছেন, দুর্গোৎসবের সামাজিক গুরুত্ব মনে রাখিয়া বিষয়টির বিবেচনা করা উচিত। সামাজিক গুরুত্বের কথাটি স্বীকার করিতে হয়, কিন্তু উৎসবটি যে ধর্মীয়, তাহাও সংশয়াতীত। কুরবানির জন্য গরু-ছাগল কিনিবার টাকা দেওয়াও যেমন সরকারের কাজ নহে, দুর্গাপূজা করিবার টাকা দেওয়াও নহে। সামাজিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু ধর্মীয় সংযোগহীন, এমন কোনও ক্ষেত্র যদি পার্থবাবুরা খুঁজিয়া না পান, তবে সেই ব্যর্থতা তাঁহাদের।

অতঃপর প্রশ্ন, ‘সামাজিক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ’ ক্ষেত্র বলিতে কী বুঝায়? সেতু সংরক্ষণ, রাস্তা মেরামতির ন্যায় কাজগুলির সামাজিক গুরুত্ব কতখানি? অথবা, সরকারি কর্মীদের মহার্ঘভাতা মিটাইয়া দেওয়া? বা স্কুলে শূন্যপদে শিক্ষক নিয়োগ, গ্রামীণ হাসপাতালে যথেষ্ট সংখ্যক চিকিৎসকের ব্যবস্থা করা? মাঝেরহাট ব্রিজটির মেরামতিতে খরচ হইত সাকুল্যে সওয়া তিন কোটি টাকা— মুখ্যমন্ত্রীর পূজার চাঁদার মাত্র সাড়ে বারো শতাংশ। খরচের হিসাব কষিবার পরও কাজটি এক বৎসর আটকাইয়া থাকিল। তাহার মধ্যে ব্রিজটিই ভাঙিয়া পড়িল, তিন জনের প্রাণহানি হইল। তিনটি জীবন রক্ষা করা কি সামাজিক ভাবে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ? পার্থবাবুরা এই প্রশ্নের উত্তর দিবেন, তেমন ভরসা কম। কারণ, তাঁহারা সম্ভবত আবডালে স্বীকার করিবেন, সামাজিক গুরুত্ব ইত্যাদি নেহাত কথার কথা, হিন্দু ভোট যাহাতে সম্পূর্ণ হাতছাড়া না হইয়া যায়, তাহার জন্যই এই খয়রাতি।

রাজকোষের টাকায় চির কালই দলীয় রাজনীতি করিবার প্রবণতা দেখা যায়। কাজেই, শুধুমাত্র তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করা অন্যায় হইবে। রাহুল গাঁধী যে ভোটের আগে মন্দিরে মন্দিরে সফর করিয়া বেড়ান, ভুলিলে চলিবে কেন। কিন্তু, সকলেই করিয়া থাকে বলিলেই কাজটি উত্তম হইয়া যায় না। ধর্মীয় ব্যাপারে সরকারি অর্থসহায়তা যে কতখানি বিপজ্জনক, এবং অন্তত পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনের কাছে কতখানি অপ্রাসঙ্গিক, তাহা না বলিলেই নয়। প্রথমত, বিজেপি রামনবমী উৎসব ইত্যাদির মাধ্যমে যে ধর্ম-ধর্ম খেলাটি আরম্ভ করিয়াছে, এই ধরনের প্রকল্প দিয়া মুখ্যমন্ত্রী জ্ঞানত বা অজ্ঞানত তাহাকে বৈধতা দিতেছেন। তৃণমূলও যদি হিন্দুত্বের তাস খেলিতে আরম্ভ করে, বিজেপির হিন্দুত্ব-রাজনীতি লইয়া প্রশ্ন করিবার যুক্তিটি নষ্ট হয়। দ্বিতীয়ত, প্রশাসক হিসাবে মুখ্যমন্ত্রী নিশ্চয় জানেন, রাজ্যে কার্যত কোনও বারোয়ারি দুর্গাপূজাই সাধারণ মানুষের তুমুল অসুবিধা ব্যতীত আয়োজিত হয় না। সেতুভঙ্গের ঘটনাটি প্রমাণ— সাধারণ মানুষের প্রাণধারণ ও জীবিকা অতিবাহনের শতসহস্র অসুবিধা লাঘব করিবার ক্ষেত্রে রাজ্য প্রশাসনের অনেক গাফিলতি, তাহার কাজ বাকি। সেই প্রেক্ষিতে বারোয়ারি পূজায় অর্থ ব্যয় কেবল অকারণ অপচয় নহে, রীতিমতো অন্যায় বলিয়া গণ্য হইবে।

Mamata Banerjee মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় Durga Puja Grant Controversy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy