দিন দুয়েক পূর্বে ফেসবুকে বিদ্যাসাগর কলেজের ‘ছাত্র’সংখ্যার এক আশ্চর্য স্ফীতি ঘটিল। আশ্চর্যতর, সেই প্রাক্তন ‘ছাত্র’দের সকলেই কলেজ চত্বরের আশেপাশের বাসিন্দা, কলেজে হাঙ্গামা চলিবার সময় প্রত্যেকেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকিয়া পুরাটা দেখিয়াছেন। এবং আশ্চর্যতম, প্রত্যেকেই অবিকল এক ভাষায়— দাঁড়ি-কমা-সেমিকোলন, এমনকি বানান ভুলও এক। সেই আশ্চর্য মিল অবশ্য অনতিবিলম্বে ধরা পড়িয়া যায়, ফলে অনেক ‘ছাত্র’ই দ্রুত পাততাড়ি গুটাইয়াছেন। অবিশ্বাসীরা বলিতেছেন, বিদ্যাসাগর কলেজ নহে, তাঁহারা সঙ্ঘের পাঠশালার ছাত্র। এবং বর্তমানে আইটি সেলে কর্মরত। কোন সঙ্ঘ এবং কাহাদের আইটি সেল, তাহা অনুমান করিবার জন্য কোনও পুরস্কার নাই। অতীতেও এমন ঘটনা একাধিক বার ঘটিয়াছে— কোনও একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করিয়া বহু টুইটার-ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হইতে একেবারে এক বার্তা ছড়াইয়া পড়িয়াছে। এবং, বর্তমানের ন্যায় অতীতের ঘটনাগুলিরও একটি নির্দিষ্ট অভিমুখ ছিল— প্রতিটি ক্ষেত্রেই এই বার্তাপ্রেরকরা বিজেপির পিঠ বাঁচাইতে জান লড়াইয়া দিয়াছিলেন। বিদ্যাসাগর কলেজের ‘ছাত্র’দের ফেসবুক স্টেটাসগুলি দৃশ্যত এমনই মেকি যে ধোঁকার টাটিটিকে মান্য করিবার আর কোনও কারণ নাই। মিথ্যাচার করিতে গেলেও যে খানিক যত্নশীল হইতে হয়, ভুয়া মেসেজ ছড়াইতে গেলেও যে শুধু ‘কপি-পেস্ট’ করা যথেষ্ট নহে, বার্তাগুলি আলাদা ভাবে লেখা প্রয়োজন, সেই কথাটি আইটি সেল বোঝে নাই। ইহাকে বুদ্ধির অভাব ভাবা যাইতে পারে। অথবা, এই বেপরোয়া ভঙ্গিটিকে এক আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন হিসাবেও দেখা যায়— আইটি সেল ভাবিয়া লইয়াছে, তাহারা যাহাই লিখিবে, মানুষ সবই বিশ্বাস করিবে। আত্মবিশ্বাসটি ভিত্তিহীন নহে। গত কয়েক বৎসরে সোশ্যাল মিডিয়ায় যাহাই ভাসিয়া আসিয়াছে, ভারতীয়দের একটি বড় অংশ বিনা প্রশ্নে সব কিছুই বিশ্বাস করিয়াছে। বিদ্যাসাগর কলেজের ‘ছাত্র’দের এই বার্তাটিও হয়তো অনেকের নিকট বিশ্বাসযোগ্য ঠেকিতেছে। এখনও।
ভুয়া খবরের চলাচল ঠেকাইবার কোনও কার্যকর উপায় যে এখনও অজ্ঞাত, তাহা প্রমাণ হইয়া গিয়াছে। হোয়াটসঅ্যাপে একসঙ্গে বহু মানুষকে বার্তা পাঠাইবার উপর বিধিনিষেধ জারি হইয়াছে বলিয়া একাধিক অ্যাপ গজাইয়া উঠিয়াছে, যাহার মাধ্যমে কাজটি অবলীলায় সম্ভব। ‘ডিপফেক’ পদ্ধতিতে এমন ভিডিয়ো তৈরি করা সম্ভব হইতেছে, যাহার আসল-নকল প্রভেদ করা কার্যত অসম্ভব। অনুমান করা চলে, আইটি সেলও এমন কাঁচা ভুল বেশি দিন করিবে না। বার্তাগুলি অনেক বেশি নিখুঁত ও বিশ্বাসযোগ্য হইয়া উঠিবে। তাহা হইলে উপায়? এই মিথ্যার সাগরে সত্যের দিগ্নির্দেশ করিবে কোন কম্পাস? সৌভাগ্য, তেমন একটি পথপ্রদর্শক এখনও আছে। তাহার নাম কাণ্ডজ্ঞান। ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে যে বার্তাই আসুক, গোড়ায় তাহাকে সন্দেহের চক্ষে দেখাই বিধেয়। তথ্য যাচাই করিয়া লইবার পর যদি কোনও বার্তাকে বিশ্বাসযোগ্য বোধ হয়, তখন না হয় বিশ্বাস করা চলিবে। তাহারও অধিক জরুরি, কোন সূত্র হইতে সংবাদটি আসিতেছে, তাহা বিচার করা। অজ্ঞাতপরিচয় কোনও নিউজ় পোর্টাল হইতে পাওয়া সংবাদকে গুরুত্ব না দেওয়াই শ্রেয়। যাহাদের নিজের নামরক্ষার দায় আছে, এবং সেই দায় হইতেই যাহারা সংবাদের সত্যাসত্য বিচার করে, তেমন সূত্রের উপরই ভরসা থাকুক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy