ভরা হেমন্তে আচমকা দানা বেঁধেছিল ঘূর্ণিঝড়। তা বঙ্গোপসাগরে নিস্তেজ হলেও হেমন্তের দফারফা হয়। হিমেল উত্তুরে হাওয়ার বদলে মিলছিল দখিনা বাতাস। তা অবশ্য নতুন নয়। প্রকৃতির খামখেয়ালিপনা ক্রমশই বাড়ছে, বদলাচ্ছে জলবায়ু। আমজনতা তা টের পেলেও অতিমারিতে তাবড় রাষ্ট্রপ্রধানরা সে সব ভাবার সময় পাননি। তবে, এ সব সামলে বছরের শেষার্ধে গ্লাসগোয় মিলিত হন তাঁরা। গ্লাসগো চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু ‘কপ২৬’ দিশা দেখাতে পারল কি?
গত দু’দশকে আন্তর্জাতিক স্তরে কূটনীতির যে দিকটি নিয়ে বার বার আলোচনা হয়েছে, তার নাম ক্লাইমেট ডিপ্লোম্যাসি। কপ২৬ নামক বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনের মঞ্চ এই কূটনীতির আখড়া। আন্তর্জাতিক চুক্তি স্বাক্ষরের আগে বিভিন্ন রাষ্ট্রগোষ্ঠীর মধ্যে দর কষাকষি চলে বটে, কিন্তু এমন সম্মেলনের শেষে সহযোগিতার ভিত্তিতে মতৈক্য আশা করাই হয়। গ্লাসগো সম্মেলনে চুক্তি স্বাক্ষর হলেও একমত হওয়া তো দূর, ধনী ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগোষ্ঠীর মধ্যে কূটনৈতিক দ্বন্দ্বই প্রধান হয়ে উঠেছে। তাতে ইউরোপ-আমেরিকার কূটনীতিবিদেরা ভারতকে দুষছেন, এশীয়রা আঙুল তুলছেন ধনী দেশগুলির মনোভাবের দিকে।
বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি রুখতে আন্তর্জাতিক সন্ধি হয়েছিল। কিন্তু ইন্টার-গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)-এর রিপোর্টে জানানো হয়েছে, প্রাক্-শিল্প বিপ্লব যুগের তুলনায় গড় তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গিয়েছে। তা ঠেকাতে প্রয়োজন কার্বন নিঃসরণে রাশ টানা, এবং ক্রমে তা শূন্যে পৌঁছনো। কোন দেশ কত দ্রুত তা করবে, তা নিয়েই কূটনৈতিক টানাটানি চলেছে। ভারত বলেছে তার শূন্যে পৌঁছতে ২০৭০ পর্যন্ত সময় দরকার। গ্লাসগোয় প্রধানমন্ত্রী মোদী রাশ টানার পাঁচটি পদক্ষেপের কথা বলেছেন— সময়সীমা ছাড়াও, ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০০ গিগাওয়াট পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদন, মোট বিদ্যুতের ৫০ শতাংশ পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি থেকে তৈরি, ১০ লক্ষ টন কার্বন নির্গমন কমানো, এবং দেশের অর্থনীতিতে ৪৫ শতাংশ কার্বন নির্ভরতা কমানো। শেষ লগ্নে ভারত আবার কূটনৈতিক চাল দিয়েছে। সেখানে কয়লায় ভর্তুকি বন্ধের যে প্রস্তাব দেওয়া হয়, তার বিরোধিতা করে ভারত তা ধাপে ধাপে কমানোর কথা বলে। পাশে দাঁড়ায় চিন, ইরান, কিউবা। ফলত, দুই শিবিরে কূটনৈতিক লড়াই।