Advertisement
E-Paper

আকাশ ভাঙিয়া

ডাব্লু টি ওয়ান ওয়ান নাইনটি এফ। বিশাল ওই নাম যে বস্তুটির, তাহা আপাতত বিজ্ঞানীদের উদ্বেগের কারণ। উহা এক স্পেস জাঙ্ক, অর্থাৎ মহাশূন্যে আবর্তনশীল কৃত্রিম উপগ্রহের ভগ্নাংশ। এরূপ ভগ্নাংশ পৃথিবীগ্রহের চতুষ্পার্শ্বে বিস্তর রহিয়াছে।

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৫ ০০:২০

ডাব্লু টি ওয়ান ওয়ান নাইনটি এফ। বিশাল ওই নাম যে বস্তুটির, তাহা আপাতত বিজ্ঞানীদের উদ্বেগের কারণ। উহা এক স্পেস জাঙ্ক, অর্থাৎ মহাশূন্যে আবর্তনশীল কৃত্রিম উপগ্রহের ভগ্নাংশ। এরূপ ভগ্নাংশ পৃথিবীগ্রহের চতুষ্পার্শ্বে বিস্তর রহিয়াছে। মহাশূন্যে যে সব কৃত্রিম উপগ্রহ নানা কারণে প্রেরিত হয়, তাহারা অটুট থাকে না, প্রয়োজনে খণ্ড খণ্ড হইয়া যায় এবং খণ্ডগুলি পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করিতে থাকে। কার্যকাল শেষে খণ্ডাংশগুলি আবর্জনাস্বরূপ। উহারা অনন্তকাল মহাশূন্যে সন্তরণ করিতে পারে না। কতক বিচূর্ণ হয়, কতক বৃহৎ পিণ্ডরূপেই থাকিয়া যায়। উহাদের কক্ষপথের দূরত্বও অনন্তকাল এক থাকে না। হ্রাস পাইতে পাইতে মাধ্যাকর্ষণের টানে উহারা ভূপতিত হয়। ডাব্লু টি ওয়ান ওয়ান নাইনটি এফ ওইরূপ এক পিণ্ড, যাহা ১৩ নভেম্বর ওইরূপে পৃথিবীর বুকে নামিয়া আসিবে। বস্তুটি কোন কৃত্রিম উপগ্রহের কীরূপ অংশ, সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা এতাবৎ কাল পর্যন্ত সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হইতে পারেন নাই। কেবল বুঝা গিয়াছে, বস্তুটির ব্যাস ১-২ মিটার, এবং উহা বেশ হালকা। অর্থাৎ উহা প্রস্তরখণ্ড নহে, বরং কৃত্রিম উপগ্রহের অংশবিশেষ। উহা কয়েক দশকের পুরাতন, অ্যাপোলো যুগেরও হইতে পারে। উহা হইতে প্রতিফলিত সূর্যের ক্ষীণ আলো বিশ্লেষণে বস্তুটির চরিত্র নিরূপিত হইতে পারে। কাজটি সহজ নহে, সে কারণে ডাব্লু টি ওয়ান ওয়ান নাইনটি এফ আসলে কী, এখনও জানা যায় নাই।

আমেরিকায় আরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়স্থিত স্কাই সার্ভে প্রকল্প, যাহা পৃথিবীর নিকটস্থ চলমান গ্রহাণু কিংবা ধূমকেতুর সন্ধানে রত, তাহা অক্টোবর মাসে অকস্মাৎ ডাব্লু টি ওয়ান ওয়ান নাইনটি এফ শনাক্ত করিয়াছে। বস্তুটির কক্ষপথ তীব্র উপবৃত্তাকার। নিতান্ত চ্যাপ্টা ডিম্বাকৃতি। ফলত তাহা কখনও পৃথিবীর অতি নিকটস্থ, কখনও চন্দ্রের তুলনায় দ্বিগুণ দূরবর্তী। ওই কক্ষপথের গণনা হইতেই বিজ্ঞানীরা বুঝিতে সক্ষম হইয়াছেন কবে, কখন উহা শ্রীলঙ্কার ৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণে ভারত মহাসাগরে পতিত হইবে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশমাত্র বস্তুটির অনেকটা ঘর্ষণজাত তাপে পুড়িয়া ছাই হইবে। তবে, উহার কতটা তাপে দগ্ধ না হইয়া সাগরে পড়িবে, তাহা বলা যায় না। কিঞ্চিৎ ঠাট্টার্থে এক বিজ্ঞানী বলিয়াছেন, ১৩ নভেম্বর শ্রীলঙ্কার অদূরে নির্দিষ্ট এলাকায় মৎস্যশিকারে না যাওয়াই সমীচীন।

সম্ভাব্য ঘটনার অপেক্ষায় গবেষকেরা অধীর আগ্রহে প্রতীক্ষমাণ। ডাব্লু টি ওয়ান ওয়ান নাইনটি এফ কী অবস্থায় বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, অতঃপর কতকাংশ পুড়িয়া ছাই হয়, এবং কতটা ভারত মহাসাগরে নিমজ্জিত হয়, সেই সব অনুসন্ধান অতীব জরুরি। ইত্যাকার সন্ধানে ভবিষ্যতে ঘটনা (না কি দুর্ঘটনা?) সম্পর্কে গবেষকদের ধারণা শক্ত হইবে। উহাদের মোকাবিলায় কী কী ব্যবস্থা আবশ্যক, তৎসম্পর্কেও জ্ঞান বাড়িবে। কিন্তু ওইরূপ জ্ঞানার্জন সম্পর্কে সামগ্রিক উদ্যোগের বড় অভাব। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ও সেনাবাহিনী ডাব্লু টি ওয়ান ওয়ান নাইনটি এফ সম্পর্কে গবেষণায় আর্থিক সাহায্য দেয় নাই। এই ঔদাসীন্যের কারণ ব্যাখ্যা করা হয় নাই, তবুও অনুমান করা চলে, পৃথিবীর দিকে ধাবমান বস্তুটির ক্ষুদ্রাকৃতি এ ক্ষেত্রে কারণ হইতে পারে। অবজ্ঞার মূলে যাহাই থাকুক, তাহা বিধেয় নহে। ক্ষুদ্রাকৃতি স্পেস জাঙ্কের পতন হইতে আহৃত জ্ঞান অপাঙ্‌ক্তেয় নহে। কম্পিউটর বিজ্ঞানের দৌলতে ক্ষুদ্র বিপদের গণনাও বৃহৎ দুর্ঘটনা সম্পর্কে ধারণা রচনা করিতে পারে।

impact wtii90f earth editorial
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy