Advertisement
E-Paper

মা ভৈঃ

কেন এই নিষ্ক্রিয়তা? ভয়ে? এত ভয় কাহাকে? সকল রাজ্যেই রাজ্য সরকার আস্থাভাজন ব্যক্তিদের বসাইয়া স্বতন্ত্র কমিশনগুলিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। ইহাতে গণতন্ত্রের সঙ্কট, এবং নাগরিকের নিরাপত্তা ব্যাহত হইতে বাধ্য।

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:১৮

রাজ্য মানবাধিকার কমিশনকে নির্ভয়ে কাজ করিতে বলিলেন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। মানবাধিকার দিবসের অনুষ্ঠানে এই বার্তায় কমিশনের কর্তারা আশ্বস্ত হইলেন কি না জানা নাই, রাজ্যবাসী কিছু সান্ত্বনা অন্তত পাইল। এই রাজ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ভূরি ভূরি, সুবিচার লাভের দৃষ্টান্ত বিরল। কেবল পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিনগুলিতে যে কাণ্ড এই বৎসর ঘটিয়াছে, তাহার সম্মুখে মানবাধিকার কমিশনের নীরবতা কর্ণবিদারক। পুরুলিয়াতে দুই রাজনৈতিক কর্মীর ঝুলন্ত দেহ মিলিবার পর জাতীয় মানবাধিকার কমিশন রিপোর্ট তলব করিয়াছিল, রাজ্য কমিশন কোনও প্রশ্নই করে নাই। যে রাজ্য বালিকা ও নারী পাচারে প্রায় শীর্ষস্থানে, যে রাজ্যের শ্রমিক ভিনরাজ্যে নির্যাতিত ও নিহত হইতেছেন, যেখানে দুই ছাত্রকে গুলি করিয়া হত্যার অভিযোগ উঠিয়াছে পুলিশের বিরুদ্ধে, সেই রাজ্যের মানবাধিকার কমিশনের নীরবতা ভয়ঙ্কর। আশঙ্কা হয়, হয়তো মানবাধিকার কমিশন নীরব থাকিবে জানিয়াই নিরস্ত্র জনতার উপর গুলিবর্ষণ চলিতে থাকে, বিচারাধীন বন্দিদের কারাবাস দীর্ঘ হয়, পণহত্যা বা গণধর্ষণের অভিযুক্ত প্রমাণাভাবে মুক্তি পায়।

কেন এই নিষ্ক্রিয়তা? ভয়ে? এত ভয় কাহাকে? সকল রাজ্যেই রাজ্য সরকার আস্থাভাজন ব্যক্তিদের বসাইয়া স্বতন্ত্র কমিশনগুলিকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। ইহাতে গণতন্ত্রের সঙ্কট, এবং নাগরিকের নিরাপত্তা ব্যাহত হইতে বাধ্য। কিন্তু কমিশনের সদস্যরা তাঁহাদের কাজ নিষ্ফল নিয়মরক্ষায় পরিণত হইতে দিবেন কেন? মানবাধিকার কমিশন একটি আলঙ্কারিক প্রতিষ্ঠান নহে। তাহার কাজ মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিমবঙ্গ মানবাধিকার কমিশনের আরও একটি দুর্বলতার প্রতি ইঙ্গিত করিয়াছেন রাজ্যপাল। তিনি বলিয়াছেন, কেবল কাগজে কাজ করিলে হইবে না। ঘটনাস্থলে গিয়া অনুসন্ধান করিতে হইবে। সম্প্রতি নাগরিকের অধিকার ও নিরাপত্তার প্রতি চরম আঘাতের যতগুলি ঘটনা ঘটিয়াছে, তাহার অধিকাংশগুলিতেই রাজ্যবাসী জানিতে পারে নাই, মানবাধিকার কমিশন নিজস্ব তদন্ত করিয়াছে কি না, করিলে তাহার ফল কী হইয়াছে। ইহা সত্য, দোষী নির্ধারণ করিলেও কমিশন শাস্তির সুপারিশ করিতে পারে মাত্র। শাস্তি দিবার কাজটি প্রশাসনিক। কিন্তু শাস্তির প্রয়োগই শেষ কথা নহে, প্রধান কথাও নহে। মানবাধিকার কমিশনের তিরস্কারই গুরুত্বপূর্ণ। কমিশন সক্রিয় হইলে নেতারা সংযত হন, প্রশাসনও নড়িয়া বসে।

এই রাজ্যে মানবাধিকার কমিশন কি সেই কর্তব্য পালন করিতেছে? রাজ্য বা কেন্দ্র, পুলিশ বা সরকারি আধিকারিক— কাহাকেও কমিশন তিরস্কার করিয়াছে বলিয়া শোনা যায় নাই। কমিশনের ওয়েবসাইট অনুসারে, ২০১৬ সাল হইতে আজ পর্যন্ত তাহারা স্বতঃপ্রণোদিত হইয়া বেশ কিছু মামলা শুরু করিয়াছে। তাহার মধ্যে দুইশো পনেরোটি পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু, এবং একশো ষাটটি নানা বিষয়ে নাগরিকের লাঞ্ছনার ঘটনা। সেই সকল মামলার কোনওটিতেই রায় বাহির হয় নাই। ব্যবস্থা লওয়া (‘অ্যাকশন টেকেন’) স্তম্ভটি শূন্যই রহিয়াছে। ওই শূন্যতা হইতেই নীরবতা। সদস্যরা নিঃস্বার্থ ও নির্ভয় না হইলে কমিশন তাহার ভূমিকা পালন করিতে পারিবে না। আইন মানবাধিকার কমিশনকে ক্ষমতা দিয়াছে, জনস্বার্থে তাহার প্রয়োগ প্রয়োজন।

West Bengal Governor Keshari Nath Tripathi Human Rights Commission
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy