দেশের মাটিতে পা রাখলেন উইং কম্যান্ডার অভিনন্দন বর্তমান।—ছবি পিটিআই।
স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল গোটা দেশ। ফিরলেন অভিনন্দন, পারস্পরিক অভিনন্দনে আপ্লুত হল ভারতবাসী। এই মুহূর্তটার প্রতীক্ষাতেই অধীর হয়ে ছিল সমগ্র ভারত। প্রায় ৬০ ঘণ্টা পাকিস্তানের কব্জায় কাটিয়ে ভারতীয় বায়ুসেনার উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানের ঘরে ফেরা সত্যিই এক অন্য মুহূর্ত গোটা জাতির জন্য। এই মুহূর্তটা, এই সন্ধিক্ষণটা হয়ে উঠুক একটা তাৎপর্যপূর্ণ মাইলফলক। সম্পর্কের মোড় ঘুরে যাক এই মাইলফলক থেকেই। প্রার্থনাটা সীমান্তের দু’পারেই এরকম হওয়া উচিত আজ।
ভারতীয় বায়ুসেনার পাইলট পাকিস্তানে আটকে পড়ার পর থেকেই অস্বস্তি আর উৎকণ্ঠার প্রহর যাপন করছিলেন ভারতীয় নাগরিকরা। ভারত সরকার অবশ্য শুরু থেকেই অত্যন্ত দৃঢ় অবস্থান বহাল রেখেছিল। উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে নিঃশর্তে এবং অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে বলে পাকিস্তানকে দ্ব্যর্থহীন বার্তা দেওয়া হয়েছিল। ভারতের অনমনীয় অবস্থান এবং ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবারই ঘোষণা করেন যে, ভারতীয় পাইলটকে মুক্তি দেওয়া হবে। ইমরান খানের এই ঘোষণার পর থেকেই উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছিল ভারতের নানা প্রান্তে। আর ‘শান্তির বার্তা’ দিতেই অভিনন্দনকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে যে বিবৃতি ইমরান খান পাক সংসদে দিয়েছিলেন, সেই বিবৃতির জন্য নিজের দেশে উচ্ছ্বসিত প্রশংসা পাচ্ছিলেন তিনি। কাঙ্খিত মুহূর্তটা অবশ্য প্রত্যাশার চেয়ে একটু বিলম্বেই এল। শুক্রবার দুপুরে ভারতের মাটিতে পা রাখার কথা ছিল অভিনন্দনের। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা, সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত— তার পরে উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান পা রাখতে পারলেন অটারী সীমান্তের লৌহদ্বারের এ প্রান্তে। উৎকণ্ঠার অবসান আর পুনর্মিলনের আবেগ মিলে গেল এক বিন্দুতে। গোটা দেশ যেন অভিন্ন আত্মা হয়ে উঠে অভিবাদন জানাল এই বিরল সন্ধিক্ষণকে।
শুভবুদ্ধির উদয় হোক, শুভ বুদ্ধির জয় হোক, শুভ বুদ্ধি আবহমান হোক— এই প্রার্থনা বাণী আগেও উচ্চারণ করেছি। আজ ফের উচ্চারণ করছি। দুই পড়শির মাঝে মাথাচাড়া দেওয়া হিমালয় প্রমাণ তুষার প্রাচীরটাকে দুর্লঙ্ঘ্য বলে মনে হচ্ছিল সময়ের যে বিন্দুতে পৌঁছে, তার পরের বিন্দুতেই অভিনন্দনের প্রত্যর্পন অপেক্ষায় ছিল। সেই প্রত্যর্পন যেন একটা দুয়ার খুলে দিল ওই আপাত দুর্লঙ্ঘ্য প্রাচীরটাকে ভেদ করে। এই দরজাটা সযত্নে রক্ষা করতে হবে আমাদের। দায়িত্ব নিতে হবে সীমান্তের দুই প্রান্তকেই।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
ভারত-পাক উত্তেজনা যে সম্পূর্ণ প্রশমিত হয়ে গিয়েছে, এমন নয়। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দশকের পর দশক ধরে ভারতের মূল অভিযোগ যা নিয়ে, সেই সন্ত্রাস কিন্তু অভিনন্দনের আদান-প্রদানের তারিখেও রক্তাক্ত করেছে আমাদের। জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হানায় শুক্রবার ফের নিরাপত্তা তথা আইনশৃঙ্খলার বাহিনীর চার সদস্য-সহ পাঁচ ভারতীয়ের প্রাণ নিয়েছে। পুলওয়ামা কাণ্ড এবং তার ফলাফল প্রায় গোটা বিশ্বকে তোলপাড় করে দিচ্ছে যখন, তখনও সীমান্তের ওপার থেকে ভারতে সন্ত্রাসের রফতানি বহাল থাকবে, এই ছবি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের তথা পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্বের মনে স্বদিচ্ছা রয়েছে বলেই আমরা ধরে নিচ্ছি। অভিনন্দন বর্তমানের প্রত্যর্পনের সিদ্ধান্তকে সেই স্বদিচ্ছার প্রতীক হিসাবেই দেখতে চইছি। একইরকম সংবেদনশীলতা এবং দায়িত্ববোধ কিন্তু পাকিস্তানকেও দেখাতে হবে। পাকিস্তানের মাটিকে কাজে লাগিয়ে আর রক্তাক্ত করতে দেওয়া হবে না ভারতকে— এটুকু নিশ্চিত করার দায়িত্ব ইমরান খানকে তথা পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃত্বকে নিতেই হবে।
আরও পড়ুন: অপেক্ষার অবসান! ভারতের মাটিতে পা রাখলেন মুক্ত অভিনন্দন
একেবারে তলানিতে পৌঁছে গিয়েও আবার ফিরে এসেছে ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্পন্দনটা। অভিনন্দন পর্বই তার অনুঘটক। এই মাইল ফলকটাকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ইতিহাসে উজ্জ্বল করে তোলার জন্য সবরকম চেষ্টা দু’তরফ থেকেই হবে— এমনটাই কাম্য। বারবার রক্তাক্ত হয়েও ইতিবাচকতায় আস্থা রাখতে চাইছে ভারতবাসী। পাকিস্তানের আম নাগরিকও তেমনটাই চান নিশ্চয়ই। অতএব সন্ত্রাস যেন তাণ্ডব চালাতে না পারে এই শান্তিবনের অঙ্কুর-ভূমিতে— এটুকু ইমরান খানদের নিশ্চিত করতেই হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy