Advertisement
E-Paper

স্বাধিকার

পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ও কলিকাতার আর্চবিশপ দ্বিমত হইবেন। প্রথম জনের নির্দেশে সরকারি ও সরকারপোষিত স্কুলগুলি বন্ধ হইয়া গিয়াছে।

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৮ ০০:০০

কতখানি গরম পড়িলে স্কুল বন্ধ করিয়া দেওয়া বিধেয়, সেটুকু বিবেচনা করিবার মতো কাণ্ডজ্ঞানও কি স্কুল কর্তৃপক্ষের নাই? পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ও কলিকাতার আর্চবিশপ দ্বিমত হইবেন। প্রথম জনের নির্দেশে সরকারি ও সরকারপোষিত স্কুলগুলি বন্ধ হইয়া গিয়াছে। বহু বেসরকারি স্কুলও ছুটি ঘোষণা করিয়াছে, কারণ বোর্ডের নির্দেশ আসিয়াছে, রাজ্য সরকারের ‘অনুরোধ’ মানিয়া চলিতে হইবে। আর্চবিশপ বলিয়াছেন, ছুটি দেওয়া প্রয়োজন কি না, সেই সিদ্ধান্তটি স্কুলগুলির হাতে ছাড়িলেই ভাল হইত। স্পষ্টতই, কয় দিন স্কুল বন্ধ থাকিবে কি না, তাহা এই বিতর্কে গৌণ প্রশ্ন। মূল কথা হইল, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যাঁহাদের হাতে, তাঁহারা কি স্বশাসনে আদৌ বিশ্বাস করেন? অন্তত এই একটি ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সহিত রাজ্যপালের কোনও মতানৈক্য নাই। নরেন্দ্র মোদী দেশ জুড়িয়া যোগ দিবস পালন করিলেন। রাজ্যপাল, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য হইবার সুবাদে, নির্দেশ দিলেন, সর্বত্র যোগ দিবস উদ্‌যাপন করিতে হইবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলির কি এটুকুও অধিকার নাই যে যোগ দিবস পালন করা হইবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত নিজেরাই করিতে পারে?

মিল যেমন আছে, দুই নির্দেশের মধ্যে অমিলটিও লক্ষণীয়। যোগ দিবসের অনুষ্ঠানটি বাৎসরিক নিয়মে পরিণত হইয়াছে। এবং, প্রতি বৎসরই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারি নির্দেশ বা অনুরোধ পৌঁছায়। প্রধানমন্ত্রী শারীরচর্চায় আগ্রহী হইতেই পারেন— নিজের এলাহি বাগানে পেশাদার ফটোগ্রাফারকে দিয়া ছবি তুলাইয়া তাহা সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়াইয়াও দিতে পারেন। রাজপথে যোগাসন করিতে চাহিলেও তাঁহাকে ঠেকায় কে? কিন্তু, তিনি আগ্রহী বলিয়াই গোটা দেশকে মাতিয়া উঠিতে হইবে, এমন দাবি করিলে মুশকিল। এত দিনে তিনি হয়তো জানিয়াছেন, যোগাভ্যাস বস্তুটিতে আগ্রহী প্রথম প্রধানমন্ত্রী তিনি নহেন। শীর্ষাসনরত জওহরলাল নেহরুর ছবি খুঁজিলেই দেখা যায়। ইন্দিরা গাঁধীও নিয়মিত যোগাসন করিতেন। কিন্তু, তাঁহারা কেহ নিজেদের ব্যক্তিগত অভ্যাসকে বিজ্ঞাপনেও পরিণত করেন নাই, তাহাকে গোটা দেশের ঘা়ড়ে চাপাইয়া দেওয়ার কথাও ভাবেন নাই। নরেন্দ্র মোদীর ঈশ্বরের নাম ক্যামেরা— নিজস্বী-মোড সেই ঈশ্বরের শ্রেষ্ঠ রূপ, তাঁহার ধর্মের নাম বিপণন। নিজস্ব ‘যোগাভ্যাস’কেও তিনি বিপণনের মোড়কে বেচিয়া দিয়াছেন, সেই যোগের বিজ্ঞানসম্মতি যতটুকুই হউক। কেশরীনাথ ত্রিপাঠীরা অনিচ্ছুক ক্রেতার ঘাড় ধরিয়া সেই পণ্য ক্রয় করাইতে উদ্‌গ্রীব।

নরেন্দ্র মোদী যাহাই বেচিয়াছেন, সব মোড়কের নীচেই হিন্দুত্ব আছে। হিন্দুত্ব তাঁহার জাতীয়তাবাদেও, গঙ্গার স্বচ্ছতাতেও, যোগাসনেও। অথচ যোগাসনের সহিত, হিন্দুত্ব কোন ছার, হিন্দুধর্মের কোনও ঐকান্তিক সম্পর্ক নাই। যোগ ভারতের অতীত। কিন্তু, সেই অতীত মানে হিন্দুত্বের অতীত নহে। যোগ যে সময়ের ফসল, তখনও হিন্দুত্ব নামক বিংশ শতাব্দীর নাগপুরি বস্তুটির জন্ম হয় নাই। নরেন্দ্র মোদী হয় কথাটি জানেন না, অথবা জানিয়াও ভুল বুঝাইতে ব্যগ্র। তবে, দেশ পাল্টাইয়াছে। ২০১৪ সালে যে কথাগুলি মানুষ বিনা প্রশ্নে বিশ্বাস করিত, ২০১৯-এর দোরগোড়ায় দাঁড়াইয়া এখন তাহাতে সন্দেহ করে। দেশ জানিতেছে এবং জানিবে যে, ভারত তাহার অতীত হিন্দুত্ববাদীদের সম্পত্তি নহে। তাহা সর্বধর্মের। সেই অতীত লইয়া গৌরবের কারণ যদি থাকে, তবে তাহা শুধু হিন্দুদের নহে। নাগপুরের তো নহেই।

Democracy Narendra Modi Yoga Mamata Banerjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy