Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Karnataka

আর কত নীচে

শিশুদের সহিত যে আচরণ প্রশাসন করিয়াছে, উহার নজির অধিক নাই, থাকিলে সভ্যতার লজ্জা।

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০২
Share: Save:

গোড়ায় কর্নাটকের এক বিদ্যালয় দেশদ্রোহী সাব্যস্ত হইল। গ্রেফতার হইলেন সেখানকার প্রধান শিক্ষক এবং এক অভিভাবক। অবশেষে নিষ্কৃতি পাইল না পড়ুয়ারাও। চার-পাঁচ দিন ধরিয়া তাহাদের জেরা করিল পুলিশ। অভিযোগ, সেখানে এমন একটি নাটক মঞ্চস্থ হইয়াছে, যেখানে সিএএ এবং এনআরসি-র সূত্রে প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করিবার প্রচেষ্টা দেখা গিয়াছে। শিল্পের স্বাধীনতায় বাধা সৃষ্টি করা যায় কি না, দেশদ্রোহ কাহাকে বলে ইত্যাদি প্রশ্নগুলি দ্বিতীয় বা তৃতীয় পঙ্‌ক্তিতে চলিয়া আসিবে, ঘটনাক্রমের ভয়াবহতা এমনই উঁচু তারে বাঁধা। শিশুদের সহিত যে আচরণ প্রশাসন করিয়াছে, উহার নজির অধিক নাই, থাকিলে সভ্যতার লজ্জা। এবং, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে বিশেষ ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করিতে তৎপর প্রশাসন যে ন্যক্কারজনক উপায়ে শিশুদের হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করিল, তাহা আক্ষরিক অর্থেই অভাবনীয়। সাম্প্রতিক ধর্ম-রাজনীতির পাটিগণিত বুঝিতে অসুবিধা নাই, কিন্তু তাহার পরও নৈতিকতার সীমা লঙ্ঘনের এই রাষ্ট্রীয় স্পর্ধা দুঃসহ।

আইন ও বিচারের চোখে নাবালকদের পৃথক ভাবে গণ্য করিবার বিষয়টি লইয়া তর্কবিতর্ক কম নাই। ২০১৫ সালে মোদী সরকারের আমলে যখন জুভেনাইল জাস্টিস আইন পাশ হইয়াছিল, তখন কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর বলিয়াছিলেন, আইনটি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের বিরোধী, এবং অধিকাংশ আইনভঙ্গকারী শিশুই দরিদ্র ও অশিক্ষিত পরিবার হইতে আসে, তাহাদের শাস্তির পরিবর্তে সুশিক্ষা প্রয়োজন। এই আইন অনুসারে বিশেষ কার্যক্ষেত্রে ষোড়শ হইতে অষ্টাদশ বর্ষীয় বালককে সাবালক বলিয়াও গণ্য করা যাইতে পারে। যাহারা সাবালকই হয় নাই, তাহাদের এই ভাবে অভিভাবকের অনুমতিনিরপেক্ষ পুলিশি জেরা করা যায় কি? আর নাবালকত্বকে বর্ম হিসাবে ব্যবহার করিয়া রাজনীতির কথা যদি উঠে, তবে তো স্কুল কর্তৃপক্ষকে দায়ী করিতে হয়। এক দিকে নাবালকত্বকে বর্ম করিয়া রাজনীতি করিতেছে বিজেপি— ৩০ জানুয়ারি দিল্লির রাজপথে যে ছেলেটি বন্দুক লইয়া জামিয়া মিলিয়ার ছাত্রছাত্রীদের সম্মুখসমরে আহ্বান জানাইল, তাহাকে নাবালক প্রমাণ করিতে তৎপর শাসক দল-ঘনিষ্ঠেরা। অন্য দিকে, নাবালকদের উপর নামিয়া আসিতেছে প্রশাসনের খড়্গ।

শিশুদের অধিকার লইয়া রাষ্ট্রপুঞ্জের চুক্তির অংশীদার ভারত। সেই অনুসারে শিশুদের অধিকার সর্বাগ্রে গণ্য করিতে ভারত বাধ্য তো বটেই, নাবালকদের পৃথক ভাবে বিচার করাও বিধেয়। ইতিপূর্বে সিএএ-এনআরসি-এনপিআর বিরোধী সকল প্রকার মতের প্রকাশকে দমন করিবার চেষ্টা হইয়াছে। কখনও অতিসক্রিয় হইয়াছে প্রশাসন, কখনও শাসক দলের বাহুবলীরাই সেই দায়িত্ব সামলাইয়াছে। রাজপথ হইতে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর তাহার সাক্ষী। কিন্তু বিদ্যালয় প্রাঙ্গণেও যে সেই রক্তচক্ষু ঝলসাইয়া উঠিবে, প্রাথমিক বা মাধ্যমিক স্তরের শিশু-কিশোরেরাও রাজরোষ হইতে মুক্তি পাইবে না, ইহা ভাবিয়া ফেলা দুরূহ। বিরোধিতা কাহারও অপছন্দ হইতেই পারে, স্কুল কর্তৃপক্ষ বা অভিভাবকদের উপর শাসকের রোষ দেখা দিলেও তত বিস্ময়ের কিছু নাই— তাহা ন্যায্য কি না পৃথক ভাবে স্থির করা যাইবে। কিন্তু স্বার্থ চরিতার্থ করিতে স্কুলের শিশুদের ব্যবহার করা যায় না। তাহা আইনের পরিপন্থী। চূড়ান্ত অন্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Seidtion Karnataka NRC NPR CAA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE