Advertisement
E-Paper

নিজের পদের ওজনটা জানেন তো সেনাপ্রধান?

ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে নানা মহলে যে এখন নানান চর্চা, সে নিয়ে সংশয় নেই। সে চর্চার সবটাই যে সুখকর, সবটাই যে কূটনৈতিক ভারসাম্যে টানটান, সবটাই যে সৌজন্যের মোড়কে সুসজ্জিত, এমনটা বলা যায় না।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০০:৫১
বিপিন রাওয়াত। —ফাইল চিত্র।

বিপিন রাওয়াত। —ফাইল চিত্র।

সম্পূর্ণ অনাকাঙ্খিত ছিল এই পরিস্থিতিটা। তিক্ত এবং দীর্ঘ এক টানাপড়েন সদ্য কাটিয়ে উঠেছে ভারত-চিন। ব্রিকস শিখর সম্মেলন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চিন সফরে গিয়েছিলেন, সেই সফরেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বরফ গলানোর কাজটা সাফল্যের সঙ্গে শুরু করে এসেছেন। কিন্তু ঠিক তার দু’দিনের মাথায় ভারতের সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত অভিযোগ করলেন, সীমান্তে ধীরে কিন্তু সুপরিকল্পিত ভাবে আগ্রাসনের পথে এগোচ্ছে চিন। স্বাভাবিক কারণেই তিক্ত প্রতিক্রিয়া এল সীমান্তের ও পার থেকেও। ডোকলাম সঙ্কটের গাঢ় অন্ধকার কাটিয়ে উঠে ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে যে নতুন ভোরের সূচনা হয়েছিল, সকাল পর্যন্ত গড়ানোর আগেই সে ভোর মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়ল।

ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে নানা মহলে যে এখন নানান চর্চা, সে নিয়ে সংশয় নেই। সে চর্চার সবটাই যে সুখকর, সবটাই যে কূটনৈতিক ভারসাম্যে টানটান, সবটাই যে সৌজন্যের মোড়কে সুসজ্জিত, এমনটা বলা যায় না। ডোকলামের সঙ্কট কেটেছে এবং নরেন্দ্র মোদী-শি চিনফিং সাক্ষাৎকারে উষ্ণতার ছবিই দেখা গিয়েছে, এ কথা ঠিক। কিন্তু পারস্পরিক সংশয় মোটেই পূর্ণত অতীত নয় এবং সমাজের বিভিন্ন স্তরের আলোচনায় কান পাতলেই সে সংশয়ের প্রতিফলন টের পাওয়া যাচ্ছে। সাধারণ্যে এ ধরনের নানা আলোচনা চলতেই পারে, নানা মন্তব্য ভেসে বেড়াতেই পারে। কিন্তু প্রশাসনিক কাঠামোয় যাঁরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তথা দায়িত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন, ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মতো স্পর্শকাতর এবং সংবেদনশীল বিষয়ে মন্তব্য করার সময় তাঁরা যথেষ্ট সতর্ক হবেন না, এমনটা মেনে নেওয়া খুব কঠিন। জেনারেল বিপিন রাওয়াতের অনাকাঙ্খিত মন্তব্যটা মেনে নেওয়া তাই খুব কঠিনই হচ্ছে।

চিন প্রশ্ন তুলেছে বেশ কয়েকটা। ভারতের সেনাপ্রধান যে মন্তব্য করেছেন, তা করার অনুমতি কি তাঁকে দেওয়া হয়েছে? নাকি তিনি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কথাগুলো বলেছেন? অথবা, এমন কি হতে পারে যে ভারতের সেনাপ্রধানকে এ রকম মন্তব্য করতে ভারত সরকার বলেনি, কিন্তু চিন সম্পর্কে সরকারও এই রকমই ভাবছে?

আরও পড়ুন: সেনাপ্রধানের মন্তব্যে রুষ্ট চিন, দিল্লির মনের কথাও কি এই? প্রশ্ন বেজিঙের

প্রশ্নগুলো ওঠা অসঙ্গত নয়। এক বেনজির সীমান্ত সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার পর প্রথম সাক্ষাতেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং প্রেসিডেন্ট শি চিনফিং যে কূটনৈতিক পরিণতমনস্কতার পরিচয় দিয়েছেন, তাতে ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ভারসাম্য অনেকটাই পুনরুদ্ধার করা গিয়েছে। একে সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবেই দেখা হচ্ছে। সেই সাফল্যের রেশ অত্যন্ত দ্রুত ফিকে হয়ে যাক, নরেন্দ্র মোদী নিশ্চয়ই তা চাইবেন না। তাই সীমান্তের বিতর্কিত অংশগুলিতে কোনও সুপ্ত আগ্রাসনের নিঃশ্বাস থাকলেও, সে নিয়ে কোনও দায়িত্বশীল সরকারি কর্তার তরফ থেকে এমন প্রকাশ্য মন্তব্য এই মুহূর্তে অন্তত কাম্য নয় নরেন্দ্র মোদীর কাছে। চিনও সে কথা জানে। তাই প্রশ্নগুলো তুলতে বিন্দুমাত্র বিলম্ব করল না বেজিং।

কূটনীতি কিন্তু আপাদমস্তক ভারসাম্যেরই খেলা। কথার মারপ্যাঁচ এবং শব্দের নকশাই সফল কূটনীতির প্রাণবায়ু। অনেক কথা, অনেক সত্য, অনেক তথ্যই ভাসতে থাকে কূটনীতির পরিসরে। কিন্তু কতটা বলতে হবে আর কতটা অনুক্ত থাকবে, দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গকে তা বুঝতেই হবে। না হলে উজ্জ্বল ভোর সকাল পর্যন্ত গড়ানোর আগে বারবারই মেঘাচ্ছন্ন হয়ে পড়বে।

Bipin Rawat India-China China Newsletter Anjan Bandyopadhyay বিপিন রাওয়াত ভারত চিন অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy