Advertisement
E-Paper

ইতিহাসেরও ‘পাহারাদার’ জুটেছে, ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত তো?

ইতিহাস নিজের গতিতে চলে, নিজের প্রবাহকে নিজেই নিয়ন্ত্রণ করে, নিজের দুর্গ নিজেই ভাঙে, আবার নিজেই গড়ে। তেমনটাই জানা ছিল এত দিন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ইতিহাস মোটেই একা নয়, তাকে পাহারা দেওয়ার জন্যও লোক-লস্কর রয়েছে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:৫৩
আঙুল উঁচিয়ে। করণী সেনার নেতা লোকেন্দ্র কালভির সাংবাদিক সম্মেলন। ছবি: পিটিআই।

আঙুল উঁচিয়ে। করণী সেনার নেতা লোকেন্দ্র কালভির সাংবাদিক সম্মেলন। ছবি: পিটিআই।

ইতিহাস নিজের গতিতে চলে, নিজের প্রবাহকে নিজেই নিয়ন্ত্রণ করে, নিজের দুর্গ নিজেই ভাঙে, আবার নিজেই গড়ে। তেমনটাই জানা ছিল এত দিন। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ইতিহাস মোটেই একা নয়, তাকে পাহারা দেওয়ার জন্যও লোক-লস্কর রয়েছে।

অনেকেরই জানা ছিল না বোধ হয় বিষয়টা। জানা ছিল না সঞ্জয় লীলা ভংসালীরও। এখন অবশ্য আসমুদ্রহিমাচলই জেনে গিয়েছে। ‘পদ্মাবতী’ ছবি তৈরির কাজে রাজস্থানে গিয়ে যে চপেটাঘাত ভংসালী খেলেন, তার প্রতিধ্বনি আসলে গোটা ভারতে শোনা গিয়েছে। এই চড় শুধু ভংসালীর গালে পড়েনি। গোটা ভারতের গালেই চড়টা পড়েছে।

স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে পাহারাদার বা পুলিশ হয়ে ওঠার ঝোঁক আমাদের মধ্যে চির কালই প্রবল। কখনও আমরা নীতি পুলিশ হয়ে উঠি, কখনও সাংস্কৃতিক পুলিশ রূপে দেখা দিই, কখনও ধর্ম পুলিশের ভূমিকায় অবতীর্ণ হই, কখনও দেশপ্রেম পুলিশে নাম লেখাই। ভ্যালেন্টাইন’স ডে-তে প্রেম দেখলেই আমরা রেগে যাই। থিয়েটার বা চিত্র প্রদর্শনীর বিষয়বস্তু অপছন্দ হলে প্রদর্শন বন্ধ করে দিই বা ভাঙচুর চালাই। যে লেখক বা লেখিকার কলমটা আমাদের অপছন্দের, ধর্মীয় ভাবাবেগের দোহাই দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আদায় করে নিই। দুই রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হলে, শিল্পীদের উপর আঘাত হানি। স্বঘোষিত পুলিশ বা পাহারাদার হয়ে ওঠার আরও একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে এখন আমাদের সামনে উঠে আসছে ইতিহাস। সুতরাং সাবধান, ইতিহাসকে কেউ ‘বিকৃত’ করার চেষ্টা করলে ফল কিন্তু মারাত্মক হবে। চলচ্চিত্রকার সঞ্জয় লীলা ভংসালী ‘পদ্মাবতী’ ছবির সেটে সেটা টের পেয়ে গিয়েছেন।

কোনও ছবিতে ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে হট্টগোল এই প্রথম নয় ভারতে। প্রথম নয় পৃথিবীতেও। বিরোধিতা বা মতান্তর দেখা দিতেই পারে। দেখা না দেওয়াই অস্বাভাবিক। কিন্তু বিরোধিতার অর্থ কি বলপ্রয়োগ করে নিজের মত মেনে নিতে অন্যকে বাধ্য করা? রাজপুত করণী সেনা তাই করতে চেয়েছে।

সঞ্জয় লীলা ভংসালী নিজের ছবিতে ইতিহাসকে বিকৃত করেছেন কি না, তা নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে। প্রতিবাদও হতেই পারে। কিন্তু কোন মূল্যবোধ, কোন গণতান্ত্রিকতার ধারণা এবং কোন স্বাধীনতার চেতনা থেকে চলচ্চিত্রকারকে এ ভাবে শারীরিক হেনস্থার মুখে ফেলা যায়, তা বোধের পরিসরে আসছে না।

অসহিষ্ণুতার অন্যতর একটি রূপ আসলে এই চপেটাঘাত। ঘৃণার কারবারিদের মরিয়া আস্ফালনের প্রকাশ এই চপেটাঘাত।

ইতিহাসকে ‘অবিকৃত’ রাখার স্বার্থে ভংসালীর উপর আক্রমণ, বলছেন ‘পাহারাদার’রা। এই আক্রমণের ‘সুবাদে’ ইতিহাস কতটা ‘অবিকৃত’ থাকবে, নিশ্চিত নই। তবে এই ‘পাহারাদার’দের উপর পাহারা বসানো না হলে, কোনও এক অনাগত ভবিষ্যতে পৌঁছে ভারতের ইতিহাসকে যে বিকৃত খাতে বইতে দেখা যাবে, তা সুনিশ্চিত ভাবে বলে দেওয়া যায়।

Sanjay Leela Bhansali Padmavati Karni Sena Anjan Bandyopadhyay News Letter
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy