আমরা হয়তো অনেকেই জানি না যে, আগামী ১৩ জুলাই ভানুভক্তের জন্মদিবস উপলক্ষে দার্জিলিং-সহ সমগ্র পাহাড়ি অঞ্চল জুড়ে একটি বিশেষ উৎসব আয়োজন করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পাহাড়ের আন্দোলনের এই ভয়াবহতার কথা চিন্তা করে সরকার কিন্তু এই সিদ্ধান্ত নেয়নি। তাদের এই ঘোষণা প্রায় পাঁচ বছর আগেই করা হয়েছিল। পাহাড়ি কবির জন্মদিনে এই অনুষ্ঠানটিকে সরকার সাড়ম্বরে পালন করতে চেয়েছে তাদের অধীনে থাকা সরকারি পাঠাগারগুলির মাধ্যমে। এই ব্যাপারে অনেক আগেই বিশেষ নির্দেশনামাও পাঠিয়েছে রাজ্য সরকার। পাঠাগার পিছু কিছু আর্থিক সাহায্যেরও প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে সরকারের তরফ থেকে।
নেপালের কৃষ্টি, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজে ভানুভক্ত রেখেছেন দক্ষতার নজির। সেই সময় নেপালিরা জাতিতে ভিন্ন ভিন্ন হওয়ার কারণে তাঁদের মধ্যে তেমন স্বচ্ছ ভাষার প্রচলন ছিল না। সিকিমের বেশির ভাগ অঞ্চল জুড়েই ছিল নেপালি ভাষার চল। নেপালের অর্ধেক মানুষ-সহ দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ির কোনও কোনও অংশের মানুষজনও কথা বলতেন নেপালি ভাষায়।
নেপালি ভাষা খুব প্রাচীন নয়। তাই পুরাতন নয় নেপালি সাহিত্যও। কবি ভানুভক্ত আচার্যই নিজ প্রতিভাগুণে এই ভাষাকে পৌঁছে দেন গৌরবের উচ্চ শিখরে। তাঁর অকৃত্রিম প্রচেষ্টাতেই স্বীকৃতি পায় নেপালি ভাষা। শুধু তা-ই নয়, নেপালি জাতিসত্তাকে একসূত্রে বেঁধে রাখার কাজেও বিশাল দায়িত্বের পরিচয় দিয়েছেন তিনি। পাহাড়কে সংস্কৃতি মনোভাবাপন্ন করে রাখতেও তিনি ছিলেন সদাজাগ্রত। আবার ভারত এবং নেপালের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার পিছনেও তাঁর অবদান ছিল বিশাল। তাই সঙ্গত কারণেই তিনি শ্রদ্ধার সিংহাসনে অধিষ্ঠিত। অতএব পাহাড়ের সমস্যা সমাধানের জন্য যদি ভানুভক্তের এই আবেগকে ঠিক ভাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা যায়, তা হলে নিশ্চয়ই সুফল পাওয়া যাবে।
শামসুল হক
কাজী মহল্লা, পাণ্ডুয়া, হুগলি
কারণ আরও
অতনু পুরকায়স্থ বাঙালির আইএএস না পাওয়ার যে কারণগুলি জানিয়েছেন (১৬-৬ ও ১৭-৬), তার সঙ্গে সম্পূর্ণ সহমত হয়েও আরও কিছু কারণ সংযোজন করার প্রয়োজন আছে। বাম জমানায় ইংরেজি না পড়ানোর সিদ্ধান্ত ছাড়াও আরও বেশি ক্ষতি হয়েছিল সিলেবাসের পরিবর্তন না করা। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে একই পাঠ্যক্রম কয়েক দশক ধরে অপরিবর্তিত থাকার ফলে আমরা সর্বভারতীয় পাঠ্যক্রম থেকে সম্পূর্ণ ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলাম। সবচেয়ে বড় উদাহরণ সিবিএসই সিলেবাস উচ্চমাধ্যমিকে গ্রহণ না করা। হাস্যকর ভাবে প্রচার করা হল, পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক সিলেবাস অনেক বেশি গভীর। এই গভীর সিলেবাসের ছাত্ররা অগভীর সিবিএসই পাঠ্যক্রমের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে সর্বভারতীয় জয়েন্টে একেবারে তলিয়ে গেল। সর্বভারতীয় প্রতিযোগিতায় যে রাজ্যগুলি বেশি সফল, তারা কিন্তু সময়ের সঙ্গে তাল রেখে সিলেবাস পরিবর্তন করে ফেলল। অন্য দিকে, বলা হল বাঙালি ছেলেমেয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতেই আগ্রহী, আমলা হতে একেবারেই চায় না। সমীক্ষায় দেখা গেছে, পশ্চিমবঙ্গ জয়েন্টের প্রথম কুড়ি জনের অনেকেরই আইআইটি জয়েন্টের মেধা তালিকায় হাজার বা তার নীচে স্থান মিলছে। অল ইন্ডিয়া মেডিক্যালের কথা না তোলাই ভাল।
সংবাদপত্রের ভূমিকাও এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। বাংলা সংবাদপত্রগুলোয় পশ্চিমবঙ্গ এন্ট্রান্সের মেধা তালিকায় যারা প্রথম দিকে স্থান পায়, তাদের নিয়েই যত মাতামাতি। সর্বভারতীয় জয়েন্টে যারা উচ্চস্থান দখল করল, তারা কী ভাবে এগোল, সে ব্যাপারে নীরব থাকাই তারা শ্রেয় মনে করে। আইএএস-এ প্রতি বছর ক’জন কোন রাজ্য থেকে পাচ্ছে, সে খবর দিয়েই বা কী লাভ? বাঙালি তো আর ওই সব পরীক্ষায় বসবে না। চাকুরির সুবাদে বিহার, ও়ড়িশায় থাকার দরুণ দেখেছি ওই অঞ্চলের স্থানীয় সংবাদপত্রগুলি যথেষ্ট সদর্থক ভূমিকা নিয়ে থাকে। ওখানকার ছেলেমেয়েরাও পারুক না পারুক, এই সব পরীক্ষায় বসার চেষ্টা করে। আমরা এখানে জানতেও পারি না কবে ওই সব পরীক্ষা হয়ে গেল।
সঙ্গে আছে প্রস্তুতির জন্য ভাল কোচিং সেন্টারের অভাব। আমাদের রাজ্যের বাইরে অনেক উন্নত মানের কোচিং সেন্টার রয়েছে, যেখান থেকে সর্বভারতীয় পরীক্ষায় সফল হওয়া ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা অনেক বেশি।
ষাটের দশকের শেষ দিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে হায়ার সার্ভিস এগজামিনেশন-এর প্রস্তুতির ট্রেনিং সেন্টার গড়ে তোলে। অনেক ঝাড়াইবাছাইয়ের পর কুড়ি জন ছাত্র নিয়ে চলা দশ মাসের এই ট্রেনিং সেন্টার কয়েক বছর পরেই উঠে যায়। আমি এই সেন্টারে দ্বিতীয় বছরে (১৯৬৮) ট্রেনিং নিই। ‘চিনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান’-এর সেই যুগে ভর্তির পর পরই শুনতে লাগলাম— ‘কী হে, তুমি নাকি আমলা হতে চলেছ?’ বা ‘শেষমেশ তুমিও শাসকের পা-চাটা কুকুর হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছ!’ প্রভৃতি মধুর সম্ভাষণ। পড়ানোর পদ্ধতিও আশানুরূপ ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা ইতিহাস ও ইংরাজি যে ভাবে পড়াতেন, সেটা আর যা-ই হোক, সিভিল সার্ভিস পাঠ্যক্রমের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। আর অতিথি অধ্যাপক হয়ে তৎকালীন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, পুলিশ কমিশনাররা যে ক্লাস নিতেন, সেটাও খুব একটা প্রয়োজনীয় বলে মনে হয়নি।
এখন তো ইংরেজি আবার ফিরে এসেছে, সিলেবাসও অনেক বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ, সিবিএসই পাঠ্যক্রমও এখন আর অচ্ছুৎ নয়, নবোদয় বিদ্যালয়ও নেওয়া হয়েছে। দরকার শুধু পেশাদার মনোভাব নিয়ে বাইরের রাজ্যের মতো উচ্চ মানের কোচিং সেন্টার। মনে হয় তবেই সর্বভারতীয় পরীক্ষায় সফল না হওয়া এই বিপন্ন প্রজাতি আবার ফিনিক্স পাখির মতো ফিরে আসতে পারবে।
চন্দ্রশেখর লাহিড়ী
কলকাতা-৮১
বেড়ি নয়, বেড়া
পৌলমী দাস চট্টোপাধ্যায় লিখেছেন, ‘বন্ধুত্ব মানে দায় নেই, ভার নেই, বন্ধুত্ব মানে মুক্তি’ (‘তার চেয়ে বন্ধু...’ ২৩-৬)। তার মানে কি বন্ধুত্ব মানে সব ব্যাপারে শুধুই অনুমোদন, সোচ্চার বা নীরব সমর্থন, এমনকী নিষিদ্ধ ফল ভক্ষণেও সহর্ষ সহযোগিতা? এই ধরনের ‘বন্ধুত্ব’ যদি মা-বাবার কাছ থেকে মেলে, তা হলে তা ‘আদরে বাঁদর’ ছাড়া আর কিছু করবে বলে মনে হয় না। বিশেষ করে বয়ঃসন্ধিকালে ছেলেমেয়েরা যদি দেখে যে মা-বাবা বন্ধুদের মতোই ‘উদার’ মনোভাবাপন্ন, তা হলে তারা যে কোনও প্রলোভনে পড়ার সময় অবাঞ্ছিত পরিণতির কথা ভেবে আতঙ্কিত হবে না। তাই ‘ডিসিপ্লিন’ বা শৃঙ্খলা মানে পায়ের ‘বেড়ি’ নয়, বরং খাদের ধারে ‘বেড়া’ দেওয়া। অনেক বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তির মুখেই শোনা যায় যে, তাঁরা আজ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছেন বাবা-মায়ের শাসনের জন্যই, না হলে অনেক আগেই তলিয়ে যেতেন। কৈশোরে স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দে বেড়ে ওঠার জন্য বাবা-মায়ের ‘বন্ধুর মতো’ ব্যবহার নিশ্চয়ই কাম্য। তবে তার সীমারেখা কত দূর বিস্তৃত হবে, তা নির্ভর করা উচিত মা-বাবার ‘অনেক ঘাটে জল খাওয়া’ পরিণত অভিজ্ঞতার ওপর।
চঞ্চল পাল
কলকাতা-৪
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়