Advertisement
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
সম্পাদকীয় ২

পরাজিত প্রস্তাব

রাজস্থান সরকারের যুক্তি, দু্র্নীতির অভিযোগ করিয়া বিপুল সংখ্যক মামলা হইয়া থাকে, তাহার তদন্তে প্রচুর সময় এবং অর্থ ব্যয় হয়।

শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৭ ০০:০০
Share: Save:

আপাতত স্বস্তি। প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থায় দুর্নীতিগ্রস্তদের আড়াল করিবার চেষ্টা প্রতিহত হইয়াছে রাজস্থানে। প্রবল চাপে পিছু হটিয়াছেন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজে। বিধানসভায় পেশ না হইয়া দুর্নীতিগ্রস্তদের ‘রক্ষাকবচ’ স্বরূপ আইনটির খসড়া পাঠানো হইয়াছে বিধানসভার বিশেষ কমিটির নিকট। এই যাত্রা অগস্ত্যযাত্রা হউক। গণতান্ত্রিক ভারতে এমন আইনের কোনও স্থান নাই। প্রশাসনের ছাড়পত্র না মিলিলে কর্তব্যরত অথবা প্রাক্তন সরকারি কর্তা এবং বিচারকদের দুর্নীতির তদন্ত চাহিয়া কেহ মামলা করিতে পারিবে না, লিখিতেও পারিবে না সংবাদমাধ্যম, এমনই বলা হইয়াছিল সেই আইনে। সংগত কারণেই বিরোধীরা ইহাকে ‘কালা কানুন’ আখ্যা দিয়া তীব্র প্রতিবাদ করিয়াছেন। এমনকী বিজেপির বিধায়কদের একাংশও এই প্রস্তাবের প্রতিবাদ করিতে বাধ্য হইয়াছেন। তাহাতে আশ্চর্য কিছু নাই। প্রশাসনে দুর্নীতির অভিযোগ তুলিতে প্রশাসনেরই অনুমোদন লাগিবে, নচেৎ হাজতবাস করিতে হইবে, শিবঠাকুরের আপন দেশ নহিলে এমন আইন সম্ভব নহে। অথচ রাজস্থান সরকার এই মর্মে একটি অধ্যাদেশ পাশ করাইয়াছিল, এবং তাহার মেয়াদ সম্পূর্ণ হইয়াছে!

রাজস্থান সরকারের যুক্তি, দু্র্নীতির অভিযোগ করিয়া বিপুল সংখ্যক মামলা হইয়া থাকে, তাহার তদন্তে প্রচুর সময় এবং অর্থ ব্যয় হয়। অতঃপর অধিকাংশ অভিযোগই ধোপে টিকিতে পারে না। অকারণ মামলা এড়াইতে এই আইনের প্রস্তাব। এই যুক্তি হাস্যকর। সরকারের টাকা বাঁচাইবার অনেক পদ্ধতি রহিয়াছে। দুর্নীতির তদন্ত না করিয়া অর্থ বাঁচাইতে চাহিলে দুর্নীতি আরও প্রশ্রয় পাইবে। অর্থাৎ হিতে বিপরীত হইবে। অকারণ মামলা রুখিবার অনেক প্রক্রিয়া রহিয়াছে। যাহার মধ্যে প্রধান হইল স্বচ্ছতা। ছাত্র ভর্তি, চাকরিতে নিয়োগ, সরকারি কাজের বরাত প্রদান, সরকারি সুবিধার প্রাপক নির্বাচন প্রভৃতি কয়েকটি বিষয়েই দুর্নীতি লইয়া সর্বাধিক অভিযোগ উঠিয়া থাকে। সে সকল বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত যদি যথাযথ নথিপত্র সহকারে পূর্বেই ওয়েবসাইটে প্রকাশ করিয়া দেওয়া যায়, তাহা হইলে দুর্নীতির অভিযোগ কমিতে বাধ্য। আদালতের বাহিরেও অভিযোগের দ্রুত নিষ্পত্তির নানা ব্যবস্থা রহিয়াছে। বৃথা অভিযোগের জন্য জরিমানাও করা যাইতে পারে। কিন্তু দুর্নীতির প্রতিটি অভিযোগকেই সমান গুরুত্ব দিতে হইবে। কারণ নিরপেক্ষ তদন্তের অধিকার নাগরিকের জীবনের অধিকারেরই অন্তর্গত। মৌলিক অধিকারের উপর কোনও শর্ত আরোপের অধিকার সরকারের নাই।

প্রস্তাবিত আইনটি বাক্‌স্বাধীনতার অধিকার ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার উপরেও আঘাত। তাহা আশ্চর্য নহে। সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করিবার এক সুসংহত কার্যসূচি পরিলক্ষিত হইতেছে। কখনও সাংবাদিকের নিহত, প্রহৃত হইতেছে। কখনও সংবাদ মাধ্যমের মালিকানা বেনামে দখল করিতেছেন নেতারা। কখনও তদন্তকারী সাংবাদিক ও সংবাদসংস্থার নামে কোটি কোটি টাকার মামলা ঠুকিতেছেন। কোনও রাজনৈতিক দলই এই দুষ্কার্য করিতে পশ্চাৎপদ নহে, কিন্তু বিজেপি অধিক উৎসাহী। আইন করিয়া দুর্নীতির সংবাদ রুখিবার প্রচেষ্টাটি আপাতত পরাস্ত হইয়াছে, কিন্তু তাহাতে সাংবাদিকের স্বস্তি সামান্যই। তাহার সম্মুখে দীর্ঘ, নিঃসঙ্গ যাত্রার পথ। সন্ধ্যা নামিতেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Government Vasundhara Raje Rajasthan fundamental rights
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy