Advertisement
E-Paper

ধোঁয়াশা আর বিভ্রান্তিকে সঙ্গে নিয়ে যাত্রা শুরু জিএসটি-র

প্রধানমন্ত্রীর কথায়, নতুন চশমায় চোখ সইয়ে নিতে কয়েকটা দিন সময় লাগে। ঠিকই, আচমকা নতুন চশমা এলে একটু সমস্যা হয়? কিন্তু জিএসটি তো আচমকা এল না। এ চশমা তো ঘরে রাখাই ছিল দীর্ঘ দিন।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৭ ০৫:৪৩
প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে জিএসটি-র পথ চলা শুরু হল। ছবি:সংগৃহীত।

প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে জিএসটি-র পথ চলা শুরু হল। ছবি:সংগৃহীত।

মহাসমারোহে গালিচা বিছিয়ে দেওয়া হল সংসদের সেন্ট্রাল হল থেকে। পণ্য ও পরিষেবা কর অর্থাত্ জিএসটি-র পথ চলা শুরু হল। জি, এস এবং টি— ইংরেজি বর্ণমালা থেকে নেওয়া এই তিনটি অক্ষরকে নিয়ে পাশাপাশি উচ্চারণ করলে কেমন শোনায় বা পাশাপাশি লিখলে কেমন দেখায়, এখনও পর্যন্ত শুধুমাত্র সেটুকুই জানতে পেরেছে ভারতের সুবিশাল জনগোষ্ঠী। নতুন পরোক্ষ কর ব্যবস্থা সম্পর্কে তার চেয়ে বেশি কিছু জানা নেই দেশের সিংহ ভাগ মানুষের। একরাশ ধোঁয়াশা এই নতুন বন্দোবস্তকে ঘিরে। কার ভাল হবে, কার মন্দ হবে, কীসের দাম বাড়বে, কীসের দাম কমবে, কেনই বা বাড়বে, কী ভাবেই বা কমবে? গুচ্ছ গুচ্ছ প্রশ্ন ভাসছে গোটা দেশে। প্রায় কারও কাছেই স্পষ্ট উত্তর নেই। তবু জিএসটি-রাজ শুরু হয়ে গেল। কর ব্যবস্থায় এই নতুন যুগের সূচনা নির্দেশ করতে যে সমারোহ আয়োজিত হল, ততটা সমারোহে যদি দেশবাসীকে জিএসটি সম্পর্কে বোঝানোর চেষ্টা করত সরকার, তা হলে এত বিভ্রান্তির অবকাশ তৈরি হত না।

প্রধানমন্ত্রীর কথায়, নতুন চশমায় চোখ সইয়ে নিতে কয়েকটা দিন সময় লাগে। ঠিকই, আচমকা নতুন চশমা এলে একটু সমস্যা হয়। কিন্তু জিএসটি তো আচমকা এল না। এ চশমা তো ঘরে রাখাই ছিল দীর্ঘ দিন। দেশবাসীকে একটু একটু করে সইয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হল না কেন? যথেষ্ট সময় পাওয়া সত্ত্বেও কেন স্পষ্ট করে বোঝানোর চেষ্টা হল না, নতুন কর কাঠামোর প্রয়োগ ঠিক কী ভাবে হবে?

সরকার বলছে জিএসটি-তে দেশের লাভ হবে। বিরোধীদের বড় অংশ বলছেন, যে হারে জিএসটি ধার্য হল, তাতে সাধারণ মানুষের ক্ষতি হবে। ব্যবসায়ীরা বিভ্রান্ত। কারও কাছে স্পষ্ট নির্দেশিকা নেই। শুধুই ধোঁয়াশা। ওষুধ ব্যবসায়ীরা মহা-আতান্তরে। আগামী বেশ কয়েকটা দিন ধরে দেশ জুড়ে ওষুধের সঙ্কট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়ে যাবে বলে কেউ কেউ দাবি করছেন। কেউ বলছেন, দাম কমবে। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির বিপণন নিয়ে ঘোর সংশয়। রাজ্যে রাজ্যে সিনেমা হলের মালিকরা বিক্ষোভে বা ধর্মঘটে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সরকারের তরফে এই বিভ্রান্তি নিরসনের কোনও চেষ্টাই দেখা গেল না। গোটা দেশকে প্রগাঢ় অস্বচ্ছতার মধ্যে রেখে একটা আদ্যন্ত নতুন কর ব্যবস্থা যেন উপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া হল।

জিএসটি ব্যবস্থা প্রবর্তনের কায়দাটাও কিন্তু বেশ অস্বচ্ছই দেখাল। অন্য সবার মুখের উপর থেকে আলো ছিনিয়ে নেওয়ার একটা কৌশল দেখা গেল যেন। ১৭ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন মন্ত্রিসভা একটু একটু করে অগ্রসর হয়েছে জিএসটি কার্যকরী করার দিকে। সেই কৃতিত্ব যেন স্বীকারই করতে চাইল না নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভা। বেশ আত্মকেন্দ্রিক ঢঙে জিএসটি ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক সূচনার আয়োজন হল। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিবাদ ছিল, বিভিন্ন রাজ্য সরকারের বিরোধিতা ছিল, বিভিন্ন বণিক সংগঠন নানা বিষয়ে আপত্তি তুলেছিল। সে সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার পথে যেন হাঁটতেই চাইল না সরকার। একক কৃতিত্বে বিজেপি তথা মোদী-জেটলি জুটি দেশের কর কাঠামোর আমূল সংস্কার করে ফেলল রাতারাতি— এমন একটা ধারণা চারিয়ে দেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা হল। এর মধ্যে একটা রাজনৈতিক সংকীর্ণতার আভাস রয়েছে।

শেষ মুহূর্তে বিভিন্ন দলকে ডেকে, বিভিন্ন রাজ্যের সরকারকে আশ্বস্ত করে, বিভিন্ন মহলকে অভয় দিয়ে একটা সর্বসম্মতির ছবি তৈরি করার চেষ্টা হল। কিন্তু সে প্রয়াসের উদ্দেশ্য নিয়েও অনেক প্রশ্ন থেকে গেল। সবাইকে সামিল করাই যদি লক্ষ্য ছিল, তা হলে এই সর্বসম্মতি গঠনের চেষ্টাটা আরও কিছু দিুন আগে থেকে হল না কেন? সদুত্তর নেই।

প্রশ্ন যতই থাক, জিএসটি-ই এখন বাস্তব। ধোঁয়াশা যতই থাক, দেশে জিএসটি-রাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। অতএব এই ব্যবস্থার সাফল্যই কাম্য এখন। নতুন বন্দোবস্তে রাষ্ট্রের আরও শ্রীবৃদ্ধি হবে, নাগরিকের জীবনে আরও সমৃদ্ধি আসবে— এমন আশাতেই বুক বাঁধতে হবে আপাতত।

GST GST Council Goods and Services Tax Narendra Modi Arun Jaitley Anjan Bandyopadhyay Newsletter অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় জিএসটি নরেন্দ্র মোদী
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy