Advertisement
E-Paper

করিলে আবাদ

নরেন্দ্র মোদীরা গাঁধীর চশমা, চরকা, লাঠি লইয়াছেন বটে, তাঁহার আত্মাটিকে ছুঁইতেও পারেন নাই। নচেৎ, অন্তত ২ অক্টোবর কৃষকদের বিক্ষোভ দমন করিতে তাঁহারা এই বিপুল পরিমাণ পুলিশ পাঠাইতে পারিতেন না।

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৮ ০০:১২

কৃষকদের বিক্ষোভ মিছিল যাহাতে রাজধানী শহরে প্রবেশ না করিতে পারে, তাহার জন্য কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করিয়াছিল কেন্দ্রীয় সরকার। উত্তরপ্রদেশ-দিল্লি সীমান্তে যাহা ঘটিল, তাহাতে দুইটি কথা স্পষ্ট। দ্বিতীয় কথাটি হইল, নরেন্দ্র মোদীরা গাঁধীর চশমা, চরকা, লাঠি লইয়াছেন বটে, তাঁহার আত্মাটিকে ছুঁইতেও পারেন নাই। নচেৎ, অন্তত ২ অক্টোবর কৃষকদের বিক্ষোভ দমন করিতে তাঁহারা এই বিপুল পরিমাণ পুলিশ পাঠাইতে পারিতেন না। আর প্রথম কথাটি হইল, ২০১৯ সালে নরেন্দ্র মোদীর প্রধান প্রতিপক্ষ রাহুল গাঁধী নহেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নহেন, হার্দিক পটেল-জিগ্নেশ মেবাণীও নহেন— প্রধান প্রতিপক্ষের নাম ভারতের ৬০ শতাংশ মানুষ। কৃষির উপর নির্ভরশীল ভারত। কৃষকদের ক্ষোভের কারণের চরিত্রটি, স্বভাবতই, অর্থনৈতিক। তাঁহারা নিঃশর্ত ঋণমকুব দাবি করিতেছেন, স্বামীনাথন কমিটির সুপারিশ অনুসারে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য চাহিতেছেন, ডিজ়েলের বর্ধিত দামে নাকাল হওয়া হইতে নিস্তার চাহিতেছেন। উত্তরপ্রদেশের আখচাষিরা সরকারের ঘরে যে ফসল বেচিয়াছিলেন, তাহার বকেয়া দাম দাবি করিতেছেন। দাবিগুলি হইতে আরও একটি কথা স্পষ্ট: ভারতীয় কৃষিতে আজ অবধি প্রকৃত সংস্কার হয় নাই। অটলবিহারী বাজপেয়ীর ভারত উদয়, ইউপিএ-র ‘ভারত নির্মাণ’ পার হইয়া নরেন্দ্র মোদীর ‘অচ্ছে দিন’, কোনও জমানাই ভারতীয় কৃষিকে স্বাবলম্বী করিতে পারে নাই। ফলে, কৃষকরা এখনও ঋণমকুব আর সহায়ক মূল্যের দাবিতেই আটকাইয়া থাকিতে বাধ্য। বাজারে কেন তাঁহাদের প্রবেশাধিকার নাই, এই প্রশ্নটির অস্তিত্বই তাঁহাদের ক্ষোভ-মানচিত্রে প্রতিষ্ঠিত হয় নাই।

অর্থনীতিসঞ্জাত এই ক্ষোভ তাহার ধর্ম মানিয়াই রাজনৈতিক প্রশ্নে পরিণত হইয়াছে, যাহার অভিমুখ মূলত নরেন্দ্র মোদী। প্রথমত, কেন্দ্রে যে দল ক্ষমতাসীন থাকে, কৃষকবিক্ষোভ তাহার বিরুদ্ধেই ধাবিত হয়। তাহাই স্বাভাবিক। কিন্তু, নিজের পরিস্থিতিটি আরও জটিল করিয়াছেন মোদী স্বয়ং। তাঁহার ‘অচ্ছে দিন’-এর খোয়াবনামায়, ‘মন কি বাত’-এর প্রগল্ভতায় কৃষকরা বহু স্বপ্ন দেখিয়াছিলেন। ইহা নিঃসন্দেহে মোদীর কৃতিত্ব যে তিনি এত মানুষকে এক সঙ্গে এক প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাস করাইতে পারিয়াছিলেন, কিন্তু এখন সেই কৃতিত্বই বুমেরাং হইয়াছে। অতএব, ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকের আয় দ্বিগুণ করিয়া দেওয়া বা দেশের হরেক প্রান্তে দ্বিতীয় সবুজ বিপ্লব সংঘটন, কোনও প্রতিশ্রুতিতেই কৃষকদের মন গলিতেছে না। ২০১৮ সালটি ভারতীয় রাজনীতিতে কৃষক বিক্ষোভের বৎসর হিসাবে থাকিয়া যাইবে, ইহা নরেন্দ্র মোদীর নিকট সুসংবাদ হইতে পারে না। রাজনীতি অথবা স্বপ্ন-বিপণন, কোনও অস্ত্রেই কৃষকদের মোকাবিলা করিতে না পারিবার স্বীকারোক্তিটিই গাঁধী জয়ন্তীর দিন পুলিশের বুটে, লাঠিতে শোনা গেল।

একদা ভারতীয় কৃষক বিক্ষোভের মুখ মহেন্দ্র সিংহ টিকায়েতের রাজনীতির সহিত বর্তমান কৃষক বিক্ষোভের একটি চরিত্রগত ফারাক আছে। এই বিক্ষোভ আরও অনেক বেশি ব্যাপক, ইহা শুধু বৃহৎ কৃষকদের আন্দোলন নহে। বস্তুত, মহারাষ্ট্রের কৃষক মিছিল হইতে দিল্লির দুই দফায় জমায়েত, প্রতিটি ক্ষেত্রেই মাঝারি ও ক্ষুদ্র চাষিরা আগের তুলনায় ঢের বেশি সরব। অর্থাৎ, ক্ষোভটি কোনও একটি গোত্রের নহে, বহুবর্ণী কৃষক সমাজের বহুবিধ ক্ষোভ এক মিছিলে জড়ো হইয়াছে। বিরোধীরা এই ক্ষোভের পুঁজিটিকে ব্যবহার করিতে ঝাঁপাইবেন, বিজেপির তেমন আশঙ্কা থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু, রাহুল গাঁধীরা তাঁহাদের আশ্বস্ত করিয়াছেন। দেশ জুড়িয়া বিক্ষোভ চলিতেছে, অথচ বামপন্থীদের কিছু বিক্ষিপ্ত প্রচেষ্টা ব্যতীত বিরোধী রাজনীতির মন অন্যখানে। রাহুল গাঁধীরা নহেন, ২০১৯-এ মূল প্রতিপক্ষ কৃষকরাই।

Farmer protest Mahatma Gandhi Narendra Modi Lok Sabha Election 2019
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy