Advertisement
E-Paper

আজীবন ব্যঙ্গের তাসই এখন ভারতের গর্ব

খেলা হিসেবে তাস বঙ্গীয় সমাজে শুধু অপাঙক্তেয়ই নয়, ঈষৎ নিম্নবর্গীয়ও। তাস-দাবা-পাশা এই তিন যে আসলে সর্বনাশা, বঙ্গকুলরত্নেরা আশৈশব এই শিক্ষাটাই পেয়ে আসেন।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৪৭
ব্রিজে সোনাজয়ী দুই বাঙালি প্রণব বর্ধন ও শিবনাথ দে সরকার। ছবি রাজ্যবর্ধন সিং রাঠৌরের টুইটারের সৌজন্যে।

ব্রিজে সোনাজয়ী দুই বাঙালি প্রণব বর্ধন ও শিবনাথ দে সরকার। ছবি রাজ্যবর্ধন সিং রাঠৌরের টুইটারের সৌজন্যে।

খেলা হিসেবে তাস বঙ্গীয় সমাজে শুধু অপাঙক্তেয়ই নয়, ঈষৎ নিম্নবর্গীয়ও। তাস-দাবা-পাশা এই তিন যে আসলে সর্বনাশা, বঙ্গকুলরত্নেরা আশৈশব এই শিক্ষাটাই পেয়ে আসেন। অথবা ‘তাস-পাশা-পাঁচালি, তিনে মন মজালি’— আলস্য এবং অকর্মণ্যতার নিখুঁত বিবরণ বোঝাতে এই বাক্যবন্ধের সঙ্গে পরিচিত হয়েছিলাম আমরা ওই একই সময়ে, শৈশবকালেই। তাসের নেতিবাচক ভূমিকা এখানেই শেষ হয়ে যায় তা নয়, ভঙ্গুর কোনও ব্যবস্থার বিবরণ হিসেবে আমাদের মনে পড়ে যায় এই পাপবিদ্ধ তাসকেই। বলি, ব্যাপারটা তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ল। অথবা কোনও কিছু ভেস্তে দেওয়া বোঝাতেও আমাদের মনে আসে তাসের কথাই, ‘সব কিছু তাসিয়ে দিল ওই লোকটা’।

আমরা নিজেদের আত্মীয়বর্গের ক্রিকেটার বা ফুটবলার অথবা টেনিস প্লেয়ার এমনকি দাবাড়ু, এই পরিচয় দিতেও দ্বিধা বোধ করি না। বস্তুত, বিশ্বজনীনতার সৌজন্যে বিরাট কোহালি হওয়ার সম্ভাবনা অথবা মেসির স্বপ্ন— ক্রিকেটার-ফুটবলার পরিচয়কে গৌরবান্বিতই করে ইদানীং। বিশ্বনাথন আনন্দ অথবা দিব্যেন্দু বড়ুয়ারা দাবাড়ু পরিচয়েরও গৌরবের স্বপ্ন দেখান। কিন্তু তাসুড়ে পরিচয় ক্রীড়াকুলীন সমাজ তো বটেই, রাম-রহিম-শ্যাম-ইসমাইলের সাধারণ সমাজেও ব্রাত্যই থেকে এসেছে এতদিন। আজন্মলালিত এই সংস্কার-ধারণা-চেতনায় বড় নাড়া দিয়ে গেলেন প্রণব বর্ধন এবং শিবনাথ দে সরকার। তাসও যে একটা কুলীন খেলা হিসেবে গণ্য হতে পারে, এশিয়াডে তার জায়গা হতে পারে এবং সেহেন খেলায় ভারত স্বর্ণোজ্জ্বল উপাখ্যান তৈরি করতে পারে, এই দুই ব্যক্তি সোনার মেডেল জিতে তার সগৌরব ঘোষণাটাই করে গেলেন শনিবার।

প্রণব-শিবনাথ জুটি ইতিহাসে স্মরণীয় থাকবেন অন্যতর কারণেও। নিত্যযাত্রী-ভরসা ট্রেন সাক্ষী, রবীন্দ্রনাথ-সত্যজিতের বর্ণনা-করা অলস দুপুর সাক্ষী, অনুদান পাওয়ার আগে বা পরেও রাজ্যের অসংখ্য ক্লাব সাক্ষী, সাক্ষী উত্তর কলকাতার অজস্র রোয়াক, সাক্ষী প্রেসিডেন্সি-যাদবপুরের মেধাবী ছাত্রদের হস্টেল— বাঙালি তাস তথা ব্রিজকে লালন করে এসেছে বহু যত্ন করেই। যে খেলায় নিমগ্ন থেকেছে বাঙালি দীর্ঘদিন, সামাজিক কৌলীন্যের অভাবহেতু ঈষৎ সঙ্কোচের সঙ্গেই হয়তো বা, তাকে আজ জাতে তুললেন দুই বাঙালিই, জাতির নাম উজ্জ্বল করে— এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি শরৎচন্দ্র-রবীন্দ্রনাথের সমাজের উত্তরসূরি বাঙালির আর কী-ই বা থাকতে পারে?

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

প্রণব বর্ধন এবং শিবনাথ দে সরকারকে অভিনন্দন। অভিনন্দন তাঁদের এই সাফল্যের জন্য। অভিনন্দন জাতির নাম, দেশের নাম উজ্জ্বল করার জন্য। এবং অবশ্যই ভীরু, সঙ্কুচিত হৃদয়, অম্লশূলবিদ্ধ বাঙালির প্রিয় ব্রিজ খেলাটিকে বিশ্বের দরবারে এই ভাবে আলোকোজ্জ্বল ভঙ্গিতে পেশ করার জন্য। জয়তু প্রণব-শিবনাথ। জয়তু বাঙালির ব্রিজ-প্রেম।

আরও পড়ুন: ‘সোনার বুড়ো’ প্রণবকে তাস পেটানোয় পুরো মদত জুগিয়েছে পরিবার

Pranab Bardhan Sibhnath Sarkar Asian Games 2018 Bridge Newsletter Anjan Bandyopadhyay অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় এশিয়ান গেমস ২০১৮ Gold
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy