নতিডাঙার দুর্গামন্দির। নিজস্ব চিত্র
গ্রামের ছোটদের কেউ কিনেছে নতুন জামা। কারও পায়ে চকচক করছে নতুন জুতো। তবে সে সব এখন তোলা রয়েছে। পুজোর সময় বার হবে। পরে পুজোয় বেরোবে। ঠিক যেমনটা ইদে হয়!
গ্রামের ক’ঘর হিন্দুদের। বাকি মুসলিম। কিন্তু পুজো এলে তা বোঝার উপায় নেই। সারা গ্রামে সাজো সাজো রব। মণ্ডপের কাজ কত দূর এগোল দু’বেলা খোঁজ নিয়ে যান সইজুদ্দি শেখ। প্রতিমায় রঙের পোঁচ পড়েছে কি না তার খোঁজ নেন আব্দুল ওয়াহাব শা।
একটি রাজনৈতিক শক্তি যখন দেশের হিন্দু-মুসলিমকে ভাগ করতে ব্যস্ত তখন থানারপাড়ার নতিডাঙা গ্রামের সম্প্রীতির এই ছবি এক মরমি বার্তা বয়ে আনে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, থানারপাড়ার নতিডাঙা গ্রামে বাসিন্দাদের প্রায় নব্বই শতাংশ মুসলিম। বাকিরা হিন্দু। সকলে সঙ্গে মিলেমিশে বসবাস করেন। তাই পুজো কিংবা ইদ উৎসব যাই হোক না কেন সকলে এক সঙ্গে আনন্দ করেন। হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের মানুষ উৎসবে মেতে ওঠেন।
মুসলিম কমিটির কর্তা আনিসুর রহমান জানান, প্রতি বছর দশমীতে বাবুপাড়া সর্বজনীন ও মৈত্রপাড়া সর্বজনীন পুজোর প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয় স্থানীয় বাজারের পাশে এক জলাশয়ে। বিসর্জনের আগে লাগোয়া মাঠে বাজিও পোড়ানো হয়। সেই উৎসবে আশেপাশের এলাকা থেকে কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত হন। যার সিংহভাগ দর্শক মুসলিম। ওই দিন ভিড়ের মধ্যে বিশৃঙ্খলা বা অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে যেমন পুলিশ হাজির থাকে তেমনি প্রচুর মুসলিম ছেলেরা স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেন।
মৈত্রপাড়া সর্বজনীন পুজো কমিটির সদস্য রাহুল মৈত্র, বাপিন ঘোষ জানান, দুর্গাপুজোয় হিন্দুদের সঙ্গে মুসলিমরাও সবসময় সহযোগিতা করেন। বিসর্জনের দিন প্রায় হাজার দশেক মানুষ উপস্থিত হয়। সেই ভিড় সামাল দিয়ে যাতে সুষ্ঠুভাবে প্রতিমা বিসর্জন হয় তার দায়িত্ব প্রধানত মুসলিমরা পালন করে। তাঁরা বলেন, ‘‘ইদের সময় তাঁদের বাড়িতে হিন্দুরা আমন্ত্রিত থাকেন আবার দশমীর দিনে মুসলিমদের নিমন্ত্রণ করা হয়। পুজো উপলক্ষে মুসলিমদের নিয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়। পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ারের পাশাপাশি প্রচুর মুসলিম স্বেচ্ছাসেবক মানুষের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করেন।’’
স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সাহাবুদ্দিন শেখের কথায়, ‘‘গোটা অনুষ্ঠানকে সুন্দর ভাবে পরিচালনা করতে মুসলিমরা বিশেষ ভূমিকা নেন। অনেক মুসলিম পরিবারে ইদের মতো পুজোর আগে নতুন জামা কাপড় কেনা হয়। অনেকে পুজো মণ্ডপে ঘুরে ঘুরে প্রতিমা দর্শন করেন। এখানে জাতিধর্মের কোনও ভেদাভেদ নেই।”
করিমপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রাজু মল্লিক বলেন, “নতিডাঙার মানুষের এই সম্প্রীতি নতুন নয়। সবাই সবার বিপদে যেমন পাশে দাঁড়ান তেমনই ইদ কিংবা পুজোর মতো যে কোনও উৎসবে উভয় সম্প্রদায়ের সকলেই আনন্দ করতে পারেন। ধর্ম কোনও দিন বাধা হয়নি। হতে পারে না।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy