Advertisement
০৫ মে ২০২৪

তাঁর সৃষ্ট জপেনদা

সাহিত্যে এ রকম রাজনৈতিক দাদা আমি পাইনি। সোশ্যাল মিডিয়াকে এ জন্য কৃতিত্ব দিতেই হবে।’’ (‘নির্ভয়ে মনের কথা বলতে ভরসা পটাইদা’, ১৭-৫)।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০১৯ ০০:৪২
Share: Save:

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘...এমনিতে রাজনীতি একটা ভয়ের ব্যাপার। এ নিয়ে অনেকে সাহস করে সৃষ্টি করতে চান না। সাহিত্যে এ রকম রাজনৈতিক দাদা আমি পাইনি। সোশ্যাল মিডিয়াকে এ জন্য কৃতিত্ব দিতেই হবে।’’ (‘নির্ভয়ে মনের কথা বলতে ভরসা পটাইদা’, ১৭-৫)।

বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্যে কিন্তু এক জন রাজনৈতিক দাদা আছেন। উৎপল দত্তের অনবদ্য সৃষ্টি ‘জপেনদা’। ১৯৭১ সালে তাঁর প্রবন্ধে জপেনদা চরিত্রটির আবির্ভাব, ঠিক যখন পিএলটি পর্ব শুরু হতে চলেছে। তথ্য ও তত্ত্বের হরগৌরী মিলনে, ক্ষুরধার বিচার বিশ্লেষণে, গভীর মননশীলতায় জপেনদা চরিত্রটি বাংলা সাহিত্যের, বিশ্বসাহিত্যেরও সম্পদ।

ব্রেখট তাঁর থিয়েটারের দৃষ্টিভঙ্গি, দর্শন ও সাহিত্যগত দিকটি দার্শনিক, নাট্যকার ও অভিনেতার কথোপকথনের মধ্য দিয়ে তুলে ধরেন। রবীন্দ্রনাথও এ পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন ‘পঞ্চভূত’ নামক প্রবন্ধগ্রন্থে। ‘চায়ের ধোঁয়া’ প্রবন্ধ সঙ্কলনে, উৎপল দত্ত ব্রেখটের অনুসরণে পরিচালক, ভাষাবিদ নাট্যকার, দার্শনিক প্রভৃতি চরিত্রের মাধ্যমে নাট্য আলোচনার এক নতুন দিক তুলে ধরেন। কিন্তু এঁদের কোনও আলাদা নাম ছিল না (ব্যতিক্রম কালীকান্তবাবু)। সে দিক থেকে ‘জপেনদা জপেন যা’ গ্রন্থের মুখ্য চরিত্র জপেনদা এক ব্যতিক্রমী চরিত্র, যাঁকে বলাই যায় উৎপল দত্তের অলটার ইগো।

‘জপেনদা’ চরিত্রটি সৃষ্টির কারণ হিসাবে শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘মনে রাখতে হবে, নকশালবাদী আন্দোলনে তাঁর প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ও অতি অল্প কালের মধ্যেই মার্কসবাদী কমিউনিস্ট পার্টির প্রতি তাঁর আনুগত্যের অঙ্গীকার উৎপলবাবুকে যে অবস্থানে তখন এনে দাঁড় করিয়েছে তাতে স্বপরিচয়ে সরাসরি-কোন-কিছু বলতে গেলেই নানা দিক থেকেই ইট-পাটকেল এসে পড়তে পারে। জপেনদাই কেবল অনেক-কিছু বলে পার পেয়ে যেতে পারেন।’’ (ভূমিকা, উৎপল দত্ত গদ্য সংগ্রহ-১)।

কে এই জপেনদা? তাঁর এক শাগরেদের ভাষায়, ‘‘উনি শুধু বাক্যবাগীশ, কথার জেহাদি, বিশুদ্ধ তাত্ত্বিক, এক জন নির্লিপ্ত বিশেষজ্ঞ।’’ কিন্তু শুধুই কি তাই?

জপেনদার চিন্তা সর্বতো ভাবে মার্ক্সবাদী। তাঁর পাণ্ডিত্যের গভীরতা, বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে তাঁর অনায়াস বিচরণ, শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির রাজনৈতিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক জটিল প্রেক্ষাপট প্রাঞ্জল ভাষায় বিশ্লেষণ পাঠককে চমকিত করে, তাঁকে নাটকের এক জন দীক্ষিত দর্শক হিসাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করে। যিনি নাটক ভালবাসেন, জপেনদার পলেমিক্‌স তাঁর অবশ্যপাঠ্য।

জপেনদা তাত্ত্বিক বটে, কিন্তু শুধু ঘরে বসে তত্ত্ব আওড়ানোর বান্দা নন। জনসভায়, রাজপথে, থিয়েটারে, জনতা-পুলিশের সংঘর্ষে আলোড়িত ধর্মতলায়, অস্ত্র হাতে অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ায় অঙ্গীকারবদ্ধ কৃষক যোদ্ধাদের মাঝখানে, আবার চায়ের দোকানে নকশালপন্থী যুবক রাজেনের সঙ্গে তাত্ত্বিক আলোচনায়, সর্বত্রই বিরাজমান অদ্বিতীয় জপেনদা।

যেমন শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির উপর বিপ্লবোত্তর সোভিয়েট ইউনিয়নে পার্টি লাইন চাপিয়ে দেওয়া সংক্রান্ত বহু গুজবকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে জপেনদা বলেন, ‘‘৩১ খণ্ডের ৩১৭ পৃষ্ঠা পড়লে দেখবি লেনিন প্রোলেতারীয় সংস্কৃতিকে রীতিমতো ব্যঙ্গ করেছেন; বলেছেন অতীতকে ছাঁটাই করার পরিবর্তে মার্কসবাদ গত দু হাজার বছরের চিন্তা ও সংস্কৃতির মধ্যে যা কিছু মূল্যবান সব আত্মস্থ করে নিয়েছে, তার রূপান্তর ঘটিয়েছে। সেইজন্যই মার্কসবাদ বিপ্লবী প্রোলেতারিয়েতের মতাদর্শ, সেটাই মার্কসবাদের ঐতিহাসিক তাৎপর্য। এখানে আবার আলাদা করে প্রোলেটকুলটের প্রয়োজন নেই।’’ তাঁর কাছেই জানতে পারি, ‘‘পাস্তেরনাকের কবিতা ভালবাসতেন স্তালিন এবং পাস্তেরনাক তাঁর ‘কিং লিয়ার’ উপন্যাসে সরাসরি স্তালিনকে হিংস্র আক্রমণ করলেও স্তালিন কবির কাজে বাধা দেননি।’’ এই ভাবেই ক্রুশ্চভ-সলৎঝিনিৎসিন চক্র এবং তাঁদের মদতে পুষ্ট মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রসাদলিপ্সু ভাড়াটিয়া লেখকদের তৈরি মিথ্যার সৌধ তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে।

জপেনদার বক্তব্যে স্ববিরোধিতা নেই, তা নয়। কিন্তু তাঁর বক্তব্যের মধ্যে দিয়ে উৎপল দত্ত চিন্তাজগতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী বহু বিষয়ের অবতারণা করেছেন, এ কথা অত্যুক্তি নয়। তাঁর ভাষা ও ভঙ্গিতে ফুটে ওঠে, শক্তি বিশ্বাস উবাচ ‘‘কৌতুকের কোমল সুর, কখনো বিদ্রুপের কর্কশ স্বর, কখনো ক্রোধের বজ্র নির্ঘোষ।’’

শিবাজী ভাদুড়ী

সাঁতরাগাছি, হাওড়া

নিষ্কৃতি চাই

আমি আজ দীর্ঘ ছ’বছর ধরে প্রায় শয্যাশায়ী। মেরুদণ্ডের এক অপারেশনের ফলে আমার ভাল হওয়ার আশা নেই। তাই নতুন সরকারের কাছে আবেদন করছি, যাঁরা হাঁটতে-চলতে পারেন না, বিছানায় শয্যাশায়ী, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত, তাঁদের মধ্যে যাঁরা প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে কাছে ডাকেন, এই পৃথিবীর সব আনন্দ, মায়া কাটিয়ে মুক্তির অপেক্ষায় বসে আছেন—তাঁদেরকে কাউন্সেলিং করে, তার পর যদি মনে হয়, মৃত্যুর মাধ্যমে নিষ্কৃতি দেওয়া হোক। এই আইন ভীষণ প্রয়োজন। সুস্থ মানুষ এর প্রয়োজনীয়তা বুঝতে পারবে না।
সমীর সাহা
মাথাভাঙা, কোচবিহার

প্রথম গান

‘কবি-গীতিকার’ (কলকাতার কড়চা, ৬-৫) শিরোনামে অমিয় বাগচি সম্পর্কিত প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের প্রথম রেকর্ডের গান অমিয় বাগচির লেখা। সঠিক তথ্য হল, মেগাফোন থেকে প্রকাশিত জীবনের প্রথম রেকর্ডে দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় গেয়েছিলেন সত্যজিৎ মজুমদারের কথায়-সুরে ‘তুমি নাই তুমি নাই’ এবং ‘এলো রে এলো আলোর পাখি’।
স্বপন সোম
কলকাতা-৩৭

মূর্তির ইতিহাস

‘বিচিত্রকর্মা ভাস্কর-চিত্রী’ (কলকাতার কড়চা, ৩-৬) শীর্ষক খবরে লেখা হয়েছে, চৌরঙ্গীর শেষে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের গোড়ায় বাংলার বাঘ স্যর আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের যে মূর্তিটি আছে, সেটি নির্মাণ করবার জন্য ভাস্কর দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরীকে আইএফএ-র তরফে সন্তোষের মহারাজা বরাত দিয়েছিলেন। কিন্তু রূপক সাহার ‘ইতিহাসে ইস্টবেঙ্গল’ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯২৪ সালে আশুতোষের মৃত্যুর পর মূর্তিটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় ইস্টবেঙ্গল ক্লাব। প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের তৎকালীন সভাপতি সন্তোষের মহারাজা। মূর্তিটির খরচ তোলার জন্য ডালহৌসি মাঠে একটি প্রদর্শনী ফুটবল ম্যাচের আয়োজন করা হয়েছিল। এই প্রদর্শনী ম্যাচ থেকে দু’হাজার টাকা সংগৃহীত হয়। ওই টাকা থেকেই মূর্তি বসানোর কাজ শুরু হয়। মূর্তিটি এখনও মহানগরীর অন্যতম দ্রষ্টব্য হয়ে বিরাজ করছে। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের নাম লেখার কোথাও উল্লিখিত হয়নি।
সুকমল ঘোষ
কলকাতা-১৯

প্রতিবেদকের উত্তর: দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরীই তাঁর স্মৃতিকথায় সন্তোষের মহারাজা ও আইএফএ-র কথা লিখেছেন, সেটিই কড়চা-য় উদ্ধৃত হয়েছে। তবে মূল ঘটনার বহু দিন পরে লিখতে গিয়ে সম্ভবত তাঁর স্মৃতিবিভ্রম ঘটেছিল, কারণ কমল সরকার তাঁর ‘কলকাতার স্ট্যাচু’ বইয়ে (পৃ. ১৫৩-৫৬) এই মূর্তি নির্মাণের বিস্তারিত বিবরণেও ইস্টবেঙ্গলের ভূমিকা স্পষ্ট বিবৃত করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Utpal Dutt
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE