ভেঙে পড়া উড়ালপুল।—নিজস্ব চিত্র।
ভাগ্য এত ভাল নাও হতে পারত। স্তম্ভের মাথা থেকে আচমকা যখন ভেঙে এল উড়ালপুল, তখন শুনসান রাত। দিনের ব্যস্ত সময়েও কিন্তু বিপদটা নেমে আসতে পারত, বস্তুত দুর্ঘটনাটা আর কয়েক ঘণ্টা এগিয়ে বা পিছিয়ে ঘটলে তেমনই হত। আমরা আবার বিপুল প্রাণহানি আর রক্তাক্ত বিপর্যয়ের মুখে পড়তাম।
কলকাতা থেকে মগরা— কয়েক মাসের ব্যবধানে দু’বার ভেঙে পড়ল নির্মীয়মাণ উড়ালপুল। কলকাতা যে পরিস্থিতির শিকার হয়েছিল, মগরাকে তার সম্মুখীন হতে হয়নি। কিন্তু প্রাণহানি নেই বলে মগরার ঘটনা কম গুরুতর, এমন নয় একেবারেই। অন্যতর অর্থে মগরা আরও গুরুতর বরং। কারণ মগরা প্রমাণ করল কলকাতার সেই ভয়াল বিপর্যয় দেখার পরও আমরা উপযুক্ত মাত্রায় সতর্ক হতে পারিনি।
প্রকৃত পক্ষে, দু’বারও নয়, অন্তত তিন বার কিন্তু আমরা উড়ালপুল ভেঙে পড়ার সাক্ষী হলাম। প্রথম বার উল্টোডাঙায়। সেটি নির্মীয়মাণ ছিল না। উদ্বোধনের পর অনেক দিন সে উড়ালপুল দিয়ে যান চলাচলও হয়েছিল। তার পর এক দিন যান সহ আচমকা খসে পড়েছিল নীচে। সে ঘটনা যে উড়ালপুলের নিরাপত্তা সম্পর্কে আমাদের খুব বেশি ভাবিয়ে তুলতে পারেনি, ৩১ মার্চের গণেশ টকিজ মোড় তা প্রমাণ করে দিয়েছিল করাল দুর্ঘটনায়। তার পরেও মগরায় এমন ঘটতে পারে কী ভাবে এবং কোন অজুহাতে?
অপরাধ সর্বদাই দণ্ডনীয়। প্রথম অপরাধ কিয়দংশে ক্ষমার যোগ্য হয় কখনও কখনও, ভুল শোধরানোর পথটা খুলে রাখা হয়। দ্বিতীয় বারও একই অপরাধ ঘটলে তাকে আর ভুল হিসেবে ধরা হয় না, দণ্ডও কঠোর হয়। আর তার পরও যদি ঘটে? তা হলে অপরাধপ্রবণ হিসেবে ধরা হয়। বিপুল ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে জেনেও উড়ালপুলের নিরাপত্তার ফাঁক ভরাট করতে আমরা যে ভাবে বার বার ব্যর্থ হচ্ছি, সে ব্যর্থতাকে এখনও ভুল বা ত্রুটি বলে সম্বোধন করলে, বিষয়টিকে বড়ই লঘু করে দেখা হয়। সংশ্লিষ্ট মহলকে এখন অপরাধপ্রবণ আখ্যা দিলেও আর তেমন অপরাধ হয় না।
কোনও কঠোর পদক্ষেপ কি নেবেন রাজ্য প্রশাসনের অভিভাবক? নাকি উড়ালপুল সংক্রান্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত মহলে কর্তব্যে মারণ অবহেলার পরম্পরা অক্ষুণ্ণ থাকবে? জবাবের অপেক্ষায় বাংলা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy