Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

যুদ্ধকালীন

এই সুযোগকে কাজে লাগাইয়া অবহেলিত স্বাস্থ্যক্ষেত্রটির আমূল পরিবর্তন সাধনের রূপরেখাটিও তৈরি করিতে হইবে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ৩০ অক্টোবর ২০২০ ০১:৫৩
Share: Save:

ভয়াবহ সঙ্কটের চিত্রটি ক্রমে স্পষ্ট হইতেছে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে। সংক্রমণের হার এখনও উদ্বেগজনক, অন্য দিকে একের পর এক চিকিৎসকের মৃত্যু পরিস্থিতি আরও জটিল করিতেছে। এ-যাবৎ শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গেই কোভিড-আক্রান্ত হইয়া ৬৪ জন চিকিৎসকের মৃত্যু হইয়াছে। সুতরাং, উৎসব-পরবর্তী সময়ে রোগীর সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাইলে পরিষেবা দিবার জন্য চিকিৎসক পাওয়া যাইবে না, এমন আশঙ্কা অমূলক নহে। অবশ্য সঙ্কট শুধুমাত্র এই রাজ্যের, কিংবা এই দেশের নহে। ইহা বিশ্বজনীন। অতিমারির দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হইবার সঙ্গে সঙ্গে উন্নততর স্বাস্থ্য-পরিকাঠামোর ইউরোপেও চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীর সঙ্কট তীব্র হইয়াছে। সঙ্কট মোকাবিলায় বেলজিয়াম কোভিড-পজ়িটিভ, অথচ উপসর্গহীন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ চালাইয়া যাইতে বলিয়াছে। কোথাও চিকিৎসকদের বেতন বাড়িতেছে, কোথাও বিদেশে কর্মরত চিকিৎসকদের দেশে ফিরিয়া পরিষেবার কার্যে যুক্ত হইতে অনুরোধ করিতেছে সরকার।

ভারতের অবস্থা সংক্রমণ বৃদ্ধির আগামী দিনে আরও কঠিন হইবে। কারণ, দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো বেহাল। তাহার জন্য অবশ্য শুধু অতিমারি দায়ী নহে— জিডিপি-র এক-দেড় শতাংশে কত দূরই বা হয়? তাহার উপর অতিমারির ঘা পড়িয়াছে। বাজারে টিকা আসিলেও দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার উপর হইতে এই প্রবল চাপ এখনই সরিবার নহে। সঙ্গে যুক্ত হইয়াছে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের সংক্রমণ ও মৃত্যু। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে আবার বেসরকারি ক্ষেত্রগুলি হইতে গণহারে নার্সদের ইস্তফা চলিতেছে বেতন এবং কর্মনিরাপত্তাজনিত কারণে। সুতরাং, পরিষেবা ভাঙিয়া পড়া সময়ের অপেক্ষামাত্র। এহেন পরিস্থিতিতে সরকারের কর্তব্য একটাই হওয়া উচিত— যুদ্ধকালীন তৎপরতায় চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মী-সংখ্যার ঘাটতি পূরণ। কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই প্রকৃত অর্থেই ‘বিশ্বযুদ্ধ’, দুনিয়ার প্রতিটি প্রান্তে সেই লড়াই চলিতেছে। অতএব, যুদ্ধের মডেল অনুসরণ করিয়াই আপৎকালীন স্বাস্থ্যকর্মী বাহিনী গড়িয়া তুলিতে হইবে। ইতিমধ্যেই বহু বিলম্ব হইয়াছে, আর নহে। এক জন চিকিৎসক তৈরি করিতে সময় লাগে। কিন্তু আপৎকালীন প্রশিক্ষণে স্বাস্থ্যকর্মী তৈরি করা যায়। তাহার জন্য কী করণীয়, সরকারকে অবিলম্বে স্থির করিতে হইবে।

এবং, এই সুযোগকে কাজে লাগাইয়া অবহেলিত স্বাস্থ্যক্ষেত্রটির আমূল পরিবর্তন সাধনের রূপরেখাটিও তৈরি করিতে হইবে। জাতীয় আয়ের এক শতাংশের কিছু অধিক স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ করিলে তাহার জীর্ণ দশা ঘুচিবার নহে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি মিলিয়া যাহাতে সেই বরাদ্দ আরও বৃদ্ধি করিতে পারে, তাহার জন্য সরকারের উপর রাজনৈতিক চাপ তৈরি করিতে হইবে। অন্য দিকে, আপৎকালীন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যে স্বাস্থ্যকর্মীদের এখন তৈরি করা হইবে, ভবিষ্যতে তাঁহাদের মাধ্যমেই স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মী-সংখ্যার ঘাটতি অনেকাংশে পূরণ করা সম্ভব। বিশেষত প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইহারাই চিকিৎসা পরিষেবার প্রধান স্তম্ভ হইয়া উঠিতে পারেন। অতিমারি এক সুযোগ আনিয়া দিয়াছে। আপৎকালীন পরিকাঠামোকে কাজে লাগাইয়া এত দিনের সুবিশাল গর্তগুলিকে মেরামত করিবার সুযোগ। তাহার সদ্ব্যবহারের ভাবনাটিও এখনই ভাবিতে হইবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus In West Bengal Health COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE