ফাইল চিত্র।
আবার একটা সন্ধিক্ষণে পাহাড়। এক দিকে দীর্ঘ অচলাবস্থায় পাহাড়ের সাধারণ জনজীবনে নাভিশ্বাস। অন্যদিকে গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনের প্রতি পাহাড়বাসীর আবেগকে কাজে লাগিয়ে রাজনীতিকদের একাংশের মাত্রাতিরিক্ত আস্ফালন। রাজ্য এবং কেন্দ্র বার বার বলছে, বন্ধ তুলতে হবে, দার্জিলিং-কালিম্পং-কার্শিয়াঙে স্বাভাবিক জনজীবন ফেরাতে হবে। পাহাড়ের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, এমনকী গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিনয় তামাঙ্গ-অনীত থাপারাও বন্ধ শিথিল করার ডাক দিচ্ছেন। কিন্তু মোর্চারই বিমল গুরুঙ্গ-রোশন গিরিরা বন্ধ বহাল রাখতে বদ্ধপরিকর। সামনের দিনগুলোয় ঠিক কী অপেক্ষা করছে পাহাড়ের জন্য, তা নিয়ে ধোঁয়াশা বেশ গাঢ় আবার। সেই ধোঁয়াশায় অস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছাও।
পাহাড়ের মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে ঘিরেই কিন্তু আজ আড়াআড়ি বিভাজন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চায়। গোর্খাল্যান্ড ইস্যুতে আন্দোলন নতুন নয়। কিন্তু এই দফায় আন্দোলনের হোতা যে দল, সেই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নিজেই চলতি সন্ধিক্ষণটায় পৌঁছে বিভ্রান্ত যেন। দীর্ঘ অচলাবস্থা কাটিয়ে পাহাড়ের জীবনে স্বাভাবিকতা ফেরানো যে জরুরি, বন্ধের ফাঁসে কাজ-কারবার-পেশা-জীবিকা-রুজি-রোজগার দিনের পর দিন শিকেয় তুলে রাখতে বাধ্য হওয়া সাধারণ নাগরিককে যে ফের একটু অক্সিজেন নিতে দেওয়া জরুরি, সে কথা উপলব্ধি করেছেন বিনয় তামাঙ্গরা। অতএব আলোচনায় অংশ নিয়েছেন তাঁরা, পরবর্তী দফার বৈঠক পর্যন্ত বন্ধ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন। বিমল গুরুঙ্গদের কাছে সে উপলব্ধির গুরুত্ব নেই, চরমপন্থায় অটল তিনি, পাহাড়ে নৈরাজ্য বহাল রাখতে বদ্ধপরিকর তিনি।
বিনয় তামাঙ্গ যখন বন্ধ তুলে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করছিলেন, তখন কার্শিয়াঙের জমায়েত সোৎসাহে সমর্থন জানিয়েছে। শুধু সাধারণ সমর্থকরা নন, মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির বেশ বড় একটা অংশ বন্ধ শিথিল করার সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিয়েছে। আবার বিমল গুরুঙ্গ এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করতেই বিনয় তামাঙ্গদের বিরুদ্ধে মোর্চা সমর্থকদের একাংশ রাস্তায় নেমে পড়েছেন। বন্ধের বিরোধিতা করে দোকানপাট খুলতে গিয়ে অনেকেই বাধা পেয়েছেন। পাহাড়ে ফের অশান্তির পারদ চড়তে শুরু করেছে।
এই নতুন অশান্তি মোর্চারই দুই শিবিরের মধ্যে শুরু হওয়া অশান্তি, এ কথা ঠিক। কিন্তু এও মনে রাখতে হবে, অশান্তির দুই প্রান্তে যাঁরাই থাকুন, মাঝখানে আটকে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। অচলাবস্থার কারণ যা-ই হোক, নাভিশ্বাস সেই সাধারণ পাহাড়বাসীরই।
কেন্দ্র এবং রাজ্য, উভয় পক্ষকেই কিন্তু সক্রিয় হতে হবে। নৈরাজ্য চলতে দিয়ে নাগরিকের জীবনকে দিনের পর দিন অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে রাখতে প্রশাসন পারে না। আইনের শাসন জারি রাখা রাষ্ট্রের সাংবিধানিক কর্তব্য। সঙ্কটকালে প্রশাসন অন্তত যেন সেই কর্তব্য বিস্মৃত না হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy