Advertisement
E-Paper

বিপজ্জনক চাল

নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার যে ভাবে একের পর এক বিপজ্জনক ঝুঁকির মাধ্যমে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভাজন ঘটাইয়া চলিয়াছে, তাহার সর্ববৃহৎ দৃষ্টান্ত এই পাকিস্তান নীতিই।

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০১৮ ০০:২৫

মোদী সরকারের নিকট ‘পাকিস্তান’ কি একটি বৈদেশিক বিষয়? না, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিষয়? যদি বৈদেশিক বিষয় হয়, তবে অপরাপর ক্ষেত্রের মতো এই ক্ষেত্রটিতে কি বর্তমান সরকারের কোনও পথনির্দেশিকা (রোড-ম্যাপ) আছে? প্রশ্নগুলি নূতন নহে, অনেক দিন ধরিয়া নানা মহলের আনাচেকানাচে ঘুরিতেছে। এত দিনে কংগ্রেসের সর্বোচ্চ মঞ্চ হইতে তাহাদের প্রতিষ্ঠা হইল, কংগ্রেসের প্লেনারি অধিবেশনের বৈদেশিক নীতি সংক্রান্ত প্রস্তাবটির মধ্য দিয়া। স্পষ্ট ঘোষিত হইল, সরকারের এই ক্ষীণদৃষ্টির এবং পাকিস্তান বিষয়ে অন্যায় রকমের সুযোগসন্ধানী নীতির কারণে দুই প্রতিবেশীর সম্পর্ক এখন অত্যন্ত মন্দ। এবং বিপজ্জনক। কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে ঘন ঘন পাকিস্তানি হামলায় স্থানীয় ও দেশীয় পরিস্থিতি যতই খারাপ হইতেছে, সরকারের গোপন উদ্দেশ্য ততই পূর্ণ হইতেছে, বিপন্নতার জিগির তুলিয়া ততই জাতীয়তাবাদের তুষ্টি ও পুষ্টি হইতেছে। এইখানেই বিপদ ভয়ানক। এই জন্যই পাকিস্তান এখন দিল্লির কাছে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অন্যতম প্রধান মেরুকরণের মাধ্যম। কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বে, নেতা আনন্দ শর্মার তত্ত্বাবধানে এই জরুরি অভিযোগটি মান্যতা পাইল, ইহা সুসংবাদ। আরও বিপদ ঘনাইবার আগে সরকারের পাকিস্তান-নীতির সমালোচনা আরও জোরদার হওয়া উচিত।

ইউপিএ সরকারের আমলে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক অতি শান্তিময় ছিল, এমন বলা যাইবে না। কিন্তু গত চার বৎসরের তুলনায় তাহা অনেক কম বিপজ্জনক ছিল, কারণ পাকিস্তান বিষয়টিকে এমন সচেতন ভাবে তখন রাজনৈতিক বিভাজনের অস্ত্র করিয়া তোলা হয় নাই। এ দিকে মোদীর শাসনকালে গোরক্ষকদের বাড়াবাড়িতে ভারতীয় সমাজের একাংশ অতিষ্ঠ হইয়া উঠিলে পাকিস্তানি শিল্পীদের বিরুদ্ধে লোক খেপাইবার বন্দোবস্ত হইল। গুজরাতে প্রাদেশিক নির্বাচনে পরিস্থিতি বিজেপি-বিমুখ দেখিয়া সাত তাড়াতাড়ি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর সহিত পাকিস্তান দূতাবাসের ‘গোপন সম্পর্ক’ ‘ফাঁস’-এর চেষ্টা হইল। আবার এখন আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে পাকিস্তানি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে হাওয়া গরম করিবার চেষ্টা হইতেছে। ইহাতে দুই দেশের সম্পর্কে দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি করিয়া দিতেছে। সহজে ইহা মেরামত-যোগ্য নয়। আরও উদ্বেগের বিষয়, আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের পাকিস্তান-বিরুদ্ধতার বিশ্বাসযোগ্যতাটি ভয়ঙ্কর রকম ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছে। এই ক্ষতির নিরাময় কঠিনসাধ্য, এমনকী অসাধ্যও হইতে পারে। বিশ্বাসযোগ্যতা বস্তুটি কাচের মতো। এক বার ভাঙিলে জোড়া দেওয়া সহজ নয়।

নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সরকার যে ভাবে একের পর এক বিপজ্জনক ঝুঁকির মাধ্যমে সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভাজন ঘটাইয়া চলিয়াছে, তাহার সর্ববৃহৎ দৃষ্টান্ত এই পাকিস্তান নীতিই। ক্ষমতায় আসিয়া নূতন প্রধানমন্ত্রী পুরো ছবিটি তখনও ছকিয়া ওঠেন নাই, তাই পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সহিত বন্ধুত্ব-সম্পর্কের চেষ্টা করিয়াছিলেন। প্রত্যাশিত ভাবেই তাহাতে বাধা পড়ে, ইহাই ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের চির কালের দস্তুর। এ দিকে পাশাপাশি, মোদীও দ্রুত আবিষ্কার করিয়া ফেলেন যে, পাকিস্তানের সহিত বন্ধুত্ব নয়, শত্রুতাই তাঁহাকে অধিক রাজনৈতিক সুবিধা আনিয়া দিবে। ফলে ক্রমাগত আলোচনা-পরিবেশ ধ্বস্ত হয়, কাশ্মীরে অকারণ সামরিক বাড়াবাড়ি চলিতে থাকে, পাকিস্তানের বিষয়ে ঘরোয়া রাজনীতিতে স্লোগানের পর স্লোগান তৈরি হয়, অসত্য দাবি ও বক্তব্যের প্রস্ফুটন ঘটে। পাকিস্তানকে কূটনীতির বদলের ঘরোয়া রাজনীতির বিষয়ে পর্যবসিত করিয়া মোদী সরকার দেশ ও গোটা উপমহাদেশের পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক একটি খেলা খেলিতেছেন।

Government Pakistan policy criticism
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy