Advertisement
E-Paper

গণতন্ত্রে আস্থা

দেশ লইয়া, সরকারের নীতি লইয়া বিরোধীরা যাহাতে নিজেদের বক্তব্য, অসন্তুষ্টি, পরামর্শ বিনা বাধায়, বিনা দ্বিধায় সরকার পক্ষের নিকট পেশ করিতে পারেন, সেই দরজা-জানালাগুলি খুলিয়া রাখিবার কাজটি ছিল প্রধানমন্ত্রীরই।

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০১৮ ০০:০০
নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

সংসদের আস্থা ভোটে যে নরেন্দ্র মোদীর সরকার পড়িবে না, কথাটি বিলক্ষণ জানা ছিল। তবুও, গত অধিবেশনের দাবির রেশ টানিয়া বাদল অধিবেশনেও বিরোধীরা ফের অনাস্থা প্রস্তাব আনিলেন কেন? তাঁহারা একটি নাটকীয় মুহূর্ত রচনা করিতে চাহিয়াছিলেন। এমন একটি মুহূর্ত, যখন গোটা দেশের দৃষ্টি থাকিবে তাঁহাদের উপর, যখন সরকারপক্ষ বাধ্য হইবে তাঁহাদের অসন্তোষের কথা শুনিতে। অনাস্থা প্রস্তাব সেই নাটকীয় মুহূর্তটির ধারকমাত্র। ভারতের দুর্ভাগ্য, সংসদের প্রাত্যহিক পরিসরেই যে কথাগুলি আলোচিত হইবার কথা, তাহার জন্য নাটকের প্রয়োজন হয়। দায়টি বিরোধীদের উপর নহে, বর্তাইবে শাসক দলের উপর। তাহাদের শীর্ষ নেতার উপর। আলোচনার পরিসর তৈরি করিবার দায়িত্ব ছিল তাঁহাদের। দেশ লইয়া, সরকারের নীতি লইয়া বিরোধীরা যাহাতে নিজেদের বক্তব্য, অসন্তুষ্টি, পরামর্শ বিনা বাধায়, বিনা দ্বিধায় সরকার পক্ষের নিকট পেশ করিতে পারেন, সেই দরজা-জানালাগুলি খুলিয়া রাখিবার কাজটি ছিল প্রধানমন্ত্রীরই। তিনি সেই কাজে ব্যর্থ বলিলে অতি অল্প বলা হয়। চার বৎসরাধিক কাল তাঁহাকে দেখিয়া দেশবাসীর কখনও মনে হয় নাই যে তাঁহার নিকট গণতন্ত্রের তিলমাত্র গুরুত্ব আছে। ফলে, বিরোধীদের সহিত আলোচনার গণতান্ত্রিক পরিসরটিকেও তিনি অপরিহার্য বোধ করেন নাই। সংসদে অতি সামান্য সময় উপস্থিত থাকিয়াছেন। নোট বাতিলের দৌলতে অসংগঠিত ক্ষেত্রে নাভিশ্বাস উঠিয়াছে, জিএসটির ধাক্কায় অর্থনীতি কক্ষচ্যুত হইয়াছে, গোসন্ত্রাসের ফলে প্রাণ গিয়াছে বহু মানুষের— কিন্তু কোনও সঙ্কটই প্রধানমন্ত্রীকে বিরোধীদের সহিত আলোচনায় বসাইতে পারে নাই। ফলে, নাটক ভিন্ন গতি কী?

অতএব, সংসদের কক্ষে ভোটের ফল যতই জানা থাকুক, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শুক্রবারের অনাস্থা প্রস্তাবটির গুরুত্ব অনস্বীকার্য। এক দিকে যেমন তাহা প্রধানমন্ত্রীর অ-গণতান্ত্রিক চলনের কথা বলে, অন্য দিকে তেমনই জানায়, সরকার পক্ষকে সামনে বসাইয়া তাহাদের কাজের সমালোচনা করিতে পারিবার অধিকারটি কতখানি গুরুত্বপূর্ণ। শাসকদের নিকট বিরোধীদের প্রশ্নের উত্তর দিবার, তাঁহাদের অসন্তোষ লাঘব করিবার ইহা এক সুবর্ণ সুযোগ। এবং, উত্তর তো শুধু কিছু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে দেওয়া নহে, প্রকৃত প্রস্তাবে তাহা জনগণের নিকট জবাবদিহি। গণতন্ত্রে যাহা অপরিহার্য। জনসভায় দাঁড়াইয়া জবাবদিহি হয় না, আত্মপ্রচার হয়। অতএব, সংসদের অভ্যন্তরের এই সুযোগটি অতি তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। শাসক জোটের নেতারা তাহা হেলায় হারাইলেন। সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠিতে তাঁহাদের রুচি নাই।

নিজেকে তুচ্ছতার ঊর্ধ্বে প্রতিষ্ঠা করিবার যে চেষ্টা সাম্প্রতিক অতীতে রাহুল গাঁধীর মধ্যে দৃশ্যমান ছিল, দুঃখজনক ভাবে তিনি নিজেই তাহাকে অন্তত আংশিক ভাবে লঘু করিয়া দিলেন। নিজের ভাষণ শেষে প্রধানমন্ত্রীকে আলিঙ্গন করিয়া, এবং তাহার পর চক্ষু মটকাইয়া তিনি কী প্রমাণ করিতে চাহিলেন, তিনিই জানিবেন। কাজটি সংসদের গুরুত্বের সহিত এতই বেমানান যে তাহাতে অনাস্থা প্রস্তাবের সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটির মহিমা খণ্ডিত হইল। লোকসভার স্পিকার সুমিত্রা মহাজন রাহুলকে স্মরণ করাইয়া দিয়াছেন, সভার আসনে যিনি বসিয়া আছেন, তিনি নরেন্দ্র মোদী নহেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সেই কুর্সিটিকে সম্মান না করিলে গণতন্ত্রেরই অবমাননা হয়। কিন্তু, কুর্সিতে বিরাজমান ব্যক্তি কি স্বয়ং কথাটি স্মরণে রাখেন? দেখিয়া বুঝিবার উপায় নাই। শুক্রবারও তিনি স্বধর্মে স্থিত থাকিয়া কিছু অবান্তর কথা বলিলেন, সনিয়া-রাহুলকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করিলেন। এ হেন আচরণ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর যোগ্য নহে। নিজের কুর্সির সম্মান তিনি নিজে বজায় রাখিতে শিখুন। বাকিরাও শিখিয়া লইবেন।

Narendra Modi No confidence Rahul Gandhi Democracy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy