রাজার গায়ে কাপড়টুকু নেই, প্রান্তিক মানুষ যে এই সারসত্যটি বলেননি, এমনটা নয়। কিন্তু রাজনৈতিক মহাকোলাহলে, বিজয়ের সশব্দ উল্লাসে সেই ক্ষীণ কণ্ঠ চাপা পড়েই এসেছে এ যাবৎ। এ বার দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি বললেন। একই কথা বললেন। এবং সপাটে বললেন। ভোটের আগের ইস্তাহারকে রাজনৈতিক দলগুলো মামুলি কাগজের টুকরো বানিয়ে ছেড়েছে।
এমনটা নয়, নতুন কোনও কথা বললেন প্রধান বিচারপতি। এই দেশের ভোটার মাত্রেই জানেন, ভোট মানেই করজোড়ে নেতাদের আনাগোনা, প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি, ইস্তাহারের ঠোকাঠুকি এবং সব শেষে ভোট অন্তে যথা পূর্বং তথা পরং পরিস্থিতি। প্রতিশ্রুতি শিকেয়, নেতারা অদৃশ্য এবং মানুষের জীবনযাপন পরিবর্তনহীন। এ নিয়ে অজস্র রসিকতা, সহস্রাধিক কার্টুন, সোশ্যাল মিডিয়ায় লক্ষাধিক পোস্ট ইত্যাদি হয়ে গিয়েছে। তার পরেও চালচিত্রে বড় পরিবর্তন হয়েছে, রাজনীতির কারবারিদের অতি বড় অনুরাগীও এমনটা বলতে পারবেন না।
এই রকম একটা সময়ে, কখনও কখনও বড় ঝঙ্কারের প্রয়োজন পড়ে। প্রান্তিক জীবনের সার উপলব্ধিটাকে উচ্চকিত ঘোষণায় পরিবেশনার দরকার পড়ে। দরকার পড়ে একটা ঝাঁকুনির। সেই ঝাঁকুনিটা দিতে চাইলেন প্রধান বিচারপতি। রাজনৈতিক দলের দায়বদ্ধতার প্রশ্নটাকে মনে করিয়ে দিতে চাইলেন।
রাজনৈতিক দলগুলো এই ঝাঁকুনিটা উপলব্ধি করবে কি না, সেটা ভবিষ্যৎ বলবে। তবু রাষ্ট্রেরই উচ্চ অবস্থান থেকে এই স্বর যখন উঠে আসে, তখন বোঝা দরকার, বড় একটা অন্যায় হয়ে যাচ্ছে কোথাও। দায়বদ্ধতার অঙ্গবস্ত্রটি যে বিলীন হতে যাচ্ছে, অন্তত মলিন হয়ে পড়েছে বেশ, এই সত্যটির বারংবার ঘোষণা দলগুলোকে সচেতন ও সতর্ক করতে বাধ্য। প্রধান বিচারপতি অতএব যথাযথ এবং সময়োচিত দায়িত্ব পালন করেছেন।
বল এখন রাজনীতিকদের কোর্টে। তাঁরা যেন এ কথা মাথায় রাখেন, গ্যালারিতে যাঁরা বসে রয়েছেন, এই দেশের মানুষ, তাঁরা ক্ষীণস্বর হতে পারেন কখনও, কিন্তু নীরব নন। এই মাঠে প্রবেশের চাবিকাঠি তাঁদেরই হাতে। সাধু সাবধান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy