Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Taslima Nasrin

সিএএ কখনও বলেনি ভারতীয় নাগরিকদের তাড়িয়ে দাও: তসলিমা

‘‘এই লেখার জন্য যে কোনও দিন ফতোয়ার শিকার হতে পারি, খুনও হয়ে যেতে পারি।  জনপ্রিয়তার জন্য লেখা লিখলে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো প্রেমের উপন্যাস লিখতাম। মানুষের পছন্দ নয় এমন কথা বলে অ-জনপ্রিয় হয়ে যেতাম না। খুব জরুরি কথা বলি, বৈষম্যের সমাজ বদলাবার কথা বলি, সমতার কথা বলি, অপ্রিয় সত্য কথা বলি,  এ কারণে বাংলায় আজ আমার ঠাঁই নেই। না পুবে, না পশ্চিমে।  তারপরও নিন্দুক এবং দুর্মুখদের অবসর নেই।’’

তসলিমা নাসরিন।

তসলিমা নাসরিন।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১৮:২৯
Share: Save:

দিল্লিতে টেম্পোরারি রেসিডেন্ট পারমিট বাড়িয়ে বাড়িয়ে আছেন তিনি। ঢাকাতে ফেরা হবে না আর। তাই দিল্লি। কলকাতার আর একটু কাছে। বাংলা ভাষার গা ঘেঁষে থাকা। আজও শুনছেন খুনের হুমকি ধর্ম এবং পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে নিজের মত প্রকাশ করার জন্য। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন থেকে বাংলা ভাষা, বিশ্বের মৌলবাদ নিয়ে আনন্দবাজার ডিজিটালের কাছে ফের সরব হলেন তসলিমা নাসরিন।

নিভৃতে আছেন দিল্লিতে। কিন্তু তাঁর কলাম সবাক। সম্প্রতি এ আর রহমানের মেয়ে খাদিজার বোরখা পরা নিয়ে সহজ ভাবে কঠিন কথা বলেছেন তসলিমা। সেই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া উত্তাল। অনেক মানুষের ধারণা, তিনি জনপ্রিয়তা পাবেন বলেই এই ধারার মন্তব্য করেন।কথাটা শুনেই শক্ত হয়ে এল তাঁর গলার স্বর, ‘‘‘ এ অনেক মানুষের ধারণা নয়, এ কিছু দুষ্ট লোকের মন্তব্য, যারা তসলিমার কিছু না জেনেই, তসলিমার একটি বইও না পড়েই বাজারে ‘তসলিমাবিশেষজ্ঞ’ হিসেবে খ্যাতি কুড়োচ্ছে। কোরান এবং হাদিসে লেখা আছে মেয়েরা যেন ঘরের বাইরে বেরোলে আপাদমস্তক ঢেকে রাখে। আল্লাহ রসুলের আদেশ না মানলে আবার তাদের দোযখের আগুনে নিক্ষেপ করা হয় যদি, এই ভয়ে মেয়েরা পর্দা করে, হিজাব বা বোরখা পরে। এ আর রহমানের মেয়েটি বলছে বোরখা নাকি তার ‘চয়েজ’। শাস্তির ভয়ে তুমি যদি কিছু পরো, ধর্মীয় নির্দেশ মানতে তুমি যদি কিছু করো, তা আর যা কিছুই হোক, ‘চয়েজ’ হতে পারে না। বোরখা কোনও পোশাক নয়, বোরখা ধর্মীয় নির্দেশ। কোরানে লেখা আছে মেয়েরা শরীর না ঢাকলে পুরুষের যৌন উত্তেজনা হয়। যৌনতা তো পুরুষের একার নয়। মেয়েদের যৌন উত্তেজনা হবে বলে পুরুষদের কিন্তু বোরখা পরার আদেশ দেওয়া হয়নি। এ বৈষম্য ছাড়া আর কী! বোরখা নিতান্তই ইসলামি চ্যাস্টিটি বেল্ট। ’’ মনোভাব বুঝিয়ে দিলেন তসলিমা।

তিনি মনে করেন এই ধরনের না বলা কথা, বোরখার বিরুদ্ধে লেখা খুব জরুরি লেখা। প্রায় চল্লিশ বছর ধরে তিনি বলে আসছেন নারী নির্যাতন এবং নারীর বিরুদ্ধে নানা ধরণের বৈষম্যের বিরুদ্ধে। আর যাঁরা বলেন তসলিমা নিতান্তই জনপ্রিয়তার জন্য এই লেখা লেখেন তাঁদের কাছে প্রশ্ন রাখছেন তিনি।

‘‘এই লেখার জন্য যে কোনও দিন ফতোয়ার শিকার হতে পারি, খুনও হয়ে যেতে পারি। জনপ্রিয়তার জন্য লেখা লিখলে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো প্রেমের উপন্যাস লিখতাম। মানুষের পছন্দ নয় এমন কথা বলে অ-জনপ্রিয় হয়ে যেতাম না। খুব জরুরি কথা বলি, বৈষম্যের সমাজ বদলাবার কথা বলি, সমতার কথা বলি, অপ্রিয় সত্য কথা বলি, এ কারণে বাংলায় আজ আমার ঠাঁই নেই। না পুবে, না পশ্চিমে। তারপরও নিন্দুক এবং দুর্মুখদের অবসর নেই।’’

সদ্য পেরিয়ে গেল ভাষা দিবস। বাংলা ভাষার মেয়ে বললেন, ‘‘ভাষার কাছে থাকব বলেই ইউরোপ আমেরিকা ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে পাকাপাকিভাবে বাস করতে গিয়েছিলাম। সেখান থেকেও আমাকে বের করে দেওয়া হল। আপাতত দিল্লিতে ঠাঁই পেয়েছি। জানি, আবার পায়ের তলার মাটি সরে যেতে পারে যে কোনও সময়। দেখুন, দিল্লিতে থাকতে চাই বলে তো থাকি না! বাংলার কাছাকাছি থাকবো বলেই থাকি’।

‘‘বাংলা ভাষায় নতুন বাংলা শব্দও তো তৈরি হচ্ছে না? আপনারা খেয়াল রাখেন?’’

টুইট থেকে ফেসবুক বরাবর সক্রিয় তিনি। কথা প্রসঙ্গে ওঠে বাঙালি আর তার বাংলা ভাষার কথা। ‘‘এখন যা দেখি তাতে বেশ অবাক লাগে। ইংরেজি না জানলে আমার লজ্জা করে না। কিন্তু দেখি এখন প্রায় সব বাঙালিই বাংলা ভাষা না জানা নিয়ে গর্ববোধ করে। বাঙালিরা আজকাল ইংরেজি বলার জন্য মুখিয়ে থাকে। ইউরোপে দেখেছি ওরা অকারণ ইংরেজি শব্দ বলে না। আমার কিন্তু ইংরেজি ভাষা নিয়ে কোনও বিরূপতা নেই। শিখুক না সবাই। কিন্তু বাংলাকে ভুলে? এখন দেখছি বাঙালিরা বাংলাকে ভীষণ রকম ঘৃণা করে।" বাংলা ভাষার অবস্থান বুঝিয়ে দিলেন লেখক।

আরও পড়ুন:‘সাইকেল চড়ে ফুরফুরে হাওয়ায় কৃষ্ণাদি এগিয়ে যাচ্ছেন দিল্লির পথে’

প্রশ্ন করার আগেই পাল্টা প্রশ্ন। ‘‘বাংলা ভাষায় নতুন বাংলা শব্দও তো তৈরি হচ্ছে না? আপনারা খেয়াল রাখেন?’’ অস্থির তাঁর কণ্ঠস্বর। ‘‘আমি জানি না বাংলা আকাদেমি কী করছে? তাদের তো কাজ নতুন শব্দ, নতুন পরিভাষা তৈরি করা। ইউরোপে দেখেছি প্রযুক্তি সংক্রান্ত যে নতুন ইংরেজি শব্দ আসছে সঙ্গে সঙ্গে ওরা পরিভাষা তৈরি করে নিচ্ছে। ওদের ইংরেজি ব্যবহার করতে হচ্ছে না আর। বাংলায় কি ইচ্ছে করেই নতুন ভাষা তৈরি করা হয় না!"

ভাষা আর রাজনীতিকে পাশাপাশি নিয়ে এলেন তসলিমা।এই যে ইচ্ছে করে তৈরি হওয়ার কথা উঠল, এই প্রসঙ্গে বলি, রাজনীতিতেও ইচ্ছে করে ধর্মের নামে মেরুকরণ শুরু হয়েছে। তিনি কী ভাবে দেখছেন বিষয়টা?খানিক স্থির হল তাঁর স্বর। ফিরে গেলেন ছোটবেলায়। ‘‘ছোটবেলায় গান গাইতাম আমরা। বাংলার হিন্দু, বাংলার ক্রিস্টান, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার মুসলমান — আমরা সবাই বাঙালি । তখন বই পড়েছি মানবতার। কিন্তু পরে দেখলাম সব মানুষের ভেতরে ঢোকেনি এ সব। রাজনীতিই সরল সোজা মানুষকে মানবিক হতে দেয়নি। রাজনীতিই মানুষকে অন্য ধর্মের মানুষকে ঘৃণা করতে শিখিয়েছে , অন্য সংস্কৃতির, অন্য ভাষার লোককে ঘৃণা করতে শিখিয়েছে। সেই ঘৃণার আগুনের আঁচ পাই এখন বিভিন্ন ঘটনায়।’’

তিনি মনে করেন দেশভাগ হয়েছিল রাজনীতির কারণেই। মেরুকরণও তাই। দেশভাগ বাইরে থেকে যা হয়েছে তা দেখা গিয়েছে। ‘‘কিন্তু ভেতরের দেশভাগ অনেকেই দেখতে পায়নি। সেটাই মাঝে মাঝে ছলকে ছলকে ওঠে।হিন্দু-মুসলমান আলাদা হয়ে যায় ’’ সচেতন করেন তসলিমা।

এই আলাদা প্রসঙ্গ যখন এলই তখন সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে তাঁর কী মতামত? ‘‘ভয়ঙ্কর কিছু হবে বলে মনে হয় না। হয়তো অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ তাই এই বিষয়টা দিয়ে একটু ডাইভার্ট করা হয়েছিল। আপনিই বলুন না, এত মুসলিম ভারতে, সবাইকে চলে যেতে বলবে? কোথায় রাখবে তাদের? এটা হবে না। তবে বাংলাদেশের মুসলিম যারা ভারতে অবৈধ ভাবে কাজ করতে এসেছিল তাদের কিন্তু দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রচুর লোককে ও দেশে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে একটু একটু করে। এই বিষয়গুলো খবরে কম আসে।’’ নিশ্চিত মনের ছবি উঠে এল কথায়।

‘‘দুশো কোটি মানুষকে তাড়াবেই বা কোথায়? আসলে রাজনীতির কারণে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।’’

এই যে আপনি বলছেন,‘ও দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে’, এটা কি ঠিক হচ্ছে ? এ বার খানিক ভেবে জবাব এল,‘‘দেখুন, মানবতার দিক থেকে যদি বলি তা হলে বলব, না। আমেরিকায়, ইউরোপে যে ভারতীয়রা পড়তে গিয়েছে, কাজের জন্য গিয়েছে, তারা ভিসার মেয়াদ শেষ হলে ওসব দেশে থেকে যায়, শুধু ভারতীয় নয়, এশিয়া আফ্রিকার অনেকেই। তারপর হিউম্যানিটারিয়ান গ্রাউন্ডে ওখানকার সরকার ইল্লিগ্যাল ইমিগ্রেন্টদের লিগ্যাল করে নেয়, নাগরিকত্ব দিয়ে দেয় ভারতেও আশপাশের অনুন্নত দেশ থেকে মানুষ আসবে এটাই স্বাভাবিক। বেটার লাইফ তো সবাই চায়। তবে এই আইন নিয়ে যে ভাবে ছড়ানো হয়েছে যে মুসলিমদের তাড়িয়ে দেবে, বিষয়টা এ রকম নয়। আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে।’’ অন্য চোখে দেখছেন বিষয় তসলিমা।

নিজে রেসিডেন্স পারমিট নিয়ে থাকেন তিনি। ফরেন ন্যাশনাল তকমায়। তাঁর আধার কার্ড আছে ভারতের। ট্যাক্সও দেন।বিদেশি যাঁরাই ভারতে দীর্ঘদিন বাস করছেন, তাঁদের আধার কার্ড আছে। তবে সিটিজেনশিপ নেই তাঁর। সিটিজেনশিপ তিনি চানও না, রেসিডেন্স পারমিট পেলেই তিনি খুশি।

সিএএ নিয়েও সাধারণ মানুষকে বলতে চাইলেন তিনি। ‘‘মানুষকে বোঝাতে হবে।সিএএ কখনও বলেনি ভারতীয় নাগরিকদের তাড়িয়ে দাও। দুশো কোটি মানুষকে তাড়াবেই বা কোথায়? আসলে রাজনীতির কারণে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।’’

তসলিমা দেখেছেন, হিন্দুরা বাংলাদেশ থেকে চলে আসছে। তিনি বলছেন,‘‘তার মানে তো এই নয়, সব হিন্দুই আক্রমণের শিকার! কোথাও মন্দির পোড়ানো হয়েছে, কোথাও কোনও হিন্দুর বাড়িতে হামলা হয়েছে, তখন আশে পাশের হিন্দুরা খুব স্বাভাবিক কারণে নিরাপত্তার অভাবে বোধ করে, দেশ ত্যাগ করে। ধনী এবং মধ্যবিত্ত হিন্দুরা ইউরোপ আমেরিকায় যাওয়ার চেষ্টা করে, ওখানে ওদের রাজনৈতিক আশ্রয় মেলে সহজে, যারা তা পারে না, তারা ভারতে আসে।’’

তিনি নিজেও তো এই ‘পার্সিকিউশন’-এর শিকার? ‘‘হ্যাঁ। হিন্দুদের মতো প্রগতিশীল মুসলমানরাও রাজনৈতিক হয়রানি বা ‘পার্সিকিউশন’-এর শিকার। বিশেষ করে যাঁরা নাস্তিক, ইসলামের অবিজ্ঞান, অসহিষ্ণুতা, বৈষম্য, নারীবিদ্বেষ, বিধর্মীবিদ্বেষ, হিংস্রতা এসবের নিন্দে করে। আমি তো নিজের দেশেই যেতে পারি না। ঘুরে বেড়াচ্ছি এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত।তবুও আমি আশাবাদী। ভারতের সংবিধান খুব পোক্ত। এখানে হিন্দু-মুসলিম নারী-পুরুষের সমান অধিকার আছে। অনেক সেকুলার মানুষও আছেন ভারতে ।’’

উৎসাহ পান তিনি আজও।মানবহত্যার বিপক্ষে কলম চলে তাঁর। আর সামনে থাকে মৃত্যুর হুমকি!

শূন্য অন্ধকারে আগুন বিপ্লবের ঘোষণা আসে আঘাতে আঘাতে।

Been only a year and this topic is in the rounds again..there’s so much happening in the country and all people are concerned about is the piece of attire a woman wants to wear. Wow, I’m quite startled. Every time this topic comes the fire in me rages and makes me want to say a lot of things..Over the last one year, I’ve found a different version of myself which I haven’t seen in so many years. I will not be weak or regret the choices I’ve made in life. I am happy and proud of what I do and thanks to those who have accepted me the way I am. My work will speak, God willing.. I don’t wish to say any further. To those of you who feel why I’m even bringing this up and explaining myself, sadly it so happens and one has to speak for oneself, that’s why I’m doing it. 🙂. Dear Taslima Nasreen, I’m sorry you feel suffocated by my attire. Please get some fresh air, cause I don’t feel suffocated rather I’m proud and empowered for what I stand for. I suggest you google up what true feminism means because it isn’t bashing other women down nor bringing their fathers into the issue 🙂 I also don’t recall sending my photos to you for your perusal 🙂

A post shared by 786 Khatija Rahman (@khatija.rahman) on

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE