নিরাপদে থাকিতে হইলে ঘরে থাকুন— এই করোনাভাইরাস-আক্রান্ত সময়ে ইহাই প্রধানতম পরামর্শ। কিন্তু, ঘরে যে বিপদ লুকাইয়া আছে, তাহার হাত হইতে নিরাপত্তা দিবে কে? গার্হস্থ্য হিংসা মহিলাদের নিরাপত্তাহীনতার অন্যতম কারণ। ভারতে প্রতি তিন জন মেয়ের মধ্যে এক জন গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হন। পরিস্থিতি আরও জটিল করিয়াছে লকডাউন। পুরুষদের কাজে যাওয়া বন্ধ। সঙ্গে যোগ হইয়াছে অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, জীবিকা হারাইবার ভয় এবং গৃহবন্দিত্বজনিত অবসাদ। প্রত্যক্ষ ফল হিসাবে গোটা দুনিয়াতেই গার্হস্থ্য হিংসার হার বৃদ্ধি পাইয়াছে। ভারতেও। জাতীয় মহিলা কমিশনের নিকট গত ২৩ হইতে ৩০ মার্চ পর্যন্ত পারিবারিক হিংসার অভিযোগ জানাইয়া শুধুমাত্র ই-মেল জমা পড়িয়াছে ৫৮টি।
ইহা তো ই-মেলের পরিসংখ্যান। ভারতে পারিবারিক হিংসার অভিযোগ জানাইতে এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ মেয়েদের কাছে ফোন অথবা চিঠিই ভরসা। অথচ দেখা গিয়াছে, কোনও কোনও জায়গায় নির্যাতনের অভিযোগ জানাইয়া ফোনের সংখ্যা সম্প্রতি উল্লেখযোগ্য ভাবে হ্রাস পাইয়াছে। আশঙ্কা, গৃহে সর্ব ক্ষণ পুরুষের উপস্থিতির কারণে অভিযোগ জানাইবার সুযোগ মিলিতেছে না মেয়েদের। বস্তুত, পুরুষের অনুপস্থিতিতে যে সামান্য স্বস্তির অবকাশ বাড়ির মহিলাদের মিলিত, গৃহের বাহিরে সামাজিক মেলামেশার কারণে সুখ-দুঃখের আদানপ্রদানের যে সুযোগ তাঁহারা পাইতেন, লকডাউনের ফলে সেই সমস্তই বন্ধ হইয়াছে। ঘরের গণ্ডির ভিতর আবদ্ধ থাকা, এবং অহরহ নির্যাতন তাঁহাদের শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ভয়ঙ্কর ক্ষতিসাধন করিতেছে। চতুর্থ জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষা (২০১৫-১৬) হইতে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ভারতে পনেরো হইতে উনপঞ্চাশ বৎসর বয়সি মেয়েদের মধ্যে ত্রিশ শতাংশেরও অধিক পনেরো বৎসর হইতেই শারীরিক নির্যাতনের শিকার। দেশের অ-স্বাভাবিক পরিস্থিতি সেই হার আরও বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিতেছে। গার্হস্থ্য হিংসাবৃদ্ধির কুপ্রভাব হইতে পরিবারের শিশুরাও মুক্ত নহে।
তবে, পারিবারিক সঙ্কট শুধুমাত্র ভারতের নহে। সংক্রমণের আঁতুরঘর চিনের হুবেই প্রদেশে শুধুমাত্র ফেব্রুয়ারি মাসে গার্হস্থ্য হিংসার অভিযোগ জমা পড়িয়াছে সাধারণ সময় অপেক্ষা তিন গুণ অধিক। অন্যান্য দেশের চিত্রও একই রকম উদ্বেগজনক। প্রতিকার হিসাবে পশ্চিমের দেশগুলি কিছু পদক্ষেপ করিয়াছে। ফ্রান্সে সরকারি খরচে নির্যাতিতাদের বিভিন্ন হোটেলে রাখিবার বন্দোবস্ত হইয়াছে। ব্রিটেনে গৃহবন্দি থাকিবার কড়া নিয়ম নির্যাতিতাদের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত হইবে না বলিয়া আশ্বাস দেওয়া হইয়াছে। কিন্তু ভারতের মতো দেশে সমস্যা হইল, পারিবারিক হিংসাকে এখানে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয় না। নির্যাতিত হইয়া পুলিশের দ্বারস্থ হইবার পরও ঘরের সমস্যা ঘরেই মিটাইয়া লইবার পরামর্শ দেওয়া হয়। সেইরূপ (কু)পরামর্শদান অবিলম্বে বন্ধ করিয়া যথোচিত পদক্ষেপ করিতে হইবে। আগামী দিনে গার্হস্থ্য হিংসা যে আরও বৃদ্ধি পাইবে, তাহা ধরিয়াই আপৎকালীন ব্যবস্থাগুলির মধ্যে ইহাকেও অন্তর্ভুক্ত করিতে হইবে। পারিবারিক হিংসাবৃদ্ধি শুধুমাত্র এখন আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা নহে। বৃহদর্থে ইহা যে জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাও বটে, তাহা ভাবিবার সময় আসিয়াছে।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy