Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু

সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির কিছুটা টেলিভিশন গ্রহণ করলেও এখন ছোট ছোট হল, আইনক্স ইত্যাদি গড়ে উঠেছে। তবে সংখ্যায় কম। তার ওপর টিকিটের মূল্য অনেক বেশি। যত দূর জানি জিএসটি-তে ১০০ টাকার মূল্যের টিকিটের ওপর ট্যাক্স কমই থাকবে। সেটা বড় হলের পক্ষে শুভ সংবাদ।

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৭ ০০:০০

রুগ‌ণ শিল্প সিনেমা

কিছু দিন আগে ভবানীপুরে ‘বিজলী’ হল বন্ধ হল বলে একটি প্রতিবেদন পড়েছিলাম। যদিও কর্তৃপক্ষের ঘোষণা ছিল, মেরামতির জন্য কিছু দিন বন্ধ থাকবে, কিন্তু আবার চালু হবে, বিশ্বাস হচ্ছিল না। অবশ্য ঘোষণা মাফিকই নতুন ভাবে বিজলী চালু হয়েছে।

এক সময় বিনোদনের প্রধান প্রতিভূ ছিল সিনেমা, থিয়েটার, যাত্রাপালা ইত্যাদি। সিনেমা, থিয়েটারের জন্য হল চাই। পরিবারের কোনও অনুষ্ঠান হলেই সদলবলে বায়োস্কোপ, থিয়েটার দেখা একটা রেওয়াজ ছিল। হল থেকে বেরিয়ে সদলবলে আশপাশের রেস্টুরেন্ট-এ খাওয়াটাও একটা আনন্দ-উৎসব ছিল। এমনকী হাফটাইমেও হলের গেটের সামনে নানা রকম চানাচুর, বাদাম, ভাঁড়ে চা বিক্রি হত। এই সব দেখাবার প্রস্তুতিতে বড় বড় স্টুডিয়ো গড়ে উঠেছিল। বিশেষ করে টালিগঞ্জ অঞ্চলে বিশাল বিশাল জায়গা নিয়ে শেড তৈরি হয়েছিল সিনেমার শুটিং-এর জন্য। নানাবিধ প্রয়োজনে একটা আস্ত ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠেছিল। বহু লোকের কর্মসংস্থান ছিল। এই ইন্ডাস্ট্রি প্রথমেই মার খেতে শুরু করল টেলিভিশনের আগমনে। বিশেষ করে হলে যাওয়া কমতে শুরু করল কারণ ডিভিডি-র দৌলতে সিনেমা বাড়িতে বসেই দেখা চলত। তবু কিছু কিছু হল স্বল্প দর্শকের ওপর নির্ভর করে চালাতে থাকল। কিন্তু কালক্রমে দেখা গেল অনেক হলই বন্ধ হতে শুরু করেছে দর্শকের অভাবে। তাই ভেবেছিলাম বিজলী-ও বোধ হয় বন্ধই হয়ে গেল।

সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির কিছুটা টেলিভিশন গ্রহণ করলেও এখন ছোট ছোট হল, আইনক্স ইত্যাদি গড়ে উঠেছে। তবে সংখ্যায় কম। তার ওপর টিকিটের মূল্য অনেক বেশি। যত দূর জানি জিএসটি-তে ১০০ টাকার মূল্যের টিকিটের ওপর ট্যাক্স কমই থাকবে। সেটা বড় হলের পক্ষে শুভ সংবাদ।

একটাই অনুরোধ। এক সময় সরকার প্রমোদ কর হিসাবে এই ইন্ডাস্ট্রি থেকে প্রচুর আয় করেছে। এখন রুগ্ণ শিল্প হিসাবে হলগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের খরচ অনুদান দিলে হলগুলো পুনরুজ্জীবন পাবে।

ভবতোষ চক্রবর্তী

কলকাতা-৮

লজ্জা কি যায়

জাতীয় শিক্ষক আকমল হোসেনকে কলকাতায় ঘর ভাড়া পেতে কমল সেন সাজতে হয়েছিল। এ বড় ‘দুঃখের, লজ্জার’ (সম্পাদক সমীপেষু, ৪-৭)। আমার বন্ধু-কন্যাকেও একই সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। বহরমপুর গার্লস কলেজে পড়ার সুবাদে ওরা কয়েক জন সহপাঠী ওখানে মেস করে থাকত। হিন্দু বাড়িতে মেস। পরিচয় জানাজানি হলে আর থাকা হবে না। তাই তাকে দীর্ঘ তিন বছর পরিচয় গোপন রাখতে হয়েছিল। তবে তার মুখেই শুনেছি, কী ভাবে মেসের সহপাঠী বন্ধুরা (সকলেই হিন্দু) তাকে সব সময় আগলে রাখত।

আমার প্রয়াত বন্ধু মীর আসরাফ আলি ছিলেন এক জন আদর্শবান শিক্ষক এবং আপাদমস্তক ধর্মনিরপেক্ষ। বন্ধু-কন্যা মেসে পরিচয় গোপন রাখার নানা কাহিনি মজার ছলে বললেও আমি লজ্জায় সিঁটিয়ে যেতাম। আমার অবস্থা বিবেচনা করে বন্ধু বলতেন, তবু ঘটনার রুপোলি রেখাটা দেখতে পেলি না। এক হিন্দুর কাছে পরিচয় গোপন রাখতে দশ হিন্দু মদত দিচ্ছে।

কথাটায় সারবত্তা আছে হয়তো। কিন্তু তাতে কি লজ্জা যায়?

বুদ্ধদেব বিশ্বাস

মহীশিলা, আসানসোল

সম্প্রীতির ছবি

একান্ন পীঠের এক পীঠ হওয়া সত্ত্বেও কোনও সরকারই একে পর্যটন কেন্দ্র করার চেষ্টা করেননি। দেবীর কিরীট-কণা তাই স্থানীয় হিন্দু, মুসলিম, সাঁওতালেরা যথেষ্ট শ্রদ্ধা ভক্তি দিয়ে আগলে রেখেছেন (‘কিরীটেশ্বরী মন্দিরে জমিদান হাবিবদের’, ৮-৭)। বর্তমান কালে কেউ এক ছটাক জায়গা ছাড়ে না। ভাইয়ে ভাইয়ে হানাহানি হয়। যে মুসলিম ভাইয়েরা সযত্নে, শ্রদ্ধায় নিজের হাতে মন্দির পরিষ্কার করেন, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলছি, পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু-মুসলিমে হানাহানি কোনও দিন নেই। যেখানেই অস্থির পরিস্থিতি তৈরী হোক না কেন, আমরা হিন্দুরা বা মুসলিমরা বুক দিয়ে অন্যের বিশ্বাস— মন্দির, মসজিদকে রক্ষা করব। এই মন্দিরের অনতি দূরেই বিশাল মুসলিম অধ্যুষিত গ্রাম মুকুন্দবাগ। আজ অবধি কোনও হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে হানাহানি এখানে শোনা যায়নি। পৌষমাসে মেলা প্রাঙ্গণে সর্বধর্মের লোকেরা হয় মাতোয়ারা। সরকারের কাছে অনুরোধ, স্থানীয় জমি ও জলাশয়গুলিকে কাজে লাগিয়ে জায়গাটিকে আরও আকর্ষণীয় এবং তীর্থযাত্রীদের সুবিধার্থে বিশ্রামাগার নির্মাণ করে দিলে সকলেই উপকৃত হবেন।

কনক চৌধুরী

কলকাতা-৩০

প্রাণপুরুষ

বৌদ্ধধর্মের পুনরুত্থানে শ্যামাপ্রসাদের অবদানের মূল্যায়ন করতে গেলে তাঁর পিতা আশুতোষের অবদানের আলোচনা খুবই জরুরি। কারণ, এই কর্মযজ্ঞের ভিত্তি স্থাপন করে দিয়েছিলেন তিনিই। অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের লেখায় (‘বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও শ্যামাপ্রসাদ’, ২৮-৬) যদিও আশুতোষকে মহাবোধি সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বলা হয়েছে, কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন শ্রীলঙ্কার ভিক্ষু সুমঙ্গল নায়ক মহাস্থবির। আশুতোষ সভাপতি হন ১৯১১ সালে। তখন বউবাজারের গঙ্গাধরবাবু লেন ও তার পর ক্রিক রো ছিল সোসাইটির অস্থায়ী ঠিকানা। সেই সময় প্রতিষ্ঠানটি রেজিস্টার্ড ছিল না। ১৯১৫ সালে রেজিস্ট্রি-কৃত হয় এবং সভাপতি ছিলেন আশুতোষই। ১৯২০ সালে কলেজ স্কোয়্যারে ধর্মরাজিকা চৈত্য বিহারের দ্বারোদ্ঘাটন হলে এখানেই হয় মহাবোধি সোসাইটির স্থায়ী কার্যালয়। সুতরাং মহাবোধি সোসাইটির স্থায়িত্ব গঠনে সভাপতি আশুতোষের অবদান অদ্বিতীয়।

প্রকৃতপক্ষে অনাগারিক ধর্মপাল ১৮৯২ সালে মহাবোধি সোসাইটির প্রধান কার্যালয় নিয়ে আসেন কলকাতায়, যা আজও বর্তমান। তখন বউবাজার অঞ্চলে কিছু বাঙালি বৌদ্ধর বসবাস ছিল। দূরদর্শী অনাগারিক এঁদের সহযোগিতা পাওয়ার লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নেন। আজও বাঙালি বৌদ্ধরা সেই দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তবে অনাগারিকের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল বৌদ্ধদের পবিত্র তীর্থস্থান বুদ্ধগয়ার মহাবোধি বিহারটিকে মোহন্তদের কাছ থেকে উদ্ধার করে ভগ্নপ্রায় স্থাপত্যটির যথাযথ সংস্কার সাধন। এই উদ্যোগকে স্বীকৃতি দেন আশুতোষ এবং পরবর্তী সময় শ্যামাপ্রসাদ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতো ব্যক্তিত্বরা।

আশুতোষের সঙ্গে কৃপাশরণের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। কৃপাশরণের অনুরোধে ১৯০৭ সালে আশুতোষ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পালি বিভাগ শুরু করেন। তখন আশুতোষ ছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। উল্লেখ্য, বেণীমাধব বড়ুয়াকে সরকারি বৃত্তি প্রদান করে গবেষণার জন্য তাঁকে লন্ডনে পাঠানোর পিছনে প্রধান অবদান ছিল আশুতোষের। কৃপাশরণের অনুরোধেই তিনি এই দায়িত্ব নিয়েছিলেন। ১৯১৭ সালে লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে বেণীমাধব ডি লিট উপাধি লাভ করেন, এশিয়ার মধ্যে প্রথম। বৌদ্ধধর্ম ও সাহিত্যে নিজের আগ্রহ সঞ্চারের কথা বলতে গিয়ে আশুতোষ কৃপাশরণের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সাহচর্যের কথা উল্লেখ করেছেন (বৌদ্ধধর্মাঙ্কুর সভা শতবর্ষ স্মারকগ্রন্থ, সম্পাদক হেমেন্দুবিকাশ চৌধুরী, ১৯৯২)।

১৯৪৯ সালে সারিপুত্র ও মোগ্গল্লানের পূত দেহাবশেষ শ্রীলঙ্কা ঘুরে ভারতে এলেও এর জন্য মহাবোধি সোসাইটি প্রথম উদ্যোগ নেয় ১৯৩৭ সালে। ব্রিটিশ সরকার এই পূত দেহাবশেষগুলি ভারতে ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতি দিলেও নানা কারণে তা সাময়িক ভাবে ব্যাহত হয়। পবিত্র পূতাস্থিগুলি ভারতে ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে শ্যামাপ্রসাদের অবদানের কথা স্বীকার করেও বলা যায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর সক্রিয় আগ্রহ ও প্রচেষ্টা এই কাজে বিশেষ সহায়ক হয়েছিল।

রাহুল বড়ুয়া

কলকাতা-৭৪

Letters To Editor
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy