Advertisement
E-Paper

রাজনীতি শুধুই ‘ভোট-নীতি’ নয়

লিঙ্গায়তদের ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘু’ তকমা দেওয়ার ইস্যুতে কংগ্রেস এবং বিজেপি যে ধরনের রাজনীতি করছে, তাকে শুধু দ্বিচারিতার রাজনীতি বললে পুরোটা বলা হয় না। এ আসলে অত্যন্ত স্থূল এবং মেধাহীন তথা নির্লজ্জ রাজনীতি।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৮ ০০:৩৬
লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ের দাবিকে সমর্থন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার।

লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ের দাবিকে সমর্থন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার।

এ কথা ঠিক যে গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে নির্বাচনী সাফল্যই সবচেয়ে কাঙ্খিত সাফল্য। কিন্তু নির্বাচনটাই কি সব? রাজনীতির চাকাটা কি প্রতিক্ষণে, প্রতি মুহূর্তে শুধু নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই ঘুরবে? মৌলিক নীতি বা আদর্শ বলে কি কিছুই থাকবে না? থাকবে কি শুধু ‘ভোট-নীতি’, যে নীতিকে স্থান, কাল, পাত্র, পরিস্থিতি এবং অবস্থান ভেদে সুবিধা মতো বদলে ফেলা যাবে?

কর্নাটক থেকে খুব জোরালো ভাবে উঠে এল প্রশ্নটা। লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়কে নিয়ে বেশ বেশরম টানাপড়েন চলছে কর্নাটকের দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের মধ্যে। কে বেশি হিতাকাঙ্খী লিঙ্গায়তদের— রাজ্যে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস, নাকি কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি? প্রশ্নটা যেন এ রকমই। আর উত্তরটাকে নিজেদের অনুকূলে রাখতে নীতিহীন ভাবে মরিয়া দুই দলই।

‘ধর্মীয় সংখ্যালঘু’ তকমা পাওয়ার দাবি লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ের একাংশ থেকে উঠে আসছে দশকের পর দশক ধরে। কংগ্রেস সরকার সেই দাবিকে সমর্থন জানিয়ে দিল। বিজেপি যথারীতি মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়ার এই নীতির সমালোচনায় প্রবল ভাবে সরব হল।

২০১৩ সালে কেন্দ্রের কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারই যে লিঙ্গায়তদের এই তকমা দিতে অস্বীকার করেছিল, তা কংগ্রেস সম্ভবত ভুলে গেল। অথবা কংগ্রেস ভাবল, জনসাধারণের স্মৃতি দুর্বল, তাই ২০১৩ সালে কী ঘটেছিল, তা আর কারও মনে নেই।

বিজেপি কর্নাটকের শাসক দল থাকাকালীন মুখ্যমন্ত্রিত্ব করেছেন যে বি এস ইয়েদুরাপ্পা, নেতৃত্বের সঙ্গে মতের অমিলে তিনি এক সময় দল ছেড়েছিলেন। সে সময়ে তিনি লিঙ্গায়তদের ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘু’ তকমা দেওয়ার পক্ষে জোরদার সওয়াল করেছিলেন। ইয়েদুরাপ্পা এখন আবার বিজেপিতে, সম্ভবত আসন্ন নির্বাচনে বিজেপি-র তরফে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীও। কিন্তু বিজেপি এখন লিঙ্গায়তদের ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘু’ তকমা দেওয়ার বিরোধী। কী বলবেন ইয়েদুরাপ্পা এ বার? লিঙ্গায়তদের যে দাবিকে সমর্থন করেছিলেন মাত্র কয়েক বছর আগেই, সেই দাবির উপর থেকে এ বার সমর্থন প্রত্যাহার করে নেবেন? নাকি তিনিও ভাববেন, জনসাধারণের স্মৃতি দুর্বল?

সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

লিঙ্গায়তদের ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘু’ তকমা দেওয়ার ইস্যুতে কংগ্রেস এবং বিজেপি যে ধরনের রাজনীতি করছে, তাকে শুধু দ্বিচারিতার রাজনীতি বললে পুরোটা বলা হয় না। এ আসলে অত্যন্ত স্থূল এবং মেধাহীন তথা নির্লজ্জ রাজনীতি।

পরিস্থিতি ভেদে কর্মপন্থা বা কৌশল বদলে যেতে পারে। কিন্তু মৌলিক নীতি বা বুনিয়াদি আদর্শটা বদলে যাবে কী ভাবে? কর্নাটকে লিঙ্গায়তদের নিয়ে কংগ্রেস-বিজেপি টানাপড়েনে তো আসলে তেমনটাই ঘটছে। ২০১৩ সালেও কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার জানিয়েছে, লিঙ্গায়তরা হিন্দু ধর্মের অন্তর্গত একটি সম্প্রদায়। মাত্র পাঁচ বছর কাটতে না কাটতেই সেই কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন কর্নাটক সরকারের কেন মনে হচ্ছে যে, লিঙ্গায়তরা হিন্দু নন? এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর কংগ্রেসের কাছে নেই। ইয়েদুরাপ্পারাও জবাব দিতে পারবেন না যে, কেন কয়েক বছর আগে লিঙ্গায়তদের অহিন্দু বলে মনে হয়েছিল? আর কেনই বা আজ মনে হচ্ছে যে, লিঙ্গায়তদের ‘সংখ্যালঘু’ তকমা দেওয়ার চেষ্টা আসলে হিন্দুদের মধ্যে বিভাজন ঘটানোর চক্রান্ত?

আরও পড়ুন: লিঙ্গায়ত-অঙ্কেই কর্নাটকে এ বার বেকায়দায় বিজেপি

এই দ্বিচারিতা আসলে শুধু কর্নাটকের ছবি নয়। প্রায় সব রাজ্যেই এই ছবি মেলে, জাতীয় রাজনীতিতেও ভীষণ ভাবেই মেলে। ক্ষমতাসীন থাকাকালীন জিএসটি কার্যকর করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি ছিল কংগ্রেসের কাছে। সে সময়ে বিরোধী আসনে থাকা বিজেপি জিএসটির ঘোর বিরোধী ছিল। ক্ষমতার অলিন্দে পটপরিবর্তন হতেই বিজেপির মনে হল, জিএসটি অবিলম্বে কার্যকর করার চেয়ে কাঙ্খিত পদক্ষেপ আর কিছু হতেই পারে না। কংগ্রেসের মনে হল, জিএসটি নিয়ে বড্ড তাড়াহুড়ো করেছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার। পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গেও এ ভাবেই অবস্থান বদল করতে অভ্যস্ত রাজনৈতিক দলগুলি। ভর্তুকি হ্রাস বা আর্থিক উদারীকরণের মতো পদক্ষেপের ক্ষেত্রেও ঠিক এইরকম দ্বিচারিতাই দেখা যায়। তালিকা এখানেই শেষ নয়, আরও অনেকটাই প্রলম্বিত বরং, জনসাধারণ তা জানেনও।

দ্বিচারিতা সত্ত্বেও ভোটতো মিলছে। তা হলে দ্বিচারিতায় সমস্যা কোথায়? প্রশ্ন তুলতেই পারেন কেউ। আবার বলি, প্রশ্নটা আসলে ভোট পাওয়া না পাওয়ার নয় শুধুমাত্র। রাজনীতির অর্থ শুধুই ভোট নয়। রাজনীতি মানে ভাবমূর্তিও, বিশ্বাসযোগ্যতাও, দেশ গঠনও, রাষ্ট্রচালনাও, পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ সাজিয়ে দেওয়াও। এই উপলব্ধি হারিয়ে যাচ্ছে ক্রমশ। দ্বিচারিতা, নীতিহীনতা বাড়ছে স্বাভাবিক ভাবেই। এ পথে হাঁটলে ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত নয়।

Newsletter Anjan Bandyopadhyay Narendra Modi Lingayat Karnataka Assembly elections 2018 Rahul Gandhi নরেন্দ্র মোদী রাহুল গাঁধী অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় Religious Partition Karnataka Siddaramaiah
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy