হ বুচন্দ্র তাঁহার মন্ত্রীকে যে কথাটি বলিয়াছিলেন, তাহা চিকিৎসকেরা স্মরণ করিতে পারেন। ‘জুতা আবিষ্কার’ পদ্য-কাহিনির সেই রাজার বার্তা ছিল, আগের কাজ আগে সারিতে হইবে। পায়ে ধূলা লাগিবার সমস্যা দূর না করিয়া পদধূলির চিন্তায় অশ্রুপাত করা বৃথা। চিকিৎসকদেরও সর্বাগ্রে ঔষধের জেনেরিক (উপাদান-অনুসারী) নাম লিখিবার নির্দেশ শর্তহীন ভাবে মানিতে হইবে। তাহাতে কী কী সমস্যা হইতে পারে, তাহা কল্পনা করিয়া প্রাথমিক কর্তব্যে বিলম্ব করা নিরর্থক। ইহাতে কর্তব্যবোধের প্রমাণ অপেক্ষা কর্তব্য এড়াইবার আগ্রহেরই অধিক ইঙ্গিত মেলে। অবশ্য সেই ইঙ্গিত ইতিমধ্যেই মিলিয়াছে। এ রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রীর আবেদন এবং স্বাস্থ্য দফতরের বিধি প্রণয়নের পরেও জেনেরিক ঔষধ না লিখিয়া ব্র্যান্ড-নাম উল্লেখ করিয়া ঔষধ লিখিবার প্রবণতা বিলক্ষণ রহিয়াছে। এখন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জনসমক্ষে ঘোষণা করিলেন যে চিকিৎসার খরচ কমাইতে জেনেরিক নাম লিখিবার নির্দেশ দেওয়া হইবে। তাহার পরেই মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া সেই মর্মে নির্দেশ জারি করিল। যে সু-অভ্যাসগুলি স্বনিয়ন্ত্রণের দ্বারা চিকিৎসার কাজে প্রচলিত হইবার কথা ছিল, সেগুলি রাজনৈতিক নেতারা ঘোষণা করিয়া, সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করিয়া কেন আবশ্যক করিবেন, তাহার উত্তর কি একান্তই অজানা?
ঔষধ উৎপাদক সংস্থাগুলি যে তাহাদের ঔষধ লিখিবার জন্য চিকিৎসকদের নানাবিধ ‘উৎসাহ’ দিয়া থাকে, এ অভিযোগ নূতন নহে। কখনও ব্যক্তি, কখনও চিকিৎসক সংগঠনগুলিকে এমত ‘উৎসাহ’ দেয় তাহারা। এ বিষয়েও মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার বিধিনিষেধ রহিয়াছে, কিন্তু নিত্যই তাহার অবমাননা হইতেছে। চিকিৎসকদের সংগঠনগুলির এমনই দাপট যে ‘প্রেসক্রিপশন অডিট’ করিবার সকল সরকারি চেষ্টা প্রতিহত হইতেছে। অপ্রয়োজনীয় ঔষধ, অকারণে দামি ঔষধ কত লেখা হয়, সে সম্পর্কে সরকার বা নাগরিক, কাহারও হাতে তথ্য নাই। এখন চিকিৎসকরা আশঙ্কা প্রকাশ করিয়াছেন, জেনেরিক নাম লিখিলে ঔষধের দোকানের কর্মীরাই স্থির করিবে, কোন নির্মাতার ঔষধ ক্রেতা কিনিবে। ফলে দামি ঔষধ কিনিবার সম্ভাবনা থাকিয়াই যায়। ঔষধের মান সম্পর্কেও নিশ্চিত হওয়া যাইবে না।
এই আশঙ্কাগুলি জেনেরিক নাম লিখিবার বিরুদ্ধ যুক্তি হিসাবে গণ্য হইতে পারে না। প্রথমত, জেনেরিক ঔষধ প্রস্তুত ও বিপণন কাহারা করিতেছে, তাহাদের উপর সরকার নজরদারি করিবে, তাহাই প্রত্যাশিত। দ্বিতীয়ত, জেনেরিক ঔষধের দামেও কম-বেশি আছে ঠিকই, কিন্তু সামগ্রিক ভাবে সেগুলির দাম ব্র্যান্ডযুক্ত ঔষধ হইতে কম। তৃতীয়ত, ঔষধের দোকানের কর্মীদের প্রভাবিত করা হইতেছে কিনা, সে বিষয়েও নজর রাখিতে হইবে। কেবল ঔষধের মান বা মূল্যের জন্য নহে, প্রেসক্রিপশন ছাড়াই তাঁহারা কত ঔষধ বিক্রি করিতেছেন, তাহারও হিসাব প্রয়োজন। কিন্তু প্রথম প্রয়োজন রোগীদের সুরক্ষা। জেনেরিক ঔষধ লেখা প্রচলিত হইলে ভিটামিন টনিক, রক্তবর্ধক টনিক, মেদ কমাইবার ও পেশি বাড়াইবার ‘ঔষধ’-এর উল্লেখ কম হইবে। অকারণ, অবৈজ্ঞানিক ‘কম্বিনেশন ড্রাগ’ লিখিবার প্রবণতা বন্ধ হইবে। ঔষধের খরচ কমিবে, অকারণ ঔষধে স্বাস্থ্যহানিও কমিবে। ইহা যথেষ্ট নহে, কিন্তু আরম্ভ এ ভাবেই করিতে হইবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy