Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু

অমৃক সিংহ অরোরা ওই রেস্তরাঁতেই, শুরু করতেন রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে। ওঁর প্রিয় ছিল ‘মনে কী দ্বিধা রেখে গেলে চলে...’  ওখানে ‘ট্রোজানস’ নামে যে দলটি বাজাত, তার অন্যতম গায়ক ছিলেন পি এল রাজ।

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

সেই দিন সেই গান

অময় দেব রায়ের নিবন্ধ (‘ভিড় আছে, গান নেই’, রবিবাসরীয়, ৩১-১২) পড়ে মনে পড়ল, সত্তর দশকের গোড়ায় বিখ্যাত রেস্তরাঁয় শুনেছি ঊষা উত্থুপের গান। ঊষা তখন মূলত ইংরেজি গান গাইতেন, বেশির ভাগ ক্লিফ রিচার্ড এবং ন্যান্সি সিনাত্রার গান। অমৃক সিংহ অরোরা ওই রেস্তরাঁতেই, শুরু করতেন রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে। ওঁর প্রিয় ছিল ‘মনে কী দ্বিধা রেখে গেলে চলে...’ ওখানে ‘ট্রোজানস’ নামে যে দলটি বাজাত, তার অন্যতম গায়ক ছিলেন পি এল রাজ। গলা ছিল অবিকল মহম্মদ রফির মতো। তাঁর দুটি প্রিয় গান ছিল। ‘ইয়ে দুনিয়া ইয়ে মেহফিল মেরে কাম কি নহী...’, এবং ‘অভি না যাও ছোড় কর...’ দর্শকদের কাছ থেকে মৌখিক অনুরোধ এলে উনি গাইতেন না। একমাত্র পঞ্চাশ বা একশো টাকার নোট দিয়ে অনুরোধ করলে, তবেই গাইতেন।

শোভনলাল বকশি

লেক গার্ডেনস

সাগরময়

সাগরময় ঘোষ সম্বন্ধে (‘আমি তো স্টেজের মালিক’, পত্রিকা, ১৬-১২) দেবাশিস ভট্টাচার্যের লেখা পড়ে আমার অভিজ্ঞতার কথা না লিখে পারলাম না। আমাদের সবার জানা ছিল, সম্পাদক সাগরময় ঘোষ লেখকদের খুঁজে বার করতেন। এবং লেখক তৈরিও করতে পারতেন। আমি যখন শুধু লিটল ম্যাগাজিনের লেখক, এক দিন আমার এক লেখক বন্ধু আমার কাছে এলেন সাগরবাবুর একটি ছোট্ট চিঠি নিয়ে। তাতে তিনি আমাকে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে কী ভাবে কেরানিদের কমিউনিজম দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, তা নিয়ে লিখতে বললেন। আমি অবশ্য আমার কর্মস্থলকেই একমাত্র নিশানা না করে, গোটা মধ্যবিত্ত বাঙালির নিরাপদ বামপন্থা নিয়ে একটা লেখা লিখলাম। যার শিরোনাম ছিল, ‘কেরানীর কমিউনিজম এবং মধ্যবিত্তের মনস্কামনা’। বিস্মিত হলাম, একটুও আপত্তি না করে তিনি ‘দেশ’ পত্রিকায় আমার লেখাটি ‘প্রচ্ছদ নিবন্ধ’ হিসেবে ছেপে দিলেন। সালটা সম্ভবত ১৯৯০। আমার কর্মক্ষেত্রে এর প্রতিক্রিয়া অবশ্য আমার পক্ষে উপাদেয় হয়নি।

দীপেন্দু চক্রবর্তী

কলকাতা-১০৭

নিজের কাঁধে

আমার বয়স এখন ৮৪। কয়েক জন লেখক বন্ধুর সূত্রে সাগরময় ঘোষের সঙ্গে পরিচয় হতেই উনি বললেন, ‘আপনি কি লেখেন-টেখেন?’ উত্তরে বলি, ‘সামান্য।’ ওঁরই উৎসাহে ‘দেশ’ পত্রিকায় কারিগরি বিষয়ে কয়েকটা প্রবন্ধ লিখলাম। আমি তখন আসানসোলে কাজ করি। আমার সহকর্মীকে এক বার বললাম, ‘এক জন বিশ্বখ্যাত আর্কিটেক্ট মারা গেছেন। কলকাতায় সিএমপিও অফিসের লাইব্রেরিতে যাও। ওঁর উপর একটা প্রবন্ধ লিখে ‘দেশ’ পত্রিকার অফিসে গিয়ে সাগরময়বাবুর হাতে দিয়ে আসবে। ভয় পাবে না।’ প্রবন্ধটি পরের সংখ্যাতেই ছাপা হয়েছিল। সাগরময়বাবু লেখার ব্যাপারে সবাইকে উৎসাহ দিতেন।

ওই সময়ে ‘দেশ’-এ, বিখ্যাত অধ্যাপক শিবতোষ ভট্টাচার্যের একটা ধারাবাহিক লেখা বেরোত: ‘অ্যারিস্টটলের লণ্ঠন’। বিজ্ঞান ও কারিগরি বিষয়ে বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করতেন লেখক। আমি মন দিয়ে পড়তাম। ভাল লাগত। এক বার একটা লেখায় কিছু তথ্যগত ভুল ছিল। আমি একটা চিঠির মাধ্যমে ব্যাপারটা সাগরময়বাবুকে জানালাম। সাগরময়বাবু চিঠিখানা ছাপিয়ে দিলেন ‘দেশ’-এ। খুব বিব্রত হলাম।

পরে সাগরময়বাবুর সঙ্গে দেখা করে বললাম, ‘এটা কী করেছেন? ব্যাপারটা আপনি লেখককে জানিয়ে দিলেই উনি পরবর্তী লেখায় ওটা ঠিক করে দিতেন।’ সাগরময়বাবু হেসে বললেন, ‘শিবতোষবাবু খুব রেগে গেছেন।’ ‘রাগবারই তো কথা। আমি ক্ষমা চেয়ে নেব।’ সাগরময়বাবু বললেন, ‘আপনি কেন ক্ষমা চাইবেন? দোষ হলে সেটা তো সম্পাদকের।’ লেখকদের অনেক ব্যাপারই সাগরময়বাবু নিজের কাঁধে নিয়ে নিতেন, শুনেছি।

শিশিরকুমার নিয়োগী

কলকাতা-৯১

নরেন্দ্রপুর

দেবদূত ঘোষঠাকুরের স্মৃতিচারণার সঙ্গে (‘মহারাজ রান্নায় ব্যস্ত...’, রবিবাসরীয়, ১৭-১২) আমার স্মৃতির অংশ ভাগ করে নিলাম। নরেন্দ্রপুর ১৯৭০। আমার বাবা রবীন্দ্রনাথ পালধি নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের বাংলার শিক্ষক ছিলেন। আমি ওই সময়ে ওখানকার একটি স্কুলে ক্লাস সেভেনে পড়তাম। নরেন্দ্রপুর স্টাফ কোয়ার্টার্সে ওই ধর্মঘটের প্রভাব ভালই পড়েছিল।

তখন নরেন্দ্রপুর মিশন সমস্যায় পড়েছিল। এক বামপন্থী নেতার ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে বড় মহারাজ লোকেশ্বরানন্দজি বিচলিত হয়ে জরুরি সভার আয়োজন করেছিলেন। আমার বাবা ওই সভায় কিছু শিক্ষকের ভীত সন্ত্রস্ত ভাব দেখে স্থির থাকতে পারেননি। বলেছিলেন, ‘আমরা এত জন শিক্ষক একসঙ্গে রুখে দাঁড়ালে ওরা ভয়ে পালাবে।’ মহারাজ বললেন, অন্যান্য কাজ কী ভাবে হবে? বাবা বললেন, ‘ছাত্ররা যদি সাহায্য করে তা হলে আমরা রান্নাবান্নার কাজ চালিয়ে নেব।’

সেই মতো দুপুরে আর রাতের রান্নার কাজ শিক্ষক-ছাত্র মিলে করতেন। আর সকালের টিফিনের ব্যবস্থা আমার মা এবং কাকিমারা (অন্যান্য শিক্ষকের স্ত্রীরা) মিলে করতেন। মিশনের কাজের জন্য রবীন্দ্রনাথ পালধি, অজিত সেনগুপ্ত, সন্তোষ মুখোপাধ্যায়, সত্য সরকার, মদন আচার্য দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছিলেন। পড়াশোনার কিছু ব্যাঘাত নিশ্চয়ই ঘটেছিল।

বামপন্থী কমরেডরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিশ্রী স্লোগান দিত। বাবার নামে কুৎসিত পোস্টার পড়েছিল। কিছু দিন বাবারা মিশনের চৌহদ্দির বাইরে যাবার চেষ্টা করেননি। প্রতি দিন বিকেলে কমরেডরা সভা করে, মিশন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা অভিযোগ করে, স্থানীয় লোকেদের উত্তেজিত করার চেষ্টা চালাত। কিছুতেই শিক্ষকদের জব্দ করতে না পেরে, অন্য পথ নিল।

মিশনের স্থাবর সম্পত্তি রক্ষার জন্য আগে থেকেই ২০০ সিআরপিএফ জওয়ান আনিয়ে রাখা হয়েছিল। এই জওয়ানরা স্টাফ কোয়ার্টার্সও ঘিরে রাখতেন।

এক দিন বাবা এবং অন্যান্য শিক্ষকরা কোয়ার্টার্স থেকে মিশনে যাচ্ছিলেন। স্থানীয় কারখানার শ্রমিকরা বামপন্থীদের সঙ্গে এক হয়ে মিশনের গেটে স্লোগান দিচ্ছিল। জওয়ানরা ঢাল, লাঠি নিয়ে সারিবদ্ধ ভাবে শিক্ষকদের গার্ড দিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন। রাস্তার মোড়ে পৌঁছনোর আগেই একটা মিষ্টির দোকানের ছাদ থেকে ইট-বৃষ্টি হতে লাগল। শ্রমিকরা রাস্তায় শুয়ে শিক্ষকদের পথ আটকাল। জওয়ানরা তেড়ে যেতেই তারা ছত্রভঙ্গ। শিক্ষকরা সামান্য আহত হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা সে দিন মিশনে গিয়ে ভাল ভাবেই কাজ করেছিলেন। এই ভাবে ধর্মঘটের অবসান হয়েছিল।

এটা সামান্য আট দিনের ঘটনা নয়। বামপন্থী নেতাদের অবিমৃশ্যকারিতায় কিছু নিরীহ দরিদ্র কর্মীর কাজ চলে গিয়েছিল।

এই ঘটনার পুরস্কারস্বরূপ মহারাজ শিক্ষকদের নিয়ে ভ্রমণে গিয়েছিলেন ২০ দিনের জন্য। আমার বাবা মিশনের মহারাজদের কাছে বিশেষ সমাদর পেয়ে ছিলেন।

রীনা দে

কলাইকুন্ডা, পশ্চিম মেদিনীপুর

রমলা

‘র‌্যাচেল থেকে রমলা...’ (রবিবাসরীয়, ১৭-১২) লেখাটিতে আছে, ‘‘১৯৪০ সালে ‘তটিনীর বিচার’ ছবিতে অভিনয়ের সঙ্গে প্লেব্যাকও করে ফেললেন রমলা।’’ কিন্তু উনি প্লেব্যাক তার আগেও করেছেন। সুশীল মজুমদার পরিচালিত ‘রিক্তা’ ছবিতে (১৯৩৯) তাঁর গান, তখনকার নিরিখে প্রেমেন্দ্র মিত্রের সাহসী কথায় ও ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের বিলিতি ধাঁচের সুরে: ‘আরও একটু সরে বসতে পারো, আরও একটু কাছে...’ ভীষ্মদেবের সংগীত পরিচালনায় ইহুদিকন্যার কণ্ঠে গানটি হয়ে উঠেছিল পুরোপুরি একটি ‘আধুনিক বাংলা গান’। ‘তটিনীর বিচার’ ছবিতেও সেই সুশীল-প্রেমেন্দ্র-ভীষ্মদেবেরই জোট!

সৌরভ সেন

কলকাতা-৬

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ই-মেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Letters To Editor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE