Advertisement
E-Paper

সত্যান্বেষণ

বিশেষণের এই উদভ্রান্ত প্রয়োগের পিছনে হেতু অনুমানে অসুবিধা নাই। সামনে গুজরাত বিধানসভা ভোট, ২০১৯ সালও আসিয়া পড়িল বলিয়া।

শেষ আপডেট: ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭ ০০:০৪

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বলিয়াছেন, ‘ঐতিহাসিক’ জয়। প্রচারমাধ্যমের এক বড় অংশও তাহাই বলিতেছে। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে সে রাজ্যে অনুষ্ঠিত পুরনির্বাচন ও পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিজেদের ফল লইয়া বিজেপি উচ্ছ্বসিত। যোগী আদিত্যনাথ রীতিমাফিক কৃতজ্ঞতা জানাইয়াছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহর উদ্দেশ্যে। তাঁহাদের আশীর্বাদ ও সহায়তা ভিন্ন এই ‘বিপুল’ জয় সম্ভব হইত না, এই ধন্য-বার্তাসহ। ঘটনা হইল, এই ভোটে বিজেপির প্রচার সত্যই হাই-ভোল্টেজ ছিল, অমিত শাহ অভ্যাস মতো পরিশ্রম করিয়াছেন, মুখ্যমন্ত্রীকেও রাজ্যের এ প্রান্ত হইতে ও প্রান্ত চষিয়া ফেলিয়াছেন। বিপরীতে সমাজবাদী পার্টি ও বহুজনসমাজ পার্টিকে কিন্তু অতখানি শ্রম করিতে দেখা যায়নি। অর্থাৎ বিষয়টি বিজেপির কাছে ভারী গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেই প্রেক্ষিতে যদি নিরপেক্ষ ভাবে ফলাফল বিচার করিতে বসা যায়, বিস্ময়ের সহিত দেখিতে হইবে, ঐতিহাসিকতার দাবি আর বাস্তব পরিস্থিতির মধ্যে ফারাকটি কিন্তু বড়সড়। বিভিন্ন শহরের মেয়র পদে বিজেপি বিরাট সাফল্য পাইয়াছে। কিন্তু বাকি অংশে তাহাদের প্রাপ্তি বেশ কম। অনেক ক্ষেত্রে অপ্রত্যাশিত রকমের কম। নগর পঞ্চায়েত সদস্যদের মধ্যে বিজেপির জিত মাত্র ১১ শতাংশ, নগর পঞ্চায়েত চেয়ারম্যানদের মধ্যে ২০ শতাংশেরও কম, নগরপালিকা পরিষদ সদস্যদের মধ্যে ১৭ শতাংশ, নগর নিগম সদস্যদের মধ্যে ২৭ শতাংশ। সব স্তর মিলাইয়া সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি (প্রায় অর্ধাংশ) বিজেপি প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হইয়াছে। এই ফলে যোগী আদিত্যনাথরা খুশি হইতে পারেন, বলার কিছু নাই। কিন্তু ইহাকে ‘বিপুল’ কিংবা ‘ঐতিহাসিক’ জয় বলিলে পোস্ট-ট্রুথ যুগেও অপরাধ ঘটিবে।

বিশেষণের এই উদভ্রান্ত প্রয়োগের পিছনে হেতু অনুমানে অসুবিধা নাই। সামনে গুজরাত বিধানসভা ভোট, ২০১৯ সালও আসিয়া পড়িল বলিয়া। দলের মনোবল তুঙ্গে রাখিতে হইবে। সামাজিক প্রচারেও এক ইঞ্চি জমি ছাড়া যাইবে না। কিন্তু বিজেপির সংকীর্ণ দলীয় উদ্দেশ্যের বাহিরে সত্যের খোঁজ করাটাও জরুরি বইকি। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠিবে, বিজেপি তত ভাল না করিয়া থাকিলে করিল কে? না, অখিলেশ যাদব কিংবা মায়াবতী নহেন। সমাজবাদী পার্টি ভাল ফল করে নাই। বিএসপি অবশ্য গত বিধানসভার তুলনায় নিজের অবস্থান খানিক উন্নত করিয়াছে। বিরাট সফল নির্দল প্রার্থীরা। এই তথ্য বিজেপির পক্ষে যেমন অস্বস্তিকর, বিরোধী সমাজবাদী পার্টির পক্ষেও তেমনই।

সংখ্যার পিছনে সমাজের যে গতিপ্রকৃতি, তাহা কী বলিতেছে? বিজেপির বিরোধিতার একটি বড় কারণ নিশ্চয়ই নোটবন্দি। নগরাঞ্চলের তুলনায় ছোট শহর ও গ্রামাঞ্চলে বিজেপির ক্ষতির পরিমাণ বেশি। ছোট ব্যবসা এই নীতির ফলে মার খাইয়াছে, তাহার রেশ এই সব স্তরেই বেশি বুঝিবার কথা। তাহা ছাড়া গোটা দেশেই বিজেপির কাজকর্মের মধ্যে শহর-নগরের প্রতি স্পষ্ট জোর দেখা যায়, গ্রামীণ অর্থনীতি বা সমাজ, দুইয়ের সঙ্গেই সরকার ও দলের সম্পর্ক যথেষ্ট দুর্বল। উত্তরপ্রদেশ ফলাফল এ সব ভাবনার সূত্র দেয়। কিন্তু ভাবিবে কে? যাহারা সত্যকে কোনওমতে চাপাচুপি দিয়া রাখিতে ব্যস্ত, তাহারা এ সব ভাবনা ভাবিবেই বা কেন?

BJP Rural Areas Yogi Adityanath Uttar Pradesh
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy