Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

লজ্জাজনক

সম্প্রতি ১৯ জানুয়ারি ঘটনার তিন দশক পূর্তি উপলক্ষে দিল্লির শাহিনবাগের বিক্ষোভ-অঙ্গনে সঙ্কটগ্রস্ত কাশ্মীরি পণ্ডিতদের কথা উঠিয়া আসিল। শাহিনবাগের বিদ্রোহীরা পণ্ডিতদের নির্বাসনের বাস্তবকে তুলিয়া ধরিলেন।

শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০১
Share: Save:

ত্রিশ বৎসর পূর্ণ হইল সেই ভয়ঙ্কর অন্যায়ের। তিন দশক আগে এমনই এক শীতকাতর জানুয়ারি মাসে প্রায় চার লক্ষ কাশ্মীরি পণ্ডিতকে রাতারাতি কাশ্মীর উপত্যকা ছাড়িয়া অন্যত্র আশ্রয় খুঁজিতে হইয়াছিল। ভয়াবহ ধ্বংসলীলায় নষ্ট হইয়াছিল বহু প্রাণ, ধ্বস্ত হইয়াছিল বহু সম্পর্ক। অতঃপর পণ্ডিত পরিবারগুলির কিছু কিছু বিদেশ ও দেশে সুস্থিত হইয়াছে, অধিকাংশই এখনও অসহায়তার শিবিরে ডুবিয়া আছে। তাহাতে কাশ্মীরের দায়িত্ব যতখানি, ভারতীয় রাষ্ট্রের দায়িত্ব তদপেক্ষা কিছু কম নহে। ভারতীয় রাজনীতির এক বিরাট অংশ আবর্তিত হইতে থাকে কাশ্মীরকে ঘিরিয়া। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করিয়া পাকিস্তানের সহিত ছায়াযুদ্ধ ও কায়াযুদ্ধ হইতে রসদ সংগ্রহ করে ভারতীয় রাজনীতির বিবিধ ধারা। কিন্তু সেখানকার নির্যাতিত মানুষদের লহিয়া কোনও প্রতিকারমূলক কাজের শপথ রাজনীতির কর্মকাণ্ডে গুরুত্বপূর্ণ স্থান লয় নাই— না বাম, না মধ্য, না দক্ষিণ পক্ষের রাজনীতি। বাস্তবিক সত্তর বৎসর বয়সি প্রজাতন্ত্রের জন্য ইহা এক বিরাট লজ্জার কথা। সম্প্রতি ১৯ জানুয়ারি ঘটনার তিন দশক পূর্তি উপলক্ষে দিল্লির শাহিনবাগের বিক্ষোভ-অঙ্গনে সঙ্কটগ্রস্ত কাশ্মীরি পণ্ডিতদের কথা উঠিয়া আসিল। শাহিনবাগের বিদ্রোহীরা পণ্ডিতদের নির্বাসনের বাস্তবকে তুলিয়া ধরিলেন। কিছু পণ্ডিতকে ডাকিয়া আনিয়া তাঁহাদের বক্তব্য শুনিলেন। তদুপলক্ষে বিষয়টি আবার গোটা দেশের সংবাদমাধ্যমে শোভিত হইল। নতুবা, কত ১৯ জানুয়ারিই তো ইতিমধ্যে গত হইয়াছে। কোনও রাজনীতির ধ্বজাধারীদের পক্ষে পণ্ডিত-পুনর্বাসনের দাবি শোনা গিয়াছিল কি?

অবশ্যই নরেন্দ্র মোদী সরকার বিষয়টি জনমানসে নূতন ভাবে উজ্জীবিত হওয়ায় বিশেষ প্রফুল্ল। তবে কি না, স্লোগানের রাজনীতির বাহিরে যে বাস্তবের নীতি, সেখানে কিন্তু বিজেপি নেতৃবর্গের ব্যর্থতা তাঁহাদের কংগ্রেসি ও অন্যান্য রাজনৈতিক সহকর্মীদের অপেক্ষা কোনও অংশে কম নহে। ১৯৯০-এর পর দীর্ঘ কাল পণ্ডিতদের পুনর্বাসনের বিষয়ে জম্মু ও কাশ্মীরে নিশ্চুপ নীরবতার মধ্যে বলিতে হয় মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সইদের কথা। পিডিপি দলের নেতা হিসাবে রাজ্যের শীর্ষে আসিয়া ২০১৫ সালে তিনি বিষয়টিতে মন দেন, এবং রাজ্য সরকারের অন্য শরিক ভারতীয় জনতা পার্টির রাজ্য স্তরের মুখপাত্র রাম মাধবের সহিত একত্র বসিয়া একটি নীতি প্রণয়নের চেষ্টা করেন। সে চেষ্টা যে সফল হয় নাই, তাহার প্রধান কারণ বিজেপির উচ্চারিত তর্ক ও অনুচ্চারিত বিরোধিতা। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যাইতে পারে কাশ্মীরি হিন্দু পণ্ডিতদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সইদের সেই ঐতিহাসিক বার্তা— আপনাদের হয়তো আমাদের আর দরকার নাই, কিন্তু আপনাদের লইয়া আসিবার দরকারটি আমাদেরই। অন্যথা কাশ্মীর উপত্যকার সেই পূর্বের বৈচিত্রময় পরিবেশ, সংযোগের ঐতিহ্য আমরা ফিরিয়া পাইব না।— রাজনীতির অলঙ্কার বাদ দিলেও বার্তাটির মধ্যে যে উদারতার ইঙ্গিত, আঞ্চলিক বা জাতীয় আর কোনও নেতার বক্তব্যে এযাবৎ তাহার লেশ পাওয়া গিয়াছে কি?

মুখ্যমন্ত্রী সইদের প্রস্তাবে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ ও বিজেপির দিক হইতে উৎসাহব্যঞ্জক সাড়ার অভাবের প্রমাণ ইতিমধ্যে বিভিন্ন সংবাদ-মাধ্যমে নথিবদ্ধ। বিজেপিকে এখানে একক দায়ী করিবার প্রশ্ন নাই। কংগ্রেসও ঠিক একই নীতিজাড্যের ঠেকায় পড়িয়া নির্বাসিত পণ্ডিতদের জন্য এত দিনেও কিছু করিয়া উঠে নাই। তবে, কিছু করিতে না পারা, আর কিছু না করিয়াও কুমিরছানার মতো নির্যাতিতদের দেখাইয়া ভোটের খেলায় গোল দিবার বাসনা— এই দুইয়ের মধ্যে অনৈতিকতার পরিমাণের তারতম্য আছে। সেই অনৈতিকতার শিকার একটি সমগ্র মানবগোষ্ঠী, এই ভাবনা ভারতীয় গণতন্ত্রের পক্ষে লজ্জাজনক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kashmir Kashmiri Pandit
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE