Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
CPIM

Shisir Bajoria: সাধারণতন্ত্র দিবস পালনের কথা বলায় চোখ কপালে তুলেছিলেন সিপিএম নেতা

প্রশ্ন একটাই, হঠাৎ বামেদের হৃদয় কেন দফতর পাল্টাল? এতদিন যা হয়নি, ৭৫ বছর পর তা হঠাৎ কোন জাদুবলে সম্ভব হল?

এতদিন যা হয়নি, ৭৫ বছর পর তা হঠাৎ কোন জাদুবলে সম্ভব হল?

এতদিন যা হয়নি, ৭৫ বছর পর তা হঠাৎ কোন জাদুবলে সম্ভব হল? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

শিশির বাজোরিয়া
শিশির বাজোরিয়া
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০২১ ০৮:৫৪
Share: Save:

২০০৩ সাল। সিপিএমে তখন আমি একেবারে নতুন। এক রাজ্য কমিটির সদস্যকে (বর্তমানে প্রয়াত) বলেছিলাম সাধারণতন্ত্র দিবস পালন করার কথা। শুনেই চোখ কপালে তুলে প্রস্তাব খারিজ করেছিলেন সেই নেতা। বলেছিলেন, এমন ধারা কথা যেন আমি আর না বলি!

কারণ? বলা হয়েছিল, দল দেশপ্রেমের উদাহরণ হিসাবে এই দিনটিকে মানতে চায় না। তখন নিয়মিত আলিমুদ্দিনে যেতাম। দেখতাম পার্টির বিখ্যাত সেই ‘হল ঘর’-এ বিভিন্ন বামপন্থী নেতার ছবি রয়েছে, যাঁরা সকলেই বিদেশের মানুষ। মাঝের বারান্দায় স্থানীয় শহিদ নেতৃত্বের ছবি নজরে পড়ত। একদিন প্রশ্ন করেছিলাম, কেন কমরেড ভগৎ সিংহের ছবি নেই ঘরে? উত্তর মেলেনি। পরে একজন বলেছিলেন, পঞ্জাবের পার্টি অফিসে ভগৎ সিংহের ছবি আছে। মাত্র ২৩ বছর বয়সে ফাঁসির দড়ি গলায় পরেছিলেন ভগৎ। ফাঁসির আগে ‘কমরেড’ সম্বোধনে একটি চিঠি লিখেছিলেন তিনি। চিঠির শেষেও লেখা ছিল, ‘আপনার কমরেড’। এই মানুষটি বামপন্থী দলের কার্যালয়ে স্থান পাননি। কারণ, এই বামপন্থীরা মনে করেন, ভারতের স্বাধীনতা দিবসের সঙ্গে আদর্শগত এক দূরত্ব রয়েছে দলের।

রবিবার ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালন করছে সিপিএম।

রবিবার ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালন করছে সিপিএম। নিজস্ব চিত্র

একেবারে উল্টো ছবি দেখি কয়েক বছর পর। ২০১৬ সালে বিজেপি কার্যালয়ে। অশোক রোডের ভবনে ঢুকে রিসেপশনে টাঙানো ছবিগুলির দিকে অবাক হয়ে চেয়েছিলাম। দীর্ঘ সময় ধরে আমাকে ছবিগুলির দিকে ওই ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিসেপশনে বসে থাকা কর্মী জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কিছু খুঁজছি কি না। আমি আঙুল দেখিয়েছিলাম ভগৎ সিংহের ছবির দিকে। প্রশ্ন করেছিলাম, ‘‘এখানে একজন বামপন্থী মানুষের ছবি কী করে এল?’’ ওই কর্মী বলেছিলেন, তিনি ঠিক জানেন না। তিনি শুধু এটুকু জানেন যে, ভগৎ সিংহ একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী।

রবিবার ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালন করছে সিপিএম। গত এক পক্ষকাল ধরে বামেদের এই ঘোষণা নিয়ে সংবাদমাধ্যমে দেদার আলোচনা হচ্ছে। সেই আলোচনাই প্রমাণ করে, এতদিন, মানে গত ৭৫ বছর ধরে স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে কোনও আগ্রহই ছিল না সিপিএমের। কিন্তু এখন তো সেই অপ্রিয় সত্যটিকে ঢাকতে হবে! তাই বামেরা নেমে পড়েছে খাতা-কলম হাতে। স্বাধীনতা আন্দোলনে তাদের ভূমিকা সাধারণ মানুষকে মনে করিয়ে দেওয়ার প্রবল চেষ্টা শুরু হয়েছে। তেমনই এক আলোচনায় গল্পের গরু গাছে চড়িয়ে দাবি করা হয়েছে, সিপিআই প্রথম স্বাধীনতার দাবি তোলে।

কিন্তু সত্যিটা কী? একটা দল, যারা শুরু থেকে নিজেদের পরিচয় দিয়েছে বামপন্থী শক্তির ভারতীয় শাখা হিসাবে। কখনও তারা বলেনি ‘ইন্ডিয়ান কমিউনিস্ট পার্টি’। ভারতের উল্লেখ এসেছে শেষে। সেই দলের কথায় চিন বা রাশিয়া (সোভিয়েত ভাঙার পর)-র প্রসঙ্গ বারবার ফিরে এসেছে, ভারত আসেনি। নাম থেকেই স্পষ্ট তার কারণ। সত্যি বলতে, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে বামপন্থী দলগুলির কোনও ভূমিকাই ছিল না। তার পরেও সিপিএমের মতো শক্তি ‘ব্রিটিশ শাসক ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সব কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করেছে’— এই যুক্তিতে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে চেয়েছে। লাভ হয়েছে কি? স্বাধীনতা সংগ্রাম কতটা দূরে ছিল বামেরা, তার উদাহরণ পাওয়া যায় ইতিহাস ঘাঁটলেই। কানপুরে ১৯২৫ সালে পার্টির কনফারেন্সে অংশ নিয়েছিলেন ৫০০ জন। সেখানে স্বাধীনতা নিয়ে আলোচনা হয়নি। কথা হয়েছিল বাম মতাদর্শ নিয়ে। তারপর ১৯৩৬ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত একাধিক গণসংগঠন তৈরি করেছে বামেরা। কিসান সভা, ছাত্র ফেডারেশন, প্রগতিশীল লেখক-শিল্পী সংঘ, গণনাট্য সংঘ— কেউ ভারতের স্বাধীনতার দাবিকে তুলে ধরার কাজ করেনি। শুধু ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের থেকে মুখ ঘরিয়ে চলাই নয়, কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে বামেরা বলেছে, ‘‘ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়।’’ ভারতের মাটির সঙ্গে বাম বৈদেশিক বাম আদর্শের সংযোগই ঘটাতে পারেনি এ দেশের কমিউনিস্ট পার্টি। এ কথা সত্যি যে, বিভিন্ন দেশে বামপন্থী মতাদর্শ এসেছিল একটি বিদেশি রাজনৈতিক আদর্শ হিসাবেই। কিন্তু সেই দেশগুলির বামপন্থীরাই নিজেদের মতো করে আদর্শকে গড়েপিটে নিয়েছিলেন। এর সবচেয়ে ভাল উদাহরণ চিনের কমিউনিস্ট পার্টি। তাঁরা মার্কস ও লেনিনের চিন্তাধারার সঙ্গে চিনা ভাবনার এক মিশ্রণ তৈরি করেছিলেন।

এখন প্রশ্ন একটাই— বামেদের হৃদয় হঠাৎ কেন ‘দফতর পাল্টাল’? এতদিন যা হয়নি, ৭৫ বছর পর তা হঠাৎ কোন জাদুবলে সম্ভব হল? ভারত এখন দেশপ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণে দেখেই কি ভাবনায় বদল? দলের নেতাদের কি মনে হয়েছে যে দেশপ্রেমের অভাবেই তাঁরা শূন্যের এত কাছে পৌঁছে গিয়েছেন? উত্তর দিতে পারবেন বামেরাই।

(লেখক বিজেপি নেতা। মতামত একান্ত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CPIM shishir bajoria digital essay
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE