Advertisement
E-Paper

রাজনৈতিক অধিকার দমনের চেষ্টায় গণতন্ত্রই অসুস্থ হয়

কংগ্রেস তো স্বাভাবিক ভাবেই তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে এই ঘটনার। অন্য বিরোধী দলগুলিও তীব্র নিন্দায় সরব হয়েছে। সবার আঙুল কিন্তু বিজেপির দিকে। দেশের শাসক বিজেপি, গুজরাতের শাসক বিজেপি। দায় তো বিজেপিকে নিতেই হবে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৫ অগস্ট ২০১৭ ০৫:৫৪
বনসকঁঠার পাথরের ঘায়ে ভাঙল রাহুল গাঁধীর গাড়ির কাচ। ছবি: সংগৃহীত।

বনসকঁঠার পাথরের ঘায়ে ভাঙল রাহুল গাঁধীর গাড়ির কাচ। ছবি: সংগৃহীত।

লজ্জাজনক দৃষ্টান্ত তৈরি হল। শুধু লজ্জাজনক নয়, এ দৃষ্টান্ত ভারতের রাজনীতিতে বিরলও। দেশের প্রধান বিরোধী দলের শীর্ষনেতা শাসক দলের দুর্গে পা রেখেই আক্রান্ত হবেন, এমন নজির ভারতে আগে তৈরি হয়েছে বলে খুব একটা শোনা যায় না। সুদীর্ঘ কাল বিজেপির শাসনে থাকা গুজরাতের বন্যাদুর্গত জেলা বনসকঁঠায় গিয়ে আক্রান্ত হলেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। লজ্জা কি শুধু প্রশাসনের? লজ্জা কি শুধু শাসক দলের? নাকি লজ্জা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর? ঘটনাস্থল গুজরাত যে।

কংগ্রেস তো স্বাভাবিক ভাবেই তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে এই ঘটনার। অন্য বিরোধী দলগুলিও তীব্র নিন্দায় সরব হয়েছে। সবার আঙুল কিন্তু বিজেপির দিকে। দেশের শাসক বিজেপি, গুজরাতের শাসক বিজেপি। দায় তো বিজেপিকে নিতেই হবে। সর্বোচ্চ স্তরের নিরাপত্তা পান রাহুল গাঁধী। সেই নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে হামলা হল। কোনও না কোনও প্রশাসনকে তো দায় নিতেই হবে। আর প্রশাসনের নিয়ন্ত্রক হিসেবে দায় বিজেপিকেও নিতে হবে— রাজনৈতিক হিংসাকে রুখতে না পারার অথবা প্রশ্রয় দেওয়ার দায়।

বনসকঁঠার ঘটনাটা অবশ্য শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা নয়। এই ঘটনা গভীর ভাবে প্রতীকী এবং অনেক বৃহত্তর তাৎপর্যের। হামলা শুধুমাত্র রাহুল গাঁধীর উপরে হয়নি, হামলা হয়েছে নাগরিকদের রাজনৈতিক স্বাধীনতার উপরে। যে কোনও গণতন্ত্রে বিরোধী দলের বা দলগুলির স্বাধীনতার মাত্রা বা পরিসর কিন্তু একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সূচক। এই সূচক বুঝিয়ে দেয় রাজনৈতিক মতাদর্শ বা রাজনৈতিক বিশ্বাস নির্বাচনের প্রশ্নে নাগরিকরা কতটা স্বাধীন। বনসকঁঠার ঘটনা দেখিয়ে দিল, নাগরিকের সে স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা শুরু হয়ে গিয়েছে, বিরোধীর রাজনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রটাকে ছলে-বলে-কৌশলে সঙ্কুচিত করে আনার ঘোরতর চেষ্টা শুরু হয়ে গিয়েছে। গণতন্ত্রের পক্ষে এ অত্যন্ত অশুভ লক্ষণ।

বিরোধীর রাজনৈতিক জমি কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা শাসক করেই থাকে। বিরোধীও শাসকের রাজনৈতিক জমিতে ভাগ বসাতে তৎপর থাকে। সে লড়াই গণতন্ত্রের ক্ষতি করে না, গণতন্ত্রকে শক্তিশালীই করে বরং। কিন্তু রাজনৈতিক জমির বদলে যখন রাজনৈতিক অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়, তখন গণতন্ত্র অসুস্থ হয়ে পড়ে।

বিজেপির দাবি, জনরোষের শিকার রাহুল গাঁধী। এই দাবি ভুল না ঠিক, সে তর্কে যাচ্ছি না। শুধু মনে করিয়ে দিচ্ছি, গণতন্ত্রে রোষ প্রকাশের মাধ্যম কখনও সিমেন্টের চাঙড় বা পাথর ছোড়া হতে পারে না। জম্মু-কাশ্মীরে যদি পাথর ছোড়া অবৈধ হয়, তা হলে গুজরাতেও সিমেন্টের চাঙর ছোড়া বৈধ হতে পারে না। এই অগণতান্ত্রিক ক্রিয়াকলাপকে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করবেন না দয়া করে। কারণ তাতে রাজনৈতিক দৈন্যটা আরও প্রকট হয়ে পড়বে।

Newsletter Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Rahul Gandhi রাহুল গাঁধী কংগ্রেস Congress Gujarat গুজরাত BJP বিজেপি Democracy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy