Advertisement
E-Paper

শুভ সংকেত

এই নূতন নির্দেশটিকে বিশেষ স্বাগত। আশা থাকিল, এ বার দেশপ্রেমের নামে ব্যক্তি-অধিকারে হস্তক্ষেপ কিছুটা থামিবে।

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৭ ০০:০০

শব্দটি পরিবর্তিত হইয়া ‘বাধ্যতামূলক’ হইতে ‘করা যাইতে পারে’-তে পৌঁছাইল। গত ৩০ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী নির্দেশ ছিল, প্রত্যেকটি প্রেক্ষাগৃহে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের পূর্বে জাতীয় সংগীত বাজানো বাধ্যতামূলক। জাতীয় সংগীত চলাকালীন শোভিত হইবে জাতীয় পতাকার ছবি এবং উপস্থিত সকলকে উঠিয়া দাঁড়াইতে হইবে। স্বভাবতই, অবধারিত প্রশ্ন উঠিয়াছিল যে, দেশপ্রেম কি উপর হইতে চাপাইবার বিষয়? বিনোদন-অবকাশেও দেশপ্রেমের পরীক্ষা দিতে হইবে, নতুবা শাস্তি পাইতে হইবে? এই প্রশ্নটিই সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ যথার্থ ভাবে তুলিয়া ধরিয়াছে। স্মরণ করাইয়াছে, প্রথমত, সিনেমা একটি নিখাদ বিনোদন, সেই সময় প্রেক্ষাগৃহে জাতীয় সংগীত কতটা জরুরি, তাহা সংশয়সাপেক্ষ। দ্বিতীয়ত, নিজেকে আদর্শ দেশপ্রেমিক প্রমাণ করিবার জন্য জাতীয় সংগীত চলিলে উঠিয়া দাঁড়াইবার বাধ্যতা থাকিতে পারে না, সেই কাজ সম্পূর্ণত নাগরিকের ইচ্ছানির্ভর হইবে। তৃতীয়ত, জাতীয় সংগীত চলাকালীন কেহ বসিয়া থাকিলেই প্রমাণ হয় না যে, তিনি দেশকে কিছু কম ভালবাসেন।

এই নূতন নির্দেশটিকে বিশেষ স্বাগত। আশা থাকিল, এ বার দেশপ্রেমের নামে ব্যক্তি-অধিকারে হস্তক্ষেপ কিছুটা থামিবে। বিজেপি সরকারের আমলে ‘জাতীয় সংস্কৃতি’র নামে ব্যক্তি-অধিকারে হস্তক্ষেপ নিত্যনৈমিত্তিকতায় পরিণত হইয়াছে। প্রায়শই সিনেমা হলে জাতীয় সংগীত বাজিবার সময় না দাঁড়াইবার কারণে হেনস্তা হতে হইতেছে দর্শকদের, ‘পাকিস্তানি’ বলিয়া বিদ্রুপও শুনিতে হইতেছে। এহেন হেনস্তা করিবার মানসিকতার মূলে আছে এক বিকৃত রাজনীতি বোধ। দেশপ্রেমের যে সংজ্ঞা এই সরকার-অনুগামীরা খাড়া করিয়াছে, কেহ সেই সংজ্ঞা না মানিলে, জাতীয় পতাকা বা জাতীয় সংগীতের প্রতি অতিভক্তি না দেখাইলে, তাহা দেশদ্রোহ ভাবিবার মূর্খামিটি সেই বিকৃত রাজনীতিরই অংশ। দেশপ্রেমের একটিই সংজ্ঞা, সেই প্রেম প্রকাশের একটিই নির্দিষ্ট ব্যবহারবিধি— এই ভয়াবহ ফ্যাসিধর্মী ভাবনার প্রেক্ষিতে আদালতের সাম্প্রতিক বক্তব্যটি তাই অনুধাবনযোগ্য। বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের শানিত প্রতিযুক্তি: অতঃপর কি কোন পোশাক পরিয়া সিনেমা হলে যাইতে হইবে সে ক্ষেত্রেও নির্দেশ এবং নিষেধাজ্ঞা বসিবে? তাহাও জাতীয় সংগীতের মর্যাদার সহিত যুক্ত হইবে? এই নীতি-পুলিশিই তবে এ দেশের আরাধ্য?

আশ্চর্য নহে যে, আদালতের নিজের পূর্ব-নির্দেশ পরিবর্তনের আভাস পাইয়া সচেতন নাগরিকরা তাহার মধ্যে মোদী সরকারের পরাজয়ই দেখিতেছেন! গত কয়েক বৎসর যাবৎ শাসক বিজেপি-র হাত ধরিয়া দেশাত্মবোধ, জাতীয়তাবাদ, ভারতমাতা শব্দগুলি এমন অস্বস্তিকর উচ্চতায় পৌঁছাইয়াছে যে, নাগরিক সমাজের ধৈর্য ও সহনশীলতা ক্রমাগত পরীক্ষার মুখে পড়িতেছে। গত ৩০ নভেম্বরের নির্দেশের শব্দবন্ধ সেই উদ্বেগ আরও বাড়াইয়া দিয়াছিল। সেই কারণেই সর্বোচ্চ আদালতের সাম্প্রতিক মন্তব্যটি স্বস্তিদায়ক। নিরপেক্ষ, যুক্তিভিত্তিক, অধিকারভিত্তিক সমাজের প্রতি দেশের প্রাতিষ্ঠানিক দায়টিকে এই মন্তব্য পুনরায় স্পষ্ট করিল। গণতন্ত্রের পথ হইতে বাধা সরাইবার ভরসা দিল।

patriotism Cinema hall National Anthem
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy