শেষ পর্যন্ত ক্ষমতার অলিন্দ থেকে সরে দাঁড়ালেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল। তিন দশকের রাজনৈতিক-জীবনের শেষ ১৬ বছর চ্যান্সেলর থাকার পর ম্যার্কেলের এই বিদায়ের পরিপ্রেক্ষিতে অভিজাত বিজ্ঞান-পত্রিকা নেচার বলেছে, ম্যার্কেল-হীন রাজনীতি না কি হয়ে যাবে ‘গরিব’। কোনও রাষ্ট্রপ্রধানের বিদায়বেলায় বিজ্ঞান-পত্রিকা এ ভাবে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছে, এমন ঘটনা দুর্লভ। অবশ্য ম্যার্কেলের মতো রাষ্ট্রনেতাও আসেন না রোজ রোজ। মনে পড়ে ২০১৫ সালের কথা, যখন সিরিয়া থেকে বিপন্ন উদ্বাস্তুর ঢল নেমেছে দুনিয়ায়, আর প্রকৃত অর্থেই ‘ভূত’ দেখেছে ইউরোপ। ‘ইউরোপ কী ভাবে হাজার হাজার শরণার্থীকে জায়গা দেবে’ এ কথা ভেবে খ্রিস্টান ইউরোপ আর শ্বেতাঙ্গ সমাজ থেকে বিচ্যুত হওয়ার প্রবল ভয়ে অস্থির নেতৃবর্গ। সকলে যখন নিজের নিজের সীমান্ত আটকাতে ব্যগ্র, সেই সময়ে উদ্বাস্তুদের জন্য জার্মানির সীমান্ত খুলে দিলেন ইউরোপের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির অধীশ্বরী আঙ্গেলা ম্যার্কেল। নিঃসন্দেহে তাঁর জীবনের সব চাইতে বড় সিদ্ধান্ত এটাই। ম্যার্কেলের উচ্চারণে ‘উই ক্যান ডু ইট’ এখন পরিণত হয়েছে প্রবাদে।
ওই বছরেই তিনি— তিন দশকের মধ্যে প্রথম বার কোনও মহিলা— টাইম ম্যাগাজ়িনের ‘পার্সন অব দ্য ইয়ার’ হওয়ার পিছনে তাঁর দুনিয়া-কাঁপানো উদ্বাস্তু-নীতির অবশ্যই একটা বড়সড় ভূমিকা ছিল। তবে সেটাই হয়তো শেষের শুরু। এর ফলে আজকের জার্মানিতে নিরাপত্তাহীনতার তীব্র আশঙ্কার চোরাস্রোত বইছে, এমন বলেন অনেকেই। মনে করছেন, কয়েক দশকের মধ্যেই হয়তো বদলে যেতে পারে জার্মানির জনবিন্যাস, তার খ্রিস্টান চরিত্র, তার শ্বেতাঙ্গ রূপরেখা— জার্মানদের কথ্য ভাষা, উচ্চারণ, খাদ্যাভ্যাস, সামাজিক রীতিনীতি, উৎসব, সংস্কৃতি, এমনকি জাতিগত দৃঢ়তাও। ইউরোপের অবাধ সীমান্ত পেরিয়ে এই পরিবর্তিত রূপ-বৈচিত্র ডানা ছড়াতে পারে অন্য দেশের ভূখণ্ডেও?
উদ্বাস্তুদের নিয়ে এই প্রবল টানাপড়েন জার্মান জনতার সঙ্গে ‘ফ্রাও’ ম্যার্কেলের সম্পর্কও বদলে দিয়েছে। ২০১৩ সালে তৈরি হয় ‘অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড’ বা ‘এএফডি’ নামে অতি-দক্ষিণপন্থী, সোশ্যাল মিডিয়া-নির্ভর, তীব্র অভিবাসী-বিরোধী দলটি। ২০১৭-র নির্বাচনে বুন্ডেস্টাগে ৯৪টি আসন পায় ‘এএফডি’। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে অতি-দক্ষিণপন্থীদের এমন রমরমা দেখেনি জার্মানি। জার্মানির পুবে ‘এএফডি’-র জনসমর্থন যথেষ্ট, দ্য গার্ডিয়ান যাকে বলেছে ‘পূর্বের প্রতিশোধ’। যেন দেশের অভ্যন্তরে ঘুমিয়ে থাকা নিয়ো-নাৎসি দৈত্যকে জাগিয়ে তুলেছেন ম্যার্কেল।