Advertisement
E-Paper

এডসন অ্যারান্তেস ডো নাসিমেন্তো (১৯৪০-২০২২)

জন্ম ১৯৪০-এর ২৩ অক্টোবর। বাবা ডোনডিনহোও ফুটবল খেলতেন, কিন্তু চোট থামিয়ে দেয় তাঁর স্বপ্ন। ছোটবেলা থেকেই ফুটবল নিয়ে পড়ে থাকতেন পেলে।

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ ০৫:২০
এডসন অ্যারান্তেস ডো নাসিমেন্তো। সারা পৃথিবী চেনে ‘পেলে’ নামে।

এডসন অ্যারান্তেস ডো নাসিমেন্তো। সারা পৃথিবী চেনে ‘পেলে’ নামে। ফাইল চিত্র।

আর পাঁচ জনের মুখ থেকে এমন মন্তব্য শোনা গেলে উদ্ধত, অহঙ্কারী মনে হবে: “আমি ফুটবলের জন্য জন্মেছিলাম। যেমন বেঠোফেন জন্মেছিলেন সঙ্গীতের জন্য।” কিন্তু কথাগুলি যদি ফুটবল সম্রাটের মুখ থেকে বেরোয়? একমত হতে সময় লাগবে না, এমন কথা তাঁর মুখেই মানায়। এডসন অ্যারান্তেস ডো নাসিমেন্তো। সারা পৃথিবী চেনে ‘পেলে’ নামে। চারটি বিশ্বকাপে খেলে তিন বারের বিজয়ী— ১৯৫৮, ১৯৬২, ১৯৭০। সব মিলিয়ে ১২৮৩ গোল, বিশ্বকাপের মঞ্চে ১২টি।

কিন্তু বেঠোফেন মানে যেমন শুধুই কিছু সুরসৃষ্টি নয়, তেমনই পেলে মানে শুধুই গোল নয়, পরিসংখ্যান নয়। এক সমীক্ষায় জানা গিয়েছিল, দু’জন ক্রীড়াবিদকে বিশ্বের সব দেশের মানুষ চেনেন: মহম্মদ আলি আর পেলে। পেলে এমন এক ব্রাজিলীয় ফুটবল ঘরানার মুখ, যার খেলোয়াড়রা বল পায়ে সত্যিই সুর সৃষ্টি করতেন। সাম্বার সুর। অভাবনীয় স্কিল, দুরন্ত গতি, অসাধারণ বল নিয়ন্ত্রণ। হলুদ-সবুজ জার্সিকে সারা বিশ্বে জনপ্রিয় করেছিল সত্তর দশকের ব্রাজিল দল। পেলে ছিলেন সেই অর্কেস্ট্রার প্রধান শিল্পী। অত্যাধুনিক ট্রেনিং আবিষ্কারের অনেক আগে নিজেকে পরিণত করেছিলেন শক্তিশালী অ্যাথলিটে। পায়ে গোলার মতো শট, বাইসাইকেল কিক করতেন হেলায়। পেলের ব্রাজিল ফুটবল খেলত না, বল পায়ে অ্যাডভেঞ্চারে নামত।

জন্ম ১৯৪০-এর ২৩ অক্টোবর। বাবা ডোনডিনহোও ফুটবল খেলতেন, কিন্তু চোট থামিয়ে দেয় তাঁর স্বপ্ন। ছোটবেলা থেকেই ফুটবল নিয়ে পড়ে থাকতেন পেলে। সায় ছিল না মায়ের। স্বামীকে তিনি জীবনসংগ্রাম করতে দেখেছেন, ফুটবল খেলে পেট চালানোর খরচও জুটত না। দারিদ্রের সঙ্গে লড়াইয়ে পেলেকে করতে হয়েছে জুতো কালি করার কাজও।

ভাগ্যক্রমে পেলের ফুটবলপ্রতিভা চোখে পড়ে যায় ডি’ব্রিটোর। কোচিং করানো শুরু করেন পেলেকে। তাঁর সুপারিশেই চোদ্দো বছর বয়সে সাও পাওলোর বাউরু অ্যাথলেটিক ক্লাবে যোগদান পেলের। প্রতিভায় সকলের মন জিততে সময় লাগেনি। দু’বছরের মধ্যে যোগ দেন স্যান্টোস-এ, যে ক্লাবকে সারা বিশ্বে চিনিয়েছেন তিনি। আঠারো বছর ছিলেন এই ক্লাবে। পেলেকে আদর করে ডাকা হত ফুটবলের ‘কালো মুক্তো’, আমন্ত্রণ আসত ইউরোপের নানা শহর থেকে।

বিশ্বমঞ্চে পেলের উত্থান ১৯৫৮-র সুইডেন বিশ্বকাপ থেকে। চোটে কাবু ছিলেন, শুরুর দিকে খেলতে পারেননি। গ্রুপের শেষ ম্যাচে সোভিয়েট ইউনিয়নের বিরুদ্ধে প্রথম নামানো হয় তাঁকে। দু’টি গোল করেন ভাভা, দ্বিতীয় গোলটি সাজিয়ে দেন পেলে। ওয়েলস-এর বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনাল, ব্রাজিল জেতে ১-০। গোলদাতা পেলে, বিশ্বকাপে তাঁর প্রথম গোল। সেমিফাইনালে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে হ্যাটট্রিক, ফাইনালে সুইডেনের বিরুদ্ধে জোড়া গোল। সুইডেনকে ৫-২ হারিয়ে কাপ জেতে ব্রাজিল। ফুটবলের জাদুঘরে স্থান পেয়েছে ফাইনালে বাইসাইকেল কিকে পেলের অবিশ্বাস্য গোল।

১৯৬২-তে পরের বিশ্বকাপ, মাত্র একুশ বছর বয়সেই পেলে তখন বিশ্বের সেরা ফুটবলার। মেক্সিকোর বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ ২-০ জেতে ব্রাজিল। চার জনকে কাটিয়ে, গোলকিপারকে পরাস্ত করে গোল করে পেলে বুঝিয়ে দেন, কেন তিনি সেরা। কিন্তু কে ভেবেছিল, বিশ্বকাপের আকাশে ঘন মেঘ অপেক্ষা করছে! ঊরুর পেশিতে টান লেগে ছিটকে গেলেন কাপ থেকে। তাঁকে ছাড়াই অবশ্য টানা দ্বিতীয় বার বিশ্বকাপ জেতে ব্রাজিল। ১৯৬৬ বিশ্বকাপে প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারেরা তাঁর পা তাক করতে শুরু করেন, পর্তুগালের ডিফেন্ডাররা মেরে বার করে দেন। ইংরেজ রেফারি নীরব দর্শক। পর্তুগালের কাছে ১-৩ হেরে বিদায় ব্রাজিলের। হতাশ পেলে বলে দেন, আর কখনও বিশ্বকাপে খেলতে চান না।

কিন্তু তিনি ফিরলেন, পেলে হয়েই। ১৯৭০, গ্রুপ পর্বে প্রতিপক্ষ ইংল্যান্ড। পেলের হেড জালে জড়াবে নিশ্চিত, যেন উড়ে এসে বল বার করে দিলেন গর্ডন ব্যাঙ্কস। এই সেভকে ‘শতাব্দীর সেরা সেভ’ বলেছেন অনেকে। ম্যাচ শেষে পেলে ও ববি মুরের জার্সি বদলের ছবি বিখ্যাত আজও। পেরুকে ৪-২, উরুগুয়েকে ৩-১ হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছয় ব্রাজিল, প্রতিপক্ষ ইটালি। দুরন্ত হেডে গোল করেন পেলে। অপ্রতিরোধ্য সাম্বা ফুটবলে ইটালি চূর্ণ, ৪-১। তিন বার কাপ জিতে জুলে রিমে পাকাপাকি ব্রাজিলের।

এর পর আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসর নেন পেলে। খেলতে থাকেন স্যান্টোস-এর হয়ে। চৌত্রিশ বছর বয়সে প্রিয় ক্লাবের হয়ে অবসর নিলে, স্যান্টোস তাঁর দশ নম্বর জার্সি সরিয়ে রাখে চিরতরে। সম্রাটের জার্সি আর কে গায়ে তুলবে! ’৭৫-এ রেকর্ড অর্থে আমেরিকার কসমস ক্লাবে সই করেন, এই ক্লাবের হয়েই কলকাতায় খেলেছেন মোহনবাগানের বিরুদ্ধে। ১৯৭৭-এ পাকাপাকি অবসর। পরে ক্রীড়া দূত হয়েছেন, ব্রাজিলের ক্রীড়ামন্ত্রীও।

পেলের আবেদন চিরন্তন। তাঁকে নিয়ে উন্মাদনায় ভাটা পড়েনি কখনও। ব্রাজিল বলতেই আজও সবার মুখে ফেরে একটাই শব্দ— পেলে!

pele football
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy