Advertisement
E-Paper

মানব নামক সম্পদ

২০১৬ সালেই ‘এক সন্তান নীতি’ প্রত্যাহার করিয়া দুই সন্তানের অনুমোদন দিয়াছিল চিন। তাহার পরেও জন্মহারের পতন অব্যাহত। এখন চিনের পার্লামেন্টের সদস্যরা দাবি করিতেছেন, প্রজননের উপর নিয়ন্ত্রণমুক্তি, মাতৃত্বের সুবিধার বৃদ্ধি, সন্তানবতী মেয়েদের কর-এ ছাড়, বিনামূল্যে সরকারি শিক্ষা প্রভৃতি বাড়াইতে হইবে।

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৯ ০০:০০

ইতিহাস এক মোড় ঘুরিল। জনস্ফীতির জন্য চিরদারিদ্রে পতিত হইবে দেশ, এই ভয় হইতে ‘এক সন্তান’ নীতি গ্রহণ করিয়াছিল চিন। কত মহিলাকে গর্ভপাত, বন্ধ্যাকরণে বাধ্য করা হইয়াছে, কত মানুষের কারাদণ্ড-জরিমানা হইয়াছে, দেখিয়া শিহরিয়া উঠিয়াছে বিশ্ব। আজ সেই চিনে দেখা দিয়াছে নূতন আশঙ্কা। চিন কি বড়লোক হইবার পূর্বেই বুড়া হইবে? জনসংখ্যায় কর্মক্ষম মানুষ কমিবার জন্য দেশের উৎপাদন ক্ষমতা ক্রমশ কমিবে। জাপান-সহ বহু উন্নত দেশ ইতিমধ্যেই এই সমস্যার সম্মুখীন। সংসারে আয় করিবার লোকের সংখ্যা অধিক, এবং তাহার উপর নির্ভরশীল লোকের সংখ্যা কম থাকিলে সম্পদ বাড়িবে। উপার্জনের মানুষ কম, নির্ভরশীল শিশু-বৃদ্ধ অধিক হইলে সমৃদ্ধি কমিবে। দেশের ক্ষেত্রেও নিয়ম অনুরূপ। পনেরো হইতে উনষাট বৎসর বয়সিদের সংখ্যা কমিলে, তাঁহাদের উপার্জনের উপর নির্ভরশীল বৃদ্ধদের সংখ্যা বাড়িলে দেশের আর্থিক বৃদ্ধি হইবে কী রূপে? চিনের জনসংখ্যা এখনও বাড়িতেছে, ২০২৯ সালে একশো চল্লিশ কোটি ছুঁইবে বলিয়া প্রত্যাশিত। কিন্তু জন্মহার না বাড়িলে তাহার পরেই শুরু হইবে পতন। এই শতাব্দীর মাঝামাঝি চিনে তিন জনের এক জনই হইবেন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ। ২০১৬ সালেই ‘এক সন্তান নীতি’ প্রত্যাহার করিয়া দুই সন্তানের অনুমোদন দিয়াছিল চিন। তাহার পরেও জন্মহারের পতন অব্যাহত। এখন চিনের পার্লামেন্টের সদস্যরা দাবি করিতেছেন, প্রজননের উপর নিয়ন্ত্রণমুক্তি, মাতৃত্বের সুবিধার বৃদ্ধি, সন্তানবতী মেয়েদের কর-এ ছাড়, বিনামূল্যে সরকারি শিক্ষা প্রভৃতি বাড়াইতে হইবে।

চিনের এই সঙ্কট হইতে ভারতের কি কিছু শিক্ষণীয় নাই? আছে বইকি। কিন্তু তাহা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের শিক্ষা নহে। গণতন্ত্রে নাগরিকের উপর নির্যাতন করিলে ফল কী হয়, সেই শিক্ষা ভারতের মানুষ নেতাদের বহু পূর্বেই দিয়াছেন। আক্ষেপ, দারিদ্র, অশিক্ষা প্রভৃতির সমাধান খুঁজিতে গিয়া আজও অনেক ‘শিক্ষিত’ ব্যক্তি চিনের দৃষ্টান্ত দিয়া কঠোর জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতির পক্ষে সওয়াল করিয়া থাকেন। তাঁহারা হয়তো খেয়াল করেন নাই, ভারতে জন্মহার কমিতেছে। পশ্চিমবঙ্গ-সহ বারোটি রাজ্যে জন্মহার মহিলা-পিছু দুই সন্তানেরও কম। সেই রাজ্যগুলিতে জনসংখ্যা কমিবে, এমনই প্রত্যাশিত। নয়টি রাজ্যে জন্মহার দুই বা কিছু বেশি। অর্থাৎ জনসংখ্যা স্থিতিশীল হইতেছে। সকলের পশ্চাতে বিহার ও উত্তরপ্রদেশ, যেখানে গড়ে তিনটি বা তাহার অধিক সন্তানের জন্ম দিতেছেন মেয়েরা। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সহিত জন্মহারের সম্পর্কটি স্পষ্ট। মেয়েদের শিক্ষা যত বাড়িবে, সন্তানসংখ্যা ততই কমিবে, এই সত্য বিশ্বের সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত হইয়াছে।

চিনে যাহা সঙ্কট, ভারতে তাহাই সুযোগ। আগামী চার-পাঁচ দশক ভারতের জনসংখ্যায় কর্মক্ষম মানুষের অনুপাত থাকিবে অধিক, তুলনায় নির্ভরশীল বৃদ্ধদের সংখ্যা থাকিবে কম। ২০৩৬ সালে কর্মক্ষম মানুষ দাঁড়াইবে সর্বোচ্চ, জনসংখ্যার পঁয়ষট্টি শতাংশ। দেশকে সমৃদ্ধ করিবার ইহাই সময়। তরুণ প্রজন্মের শিক্ষা, দক্ষতা ও কর্মনিযুক্তি বাড়িলে ততই লাভ করিবে দেশ। কাজটি কঠিন। আজ কর্মহীনতা বিপুল, উচ্চশিক্ষা সামান্য। পুষ্টি-স্বাস্থ্য-শিক্ষায় বিনিয়োগ যথেষ্ট নহে। দেশের মানুষই যে দেশের সম্পদ, সে বোধ আজও জাগে নাই। অথচ মানবসম্পদে বিনিয়োগ না করিলে সমৃদ্ধির এক অভূতপূর্ব সুযোগ হারাইবে ভারত।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

India China Child Policy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy