Advertisement
E-Paper

‘ঠিক যেন এক গল্প হত তবে, শুনত যারা, অবাক হত সবে’

দেখতে দেখতে অবধারিত ভাবে মনে পড়ছিল ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষের কথা। অপারেশন সিঁদুর, তৎপরবর্তী যুদ্ধ-জিগির, দাবি এবং পাল্টা দাবির ঢেউ। যার মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে সত্য।

US Web Series ‘American Manhunt: Osama Bin Laden’ in the context of Operation Sindoor by Indian Army

ওসামা বিন লাদেন। ছবি: গেটি ইমেজেস।

অনিন্দ্য জানা

অনিন্দ্য জানা

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২৫ ০৮:৫৬
Share
Save

আমার সঙ্গী বাঁ দিকে গেল। আমি ডান দিকে ঘুরেই দেখলাম, দু’ফুট দূরে দাঁড়িয়ে ওসামা বিন লাদেন!

এমন এক একটা সময়ে সেকেন্ডের কাঁটা শ্লথ হয়ে যায়। দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, লাদেনকে যেমন দেখতে হবে ভেবেছিলাম, এই লোকটা তার চেয়ে খানিক লম্বা। খানিকটা রোগাও। কাঁচাপাকা দাড়ি। এ-ই লাদেন তো? তার পরে নাকটা দেখে নির্ভুল চিনলাম। এ-ই লাদেন! ভাবলাম, এই লোকটা কখনও ধরা দেয় না। কিন্তু এ শুধু আমার জন্য বিপজ্জনক নয়, আমার গোটা টিমের কাছে বিপজ্জনক। ফলে ওকে মরতেই হবে। হি হ্যাজ় টু ডাই!

উপরের বাক্যগুলো বলেছেন রবার্ট ও’নিল। আমেরিকান নেভি সিল টিমের নেতা। ও’নিলই ২০১১ সালের ২ মে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদের বাড়িতে ওসামা বিন লাদেনকে গুলি করে মেরেছিলেন। সেই মুহূর্তের বর্ণনা তিনি দিয়েছেন নেটফ্লিক্সের সাম্প্রতিকতম সিরিজ় ‘আমেরিকান ম্যানহান্ট: ওসামা বিন লাদেন’-এ। ও’নিলের ধারাবিবরণীর সঙ্গে কাজ করছে তাঁর মারণাস্ত্রে ভিউ ফাইন্ডারে আঁটা ক্যামেরা। তাঁর নাইট ভিশন গগল্‌সের সবজেটে আলোয় পাজামা-পরিহিত দুটো পা দেখা যাচ্ছে। সামান্য নড়াচড়া। তার পরে ফট ফট করে গুলির আওয়াজ। ধপ করে মনুষ্যদেহ পতনের শব্দ। তার পরে সব অন্ধকার।

দেখতে দেখতে গায়ে কাঁটা দিচ্ছিল!

২০০১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বিমানহানার পর থেকে লাদেনকে হন্যে হয়ে খুঁজেছে আমেরিকা। একটার পর একটা বছর চলে গিয়েছে। আল কায়দার প্রধানকে ছুঁতে পারেনি বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাষ্ট্র। তাঁর সমস্ত গুপ্ত ডেরা থেকে লাদেন আমেরিকাকে ক্রমান্বয়ে হুমকি দিয়ে গিয়েছেন। আমেরিকার গোয়েন্দারা হতাশ হয়েছেন। ক্রুদ্ধ হয়েছেন। সরকার বদলে গিয়েছে। প্রেসিডেন্ট বদলে গিয়েছেন। কিন্তু গোয়েন্দারা লাদেনের পিছু ছাড়েননি। টানা ১০ বছর চেষ্টার পরে সিআইএ লাদেনের একটা আবছা খোঁজ পায় পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে। আবছা, কারণ তাদের ভরসা ছিল আকাশ থেকে উপগ্রহ মারফত তোলা একটা ছবি। যাতে কারও মুখ দেখা যাচ্ছে না। ছবিতে শুধু ৯০ ডিগ্রি কোণে ধরা পড়ছে, আলখাল্লা আর কাপড়ের শিরস্ত্রাণ মাথায় একটা লম্বা লোক ওই বাড়ির ভিতরের বাগানে রোজ গোল গোল পায়চারি করে। লোকটা সামান্য, খুব সামান্য খুঁড়িয়ে হাঁটে। ছবিতে শুধু তার অবয়বটা দেখা যাচ্ছে। ইংরেজি ‘আই’ অক্ষরকে উপর থেকে দেখলে যেমন দেখাবে তেমন। সূর্য লোকটার ডানদিকের আকাশে। তাই বাঁ’পাশের জমিতে লোকটার লম্বা একটা ছায়া পড়েছে।

ওই লোকটাই কি ওসামা বিন লাদেন? যার পরিচয় সম্পর্কে নিঃসন্দেহ না-হওয়ায় (এবং যাতে কেউ ঘুণাক্ষরেও টের না পায় তাই) তাকে ‘পেসার’ কোডনাম দেওয়া হয়েছে? তক্কে তক্কে থেকে লাদেনের ‘ক্যুরিয়র’-এর পিছনে ধাওয়া করতে করতে কি পাকিস্তানের প্রান্তরে এসে অবশেষে খোঁজ শেষ হল?

১৯৮৮ সালে ওসামার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন সাংবাদিক জন মিলার। তাঁকে ডেকে আনল সিআইএ। বিশদে তাঁর কাছ থেকে জানা হল লাদেনের ভাব-ভঙ্গি, কথা বলার ধরন, হাতের মুদ্রা। সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় যে ভাবে হেঁটে এসে বসেছিলেন লাদেন, খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখা হল সেই সমস্ত ফুটেজ। দেখা গেল, একই রকম সামান্য খুঁড়িয়ে হাঁটা। তার পরে অ্যাবোটাবাদের রহস্যময় বাড়ির চত্বরে হন্টনরত অবয়বের ছায়ার মাপ নিয়ে সেখান থেকে উচ্চতা হিসেব করা হল। দেখা গেল, উচ্চতা মিলে যাচ্ছে লাদেনের সঙ্গে!

US Web Series ‘American Manhunt: Osama Bin Laden’ in the context of Operation Sindoor by Indian Army

নেটফ্লিক্সের ডকুসিরিজ় ‘আমেরিকান ম্যানহান্ট: ওসামা বিন লাদেন’-এর পোস্টার।

সেই ধারণা এবং বিশ্বাসের উপর নির্ভর করেই ‘মিশন’ চূড়ান্ত হল। যা সিরিজ়ের তৃতীয় তথা চূড়ান্ত এপিসোডে বিধৃত হয়েছে। যার শেষে দেখা যাচ্ছে, হোয়াইট হাউসের পোডিয়ামে দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যখন আমেরিকা-সহ সারা দুনিয়াকে বলছেন, ‘‘উই গট হিম!’’ তখন ও’নিল তাকাচ্ছেন জালালাবাদের সেফ হাউসের মেঝেয় তাঁর পাশে পড়ে-থাকা বডি ব্যাগে লাদেনের নিষ্প্রাণ দেহের দিকে। যে দেহ সাদা কাপড়ে মুড়ে ফেলে দেওয়া হবে ভারত মহাসাগরে। যাতে লাদেনের কোনও প্রথাগত অন্ত্যেষ্টি না হয়। যাতে পৃথিবীর কোনও ভূখণ্ডে দুনিয়ার নৃশংসতম সন্ত্রাসবাদীর স্মরণে কোনও স্মৃতিসৌধ তৈরি হতে না পারে।

‘আমেরিকান ম্যানহান্ট: ওসামা বিন লাদেন’ কিন্তু ক্যাথরিন বিগেলোর ‘জ়িরো ডার্ক থার্টি’ নয়। ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত সেই ছবি আদ্যোপান্ত সিনেমা। সেখানে সিনেমাসুলভ নাটকীয়তা, মোচড় এবং সাসপেন্সের উপাদান বাইরে থেকে আমদানি করা হয়েছিল। কিন্তু নেটফ্লিক্সের ডকুসিরিজ়ে কল্পনার জায়গা নেই। এই তথ্যচিত্রের সিরিজ় পেঁয়াজের খোসা ছাড়ানোর মতো করে পরতে পরতে ‘মিথ’-এর স্তর খোলার উদাহরণ। যে ‘মিথ’ গড়ে তোলা হয়েছিল নাটকীয়তা এবং উগ্র দেশপ্রেম দিয়ে, এই ডকুসিরিজ় সেই পুরাণের সমস্ত মেদ ফালাফালা করে হাড়হিম করা সত্য খুঁড়ে বার করেছে। যে সত্য নিজেদের মুখে বলেছেন সেই সমস্ত চরিত্রেরা, যাঁরা তাঁদের দিনরাত এক করে ফেলেছিলেন লাদেনের খোঁজে। যাঁরা ৯/১১-র পরে নিজেদের টিমকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, হয় লাদেনের মুন্ডু কেটে শুকনো বরফের বাক্সে ভরে নিয়ে এসো নয় লাদেনের মাথা একটা শূলে গেঁথে প্রেসিডেন্টের কাছে নিয়ে এসো। কিন্তু বছরের পর বছর ধরে তা পারেননি।

কিন্তু এ শুধু দশ-দশটা বছর ধরে একটা লোককে নিরন্তর খোঁজা বা ধাওয়া করার কাহিনি নয়। এ হল একই সঙ্গে ৯/১১ পরবর্তী সময়ে আমেরিকার সামূহিক মানসিক পরিস্থিতি, সরকারের অন্দরে আমলাতান্ত্রিক টানাপড়েন এবং কৌশলগত ভ্রান্তির খতিয়ানও। যেখানে স্পষ্ট দেখানো হয়েছে, প্রতিরক্ষাসচিব ডোনাল্ড র‌্যামসফেল্ড আফগানিস্তানে সৈন্য পাঠাতে গড়িমসি করেছিলেন। যে কারণে আফগানিস্তানের তোরা বোরা পাহাড়ে লাদেনের আস্তানার সন্ধান পেয়েও তাকে কব্জা করতে পারেনি আমেরিকা। কারণ, র‌্যামসফেল্ড বায়ুসেনা পাঠাতে দেরি করে ফেলেছিলেন। যখন প্রথম আফগানিস্তানে আক্রমণ করার কথা হচ্ছে, তখনও র‌্যামসফেল্ড ‘কূটনীতি’র প্রশ্ন তুলেছিলেন। প্রেসিডেন্ট বুশ নাকি তাঁকে বলেছিলেন, ‘‘কূটনীতির নিকুচি করেছে!’’ তার পরেই লাদেনকে নিয়ে তাঁর সেই বিখ্যাত ঘোষণা, ‘‘ওয়ান্টেড। ডেড অর অ্যালাইভ।’’ সন্ধান চাই। মৃত বা জীবিত।

এই ডকুসিরিজ়ে দেখানো হয়েছে অ্যাবোটাবাদের মিশন নিয়ে যখন আলোচনা চলছে ‘সিচুয়েশন রুম’-এ, তখন সেই অভিযানের বিরোধিতা করছেন জো বাইডেন। আর সমর্থন করছেন হিলারি ক্লিন্টন।

এই ডকুসিরিজ় দেখিয়েছে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার তুঙ্গমুহূর্তে প্রেসিডেন্ট ওবামাকে মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, পরের বছর ভোট। অ্যাবোটাবাদ মিশন ব্যর্থ হলে নির্বাচনে তার প্রভাব পড়বে। যা তাঁর প্রত্যাবর্তনকে কঠিন করে দিতে পারে। চোয়াল শক্ত করে ওবামা জবাব দিচ্ছেন, ‘‘আই ডোন্ট কেয়ার ফর ইলেকশন!’’ এই সিরিজ় দেখিয়েছে, ভোট-টোটের তোয়াক্কা না-করে ওবামা কার্যত একার সিদ্ধান্তেই অ্যাবোটাবাদ মিশনকে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছিলেন।

তিন পর্বের এই সিরিজ়ে বেছে বেছে তাঁদের হাজির করানো হয়েছে, যাঁরা লাদেনকে ধাওয়া করার কাজে আগাগোড়া নিয়োজিত থেকেছেন। সিআইএ-র প্রাক্তন ডেপুটি ডেরেক্টর জন ম্যাকললিন (যিনি বলেছেন সেই অমোঘ বাক্য— গোয়েন্দা অফিসার হিসেবে আপনাকে জানতে হবে, আপনি কী জানেন এবং আপনি কী জানেন না। তার উপর ভিত্তি করে এগোতে হবে), প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশকে প্রতি দিন যিনি সিআইএ-র তরফে ‘ব্রিফ’ করতেন, সেই মাইকেল মরেল (৯/১১ ঘটে যাওয়ার পর প্রেসিডেন্টকে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দিয়ে গাড়িতে উঠে যিনি হাউ হাউ করে কাঁদতে শুরু করেছিলেন। বাড়ি পৌঁছেও সে কান্না থামেনি। কারণ, তাঁর মনে হয়েছিল, গোয়েন্দা হিসাবে তিনি ব্যর্থ! এত বড় একটা ঘটনার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল আর তাঁর বা তাঁদের কাছে ছিটেফোঁটাও আগাম খবর এল না!), সিআইএ-র কাউন্টার টেররিজ়ম দফতরের প্রাক্তন ডিরেক্টর কফার ব্ল্যাক (যিনি প্রেসিডেন্ট বুশকে বলবেন, ‘‘আমায় দায়িত্ব দিলে ছ’সপ্তাহের মধ্যে ওদের চোখের মণিতে মাছি ভনভন করার বন্দোবস্ত করে দেব) এবং অ্যাবোটাবাদের মিশনের সময়কার প্রতিরক্ষাসচিব তথা সিআইএ-র ডিরেক্টর লিয়ঁ পানেত্তা— সমস্ত চরিত্র তাঁদের নিজস্ব অবতারে হাজির হয়েছেন এই সিরিজ়ে।

এহ বাহ্য, এসেছেন আফগানিস্তানে লাদেন দমন অভিযানের (নাম ছিল অপারেশন জ’ব্রেকার। চোয়াল ভেঙে দেওয়ার অভিযান) প্রধান গ্যারি বার্নস্টেন (যিনি স্ত্রীর বারণ সত্ত্বেও পিছিয়ে আসেননি। বলেছিলেন, আমি আফগানিস্তান যাচ্ছি। যা হওয়ার হবে। তাঁর অধীনে মোট ১৩টি টিম ছিল সেই অভিযানে। এক একটি দলে সর্বোচ্চ আট জন করে সদস্য)। যাঁর অভিযানের খুঁটিনাটি শুনলে শিরদাঁড়া দিয়ে ভয় আর উৎকণ্ঠার ঠান্ডা স্রোত নামতে থাকে। আফগানিস্তানে পৌঁছে বার্নস্টেন তালিবানদের সঙ্গে বৈঠক করতে পাঠিয়েছিলেন কয়েক জন সহকর্মীকে। ‘ব্রিফিং’ ছিল— ‘যদি ওরা বলে লাদেন কোথায় আছে জানে, তা হলে ভাল। যদি অস্বীকার করে, তা হলে সব ক’টাকে হয় ওখানেই গুলি করে মারবে, নয় তুলে নিয়ে আসবে। যেটা ভাল বুঝবে।’ এত বছর পরে ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে ‘বার্নি’ বলছেন, ‘‘দে (তালিবান) মেড ওয়ান মিসটেক। দে আস্কড, ওসামা? হু? অ্যান্ড মাই টিম পুল্‌ড আউট ওয়েপন্‌স, গ্যাগ্‌ড দেম, থ্রিউ দেম ইন আ পিক আপ ট্রাক অ্যান্ড টেক্‌ন দেম অ্যাওয়ে!’’ তাঁর পাশাপাশিই আফগানিস্তানে যুদ্ধের বিবরণ দিয়েছেন অপারেশন চিফ হেনরি ক্রাম্পটন এবং ফিল্ড চিফ ফিল রেইলি। সেই বর্ণনা শুনলে সমীহ হয়। তাঁদের দায়বদ্ধতার কথা শুনলে সম্ভ্রম জাগে।

যেমন লাদেন খতম অভিযানের নেতা অ্যাডমিরাল উইলিয়াম ম্যাকর‌্যাভেন। যিনি হাসতে হাসতে বলেছেন, ‘‘এক বছর আগে আমার ক্যানসার ধরা পড়েছিল। মিশনের দায়িত্বটা পেয়ে প্রথমেই মনে হল, ক্যানসার তো বাঁচতে দেবে না। এই অভিযানে প্রাণটা গেলে সেটা অন্তত বীরের মৃত্যু হবে!’’ নেভি সিল অফিসার ও’নিল আগে বহু বিপজ্জনক অভিযানে গিয়েছেন। কিন্তু লাদেন নিধন অভিযানের আগে দুই সন্তানের কাছ থেকে বিদায় নিতে গিয়ে প্রথম বার তাদের নিজের হাতে চিঠি লিখেছিলেন। ‘‘কাগজের উপর টপটপ করে ঝরে পড়া চোখের জলে কলমের কালি ধেবড়ে যাচ্ছিল’’, বলেছেন ও’নিল।

কিম্বা লাদেনকে খোঁজার অভিযানে অংশ-নেওয়া চার মহিলা সিআইএ অফিসার। কাউন্টার টেররিজ়ম-অপারেশন্‌স ট্রেসি ওয়াল্ডার, তিন কাউন্টার টেররিজ়ম অ্যানালিস্ট সিন্ডি স্টোরার, জ়িনা বেনেট এবং টিনা (যিনি ছায়ায় রইলেন। মুখ দেখানো হল না সম্ভবত বিপদ এখনও ঘটতে পারে ভেবে)। এঁদের মধ্যে সিন্ডি পরে সিআইএ-র চাকরি ছেড়ে দেন। কারণ, তাঁর মনে হয়েছিল, লাদেনের খোঁজ পেতে গিয়ে গুয়ান্তানামো বে’তে মাত্রাছাড়া অত্যাচার করা হচ্ছে। মনে হয়েছিল, বোমা মেরে বোমা মারার প্রতিশোধ নেওয়া যায় না।

মোট ১৮৩ মিনিটের টানটান সিরিজ় দেখতে দেখতে অবধারিত ভাবে মনে পড়ছিল ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সীমান্ত সংঘর্ষের কথা। অপারেশন সিঁদুর, তৎপরবর্তী যুদ্ধ-জিগির, দাবি এবং পাল্টা দাবির ঢেউ। যার মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে সত্য। মনে হচ্ছিল, কোনও দিন কি কেউ চেষ্টা করবে খোসা ছাড়িয়ে আসল ফলটা সামনে মেলে ধরার? এই নেটফ্লিক্স ডকুসিরিজ়ের মতো? যে লোকগুলো এখন অপারেশনে অংশ নিয়েছে, তারা কোনও দিন ক্যামেরার সামনে এসে বলতে পারবে, ঠিক কী হয়েছিল মে মাসের ওই চারটে দিন?

অ্যাবোটাবাদের বাড়িতে যখন অভিযান চলছে, তখন টানা ১৯ মিনিট বহির্বিশ্বের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ ছিল না নেভি সিল টিমের। অ্যাডমিরাল ম্যাকর‌্যাভেনের বর্ণনায়, ‘‘জীবনের দীর্ঘতম ১৯ মিনিট!’’ তার পরে তাঁকে জানানো হয়, ‘‘উই গট হিম!’’ স্বস্তি নিঃশ্বাস ফেলেন ওবামা। যিনি টেনশনের চোটে সিচুয়েশন রুম ছেড়ে দোতলায় উঠে গিয়ে কম্পিউটারে তাস খেলতে বসেছিলেন।

দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, এই ডকুসিরিজ়ের মতো কোনও দিন শুনতে বা দেখতে পাব যে, অ্যাবোটাবাদের বাড়ির চত্বরে মুখ থুবড়ে পড়েছিল নেভি সিল-বাহী একটা প্রকাণ্ড হেলিকপ্টার। ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্টের দফতরে বসে-থাকা সকলে ভেবেছিলেন মিশন বাতিলই হয়ে গেল বুঝি! সেখান থেকে পরিস্থিতি সামলে ৩২ মিনিটের মধ্যে অপারেশন সেরে বেরিয়ে বুলেটে ছিন্নভিন্ন লাদেনের রক্তাক্ত শব বডি ব্যাগে বয়ে এনে হেলিকপ্টারে তুলে (বাড়ির চত্বরে পড়ে-থাকা ধ্বস্ত হেলিকপ্টারকে বিস্ফোরণে উড়িয়ে দিয়ে) পাক বায়ুসেনার ফাইটার জেটের নাগাল এড়িয়ে সময়ের নিক্তি মাপতে মাপতে আফগানিস্তানের নিরাপদ আকাশসীমায় পৌঁছে যাওয়া!

বীরপুরুষ এঁদেরই বলে।

(শিরোনাম ঋণ: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)

Operation Sindoor Indian Army India-Pakistan relation osama bin laden American Manhunt: Osama Bin Laden Web Series

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে আপনার সাবস্ক্রিপশন আপনাআপনি রিনিউ হয়ে যাবে

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।