Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
সম্পাদকীয় ২

সাহসিনী

নাবালিকা গ্রেটা যাহা বুঝিয়াছে এবং সহজ করিয়া বলিয়াছে, অবশিষ্ট পূর্ণবয়স্ক নাগরিকেরা কি তাহা বুঝেন না? তেমন সংশয়ের কোনও কারণ নাই। নিশ্চিত ভাবেই তাঁহারা অবগত যে রাষ্ট্রনেতারা ফাঁকা বুলি বিলি করিয়া থাকেন। তবু গ্রেটার ন্যায় ‘হাউ ডেয়ার ইউ’— ‘এত সাহস হয় কী করিয়া’— বলিবার উদ্যোগ বা সাহস কাহারও নাই।

রাষ্ট্রপুঞ্জে গ্রেটা থুনবার্গ।

রাষ্ট্রপুঞ্জে গ্রেটা থুনবার্গ।

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:০২
Share: Save:

বিশ্বের তাবড় রাষ্ট্রনায়কেরা যাহা পারেন নাই, করিয়া দেখাইল সুইডিশ ষোড়শবর্ষীয়া গ্রেটা থুনবার্গ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশে হানা অগ্নিদৃষ্টি এখন সমাজমাধ্যমে ‘ভাইরাল’। আপাতদৃষ্টিতে সেই দৃষ্টি যত ভয়ানক, উহার তাৎপর্য আরও কিছু অধিক। সেই তাৎপর্যের আভাস মিলিবে রাষ্ট্রপুঞ্জের জলবায়ু সম্মেলনে গ্রেটার বক্তৃতার ছত্রে ছত্রে। তাহার কার্যত প্রতিটি কথাই শ্রোতার বুকে ছুরিকাঘাত করিবার ক্ষমতা রাখে। রাষ্ট্রনেতাদের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করিয়াছে গ্রেটা, কেননা এই শ্রেণির প্রতিভূরাই তাহার এবং তাহার ন্যায় অগণিতের শৈশব হরণ করিয়াছেন। সত্যই, গ্রেটার ন্যায় কিশোরীর কি জলবায়ু সম্মেলনে বক্তৃতা করিবার কথা? যাহার বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করিবার বয়স, তাহাকে জলবায়ু লইয়া মাথা ঘামাইতে হইলে বুঝিয়া লওয়া যায়, দায়িত্বপ্রাপ্তরা ডাহা ফেল করিয়াছে। অতএব গ্রেটার ভাবনা, সাহস এবং উদ্যোগকে কুর্নিশ জানাইবার পূর্বেও বিস্ময়ে বিমূঢ় হইতে হয়। উহার পর স্মরণে রাখা আবশ্যক, গ্রেটা বাধ্যত এই কাজ করিতেছে, এবং একা একাই করিতেছে।

নাবালিকা গ্রেটা যাহা বুঝিয়াছে এবং সহজ করিয়া বলিয়াছে, অবশিষ্ট পূর্ণবয়স্ক নাগরিকেরা কি তাহা বুঝেন না? তেমন সংশয়ের কোনও কারণ নাই। নিশ্চিত ভাবেই তাঁহারা অবগত যে রাষ্ট্রনেতারা ফাঁকা বুলি বিলি করিয়া থাকেন। তবু গ্রেটার ন্যায় ‘হাউ ডেয়ার ইউ’— ‘এত সাহস হয় কী করিয়া’— বলিবার উদ্যোগ বা সাহস কাহারও নাই। এবং এই ভাবেই ধ্বংসের দায়ভাগে নিজেদের সমান অংশীদার করিয়া তুলিয়াছে আজিকার অভিভাবক প্রজন্ম। তাহারা সচেতন নহে, সচেতন হইবার কিংবা করিবার কোনও ইচ্ছাও চোখে পড়ে না, অতএব গ্রেটার ন্যায় এক নাবালিকাকেই আগাইয়া আসিতে হইয়াছে। বলিতে হইয়াছে, যাঁহারা দুনিয়াকে মৃত্যুপথগামী করিয়া তুলিবার পরেও আশার বাণী শুনাইতে পারেন, তাঁহাদের ধৃষ্টতা সীমাহীন। গ্রেটার জীবনের আশাও এই রূপেই শেষ হইয়াছে। তাই মহাসাগরে তরী ভাসাইয়া আন্দোলিত করিতে হইয়াছে দুনিয়াকে। গ্রেটার কর্মকাণ্ডে আমাদের উচ্ছ্বাস হইতে অনুতাপই অধিক হওয়া উচিত।

বালিতে মুখ গুঁজিয়া থাকা যদি আমাদের অপরাধের প্রথম ধাপ হয়, তাহা হইলে রাষ্ট্রনেতা তথা অভিভাবক প্রজন্মের অপরাধের দ্বিতীয় ধাপ অতিসক্রিয় ভাবে পরিবেশের ক্ষতি করা। প্রকৃতি ধ্বংস হইতেছে, এই কথাটি অধিকাংশ মানুষই যেমন বলে নাই, কার্যত স্বীকারই করে নাই, অন্য দিকে তাহারাই নিয়মিত আরও ক্ষতি করিয়াছে। সচেতনতা না থাকা এক বস্তু, কিন্তু যথেচ্ছাচার অতি বিষম। গ্রেটা কেন একা, বুঝিতে অসুবিধা হয় না। বস্তুত, গ্রেটা যখন লড়াই শুরু করিয়াছিল, তখন যুদ্ধক্ষেত্রে সে একেবারেই একা ছিল। গ্রেটা নিজের দম ধরিয়া রাখিতে পারিয়াছে, তাহা ভিন্ন প্রসঙ্গ, কিন্তু রূঢ় বাস্তব হইল যে এক সময় কেহই তাহার পাশে দাঁড়ায় নাই। এক দিকে যখন গ্রেটার আন্দোলন চলিতেছে, আর এক দিকে তখন প্লাস্টিকে ভরিয়া উঠিতেছে একের পর এক সমুদ্রসৈকত। আমাদের শিক্ষার যে কোনও পরিমণ্ডলে পরিবেশ লইয়া ভাবনাচিন্তা এতই গৌণ যে অতিকায় কিছু না করিয়া ফেলা অবধি কেহ ফিরিয়াও চাহে নাই। তবু আশার কথা, শৈশব আজ চেঁচাইতেছে এবং অবশিষ্ট সমাজ শুনিতেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Greta Thunberg
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE