Advertisement
E-Paper

আশীর্বাদটা যদি অভিশাপে বদলে যায়, দায় কিন্তু আমাদেরই হবে

সেই চিরচেনা, বহুশ্রুত এবং অবধারিত প্রশ্নটা আজ আবার বৃহদাকারে সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে— আশীর্বাদ, না অভিশাপ? ইতিহাসের প্রত্যেকটা মোড়ে, প্রতিটা বাঁকে পৌঁছে সভ্যতা এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৪:০৮

সেই চিরচেনা, বহুশ্রুত এবং অবধারিত প্রশ্নটা আজ আবার বৃহদাকারে সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে— আশীর্বাদ, না অভিশাপ?

ইতিহাসের প্রত্যেকটা মোড়ে, প্রতিটা বাঁকে পৌঁছে সভ্যতা এই প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। কখনও বৈজ্ঞানিক অগ্রগতির প্রেক্ষিতে এই প্রশ্ন উঠেছে, কখনও সামাজিক অগ্রগতি এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে বাধ্য হয়েছে, কখনও অন্যতর কোনও উন্মেষ এই প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কোনও ইতিবাচক উন্মেষকেই এই প্রশ্নের সামনে হার মানতে হয়নি। এ বার কি হবে?

প্রশ্নটা এ বার উঠেছে সামাজিক মাধ্যম বা সোশ্যাল মিডিয়াকে ঘিরে। সভ্যতার সড়কে সোশ্যাল মিডিয়ার আবির্ভাব যে এক খুব বড় মাইলফলক, সে নিয়ে কোনও সংশয় নেই। এই মাইলফলকে আবার বিজ্ঞান এবং সমাজের সমান অংশীদারিত্ব। সোশ্যাল মিডিয়া যে অবশ্যই একটি ইতিবাচক উন্মেষ, সে নিয়েও বিন্দুমাত্র সংশয় নেই। অতুল, অনন্ত সম্ভাবনার নিহিতি সোশ্যাল মিডিয়ার গর্ভে, নিয়ত নতুন নতুন দিগন্ত খুলছে সোশ্যাল মিডিয়ার রাজত্বে। কিন্তু এই উন্মেষটাকে আমরা শেষ পর্যন্ত ইতিবাচকই রাখতে পারব তো? প্রশ্ন এখন তা নিয়েই।

সোশ্যাল মিডিয়া বেয়ে খবর এল, জনপ্রিয় অভিনেত্রী ফরিদা জালাল আর নেই। দাবানলের চেয়েও দ্রুত ছড়াল দুঃসংবাদ। পোস্ট, শেয়ার, টুইট, রিটুইট, শোকবার্তার বান ডাকল নিমেষে। অবশেষে ফরিদা জালালই আসরে নেমে জানালেন, তিনি সুস্থ, সবল, অক্ষত। বিরক্তিও প্রকাশ করলেন।

ফরিদা জালালই এই প্রবণতার প্রথম শিকার নন। কখনও অমিতাভ বচ্চন, কখনও লতা মঙ্গেশকর, কখনও অন্য কেউ— ভুয়ো মৃত্যুসংবাদের রটনা অনেককে নিয়েই হয়েছে। সে সব এত দ্রুত ছড়িয়েছে যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কিছু টের পাওয়ার আগেই অনেক কিছু ঘটে গিয়েছে। বিপদটা কিন্তু এখানেই। ফরিদা জালাল বা অমিতাভ বচ্চন বা লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুসংবাদে হয়তো কোনও ক্ষতি হয়নি। সুপ্রাচীন প্রবাদে বিশ্বাস রেখে আমরা না হয় এ-ও ধরে নিচ্ছি যে ভুয়ো মৃত্যুসংবাদে আয়ু বৃদ্ধি হয়েছে এঁদের। কিন্তু আরও অনেক বিষয়বস্তু সোশ্যাল মিডিয়া বেয়ে মাঝেমধ্যেই দাবানলের মতো ছড়ায়, যাতে আয়ু বৃদ্ধি নয়, বহু মানুষের আয়ু ক্ষয় হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

সাম্প্রদায়িক গুজব, উগ্র জাতীয়তাবাদী মিথ্যাচার, সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক জল্পনা, গণ-আতঙ্ক সৃষ্টির মতো কোনও খবর— এ সবও কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় আজকাল অত্যন্ত বিপজ্জনক ভাবে বাড়ছে। এই ভয়ঙ্কর প্রবণতা কিন্তু বিপর্যয় নামাতে পারে যখন তখন। ছাঁকনিটা তাই খুব দরকার এই মুহূর্তে। সোশ্যাল মিডিয়ার নিজস্ব কোনও ছাঁকনি এখনও নেই, যা ভুয়ো খবরকে চিনে নিতে পারে। তাই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদেরই সতর্ক হতে হবে। কোনটায় বিশ্বাস করব, আর কোনটাকে ছেঁকে নেব, তা চিনে নেওয়ার মতো চোখ তৈরি করতে হবে। প্রত্যেককেই অনেক বেশি দায়িত্বশীল হতে হবে।

মনে রাখতে হবে, সোশ্যাল মিডিয়ার উন্মেষ আমাদেরই হাত ধরে। আজ তাকে ঘিরে যে সব প্রশ্নচিহ্নের উল্লাস, সোশ্যাল মিডিয়া যদি সেগুলিকে উত্তীর্ণ হয়ে যেতে না পারে, তা হলে দায় কিন্তু আমাদের উপরেই আসবে। ইতিবাচক উন্মেষটা শেষ পর্যন্ত আশীর্বাদ আখ্যা পাবে, নাকি অভিশাপে পর্যবসিত হবে, তা নির্ধারণ করে দেবে আমাদের ক্রিয়াকলাপই।

Anjan Bandyopadhyay Newsletter
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy