কিছু দিন আগে বেশ ঢক্কানিনাদ করে ঘোষিত হল— মুম্বই আমদাবাদ পর্যন্ত ছুটবে বুলেট ট্রেন। মাত্র দুই ঘণ্টায় সেই ট্রেন অতিক্রম করবে ৫০০ কিমি পথ। সর্বোচ্চ গতিবেগ নাকি ঘণ্টায় ৩৫০ কিমি উঠতে পারবে। ৩০০ কিমি বা তার বেশি গতিবেগ নিয়ে ট্রেন চলতে পারে পৃথিবীতে এ রকম দেশ আছে মাত্র ৮টি। আমাদের দেশ ২০২২ সালেই প্রযুক্তির অনন্যসাধারণ প্রয়োগ করে সেই তালিকায় নিজের নাম তুলবে। ট্রেন অত গতিতে যাবে, কোনও দুর্ঘটনা ঘটবে না তো? সে সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনাশ করতে তৈরি করা হবে আলাদা রেলপথ। চলবে সব সময় তদারকি, মনিটারিং। সরকার জানিয়েছে, রেলে লক্ষাধিক শূন্যপদ থাকলেও, রেল নিরাপত্তার জন্য লক্ষাধিক পদ খালি থাকলেও, প্রচুর প্রহরীবিহীন লেভেল ক্রসিং থাকলেও, বুলেট ট্রেন চলার জন্য লোকের খামতি হবে না।
অত টাকা কোথা থেকে আসবে? বুলেট ট্রেনের দায়িত্বে থাকা ‘ন্যাশনাল হাইস্পিড রেল কর্পোরেশন’-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর অমল খারে জানিয়েছিলেন, ‘‘জাপানে যেখান দিয়ে বুলেট ট্রেন গিয়েছে সেখানে আয় বেড়েছে দুরন্ত গতিতে। যদি গড় উন্নতির হার ৬০-৭০ শতাংশ হয়, তা হলে যেখান দিয়ে বুলেট ট্রেন গিয়েছে সেখানের উন্নতির হার ১৫০ শতাংশ।’’ কিন্তু ভারতে রেলপথ আছে ৬৭ হাজার কিমি আর বুলেট ছুটবে মাত্র ৫০৮ কিমি। অর্থাৎ ১ শতাংশেরও কম— কমবেশি ০.৭৫ শতাংশ। যদি খারের কথা সত্যি বলে মেনে নেওয়া যায়, তা হলে, দেশের বাকি অংশের ট্রেন যদি কোনও দুর্ঘটনা না ঘটিয়ে সময়ে চলাচল করে, তার তুলনায় ০.৭৫ শতাংশ বুলেট যাত্রার পথে উন্নতি হবে দুই থেকে আড়াই গুণ বেশি।
যাঁদের ট্রেনে চলাচলের অভিজ্ঞতা আছে, তাঁরা জানেন ভারতীয় রেল ঠিক কতটা দেরি করে চলে। তা হলে যেখানে ট্রেন লেট করে চলবে সেখানে অর্থনৈতিক অবনতির মান শতাংশের বিচারে কতটা? রেলের দেওয়া সূত্র অনুসারে, বেশির ভাগ দূরপাল্লার ট্রেন গড়ে ৮ ঘণ্টা দেরিতে চলে। একই সঙ্গে বলে রাখা যায়, ভারতীয় রেলে প্রতি দিন ২.৩ কোটি মানুষ চলাচল করেন, যা গোটা অস্ট্রেলিয়ার লোকসংখ্যার সমান। এবং এই যাত্রীদের ৯৫.৩৫ শতাংশই যাতায়াত করেন স্লিপার বা সাধারণ কামরাতে। তথ্য বলছে, দেড়শো বছর অতিক্রম করা প্রায় ৮,০০০ স্টেশন ছুঁয়ে যাওয়া ভারতীয় রেলে ২০১৪ সালে দুর্ঘটনায় ২৭,৫৮১ জন মারা গিয়েছিলেন (তথ্য: ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড বুরো)। সারা পৃথিবীতে রেল দুর্ঘটনায় ২০১৬ সালে ভারতীয় রেল প্রথম। ২০১৭ সালে তার ব্যতিক্রম হয়নি। কলকাতা মেট্রোয় ২০১৪ সাল থেকে সাম্প্রতিক আগুন লাগার ঘটনা পর্যন্ত চার বার আগুন লেগেছে, এক বার লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ২০১২ সালে সরকার গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি দুর্ঘটনা এবং দুর্ঘটনায় মৃত্যু এড়াতে পুরনো প্রযুক্তির ৪০ হাজার কোচকে বদলানোর সুপারিশ করেছিল। কিন্তু যাত্রী নিরাপত্তার স্বার্থ এই বিষয়টিতে যুক্ত থাকলেও, যে গতিতে কাজ হচ্ছে তাতে সমস্ত কোচ বদলাতে ৩০ বছর লেগে যাবে এবং তত দিনে বদলানো কোচ আবার বদলানোর প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে।
গুজরাতের ৬.৭ কোটি লোকের জন্য অত্যাধুনিক ব্যবস্থা, চূড়ান্ত নিরাপত্তায় মোড়া পথেই তাঁদের পৌঁছতে হবে মুম্বই। অন্য দিকে নিত্যদিনের জীবন সংগ্রামের জন্য নিরাপত্তাহীন পথে গাদাগাদি করে শহরের বা দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ৯৫ শতাংশ মানুষকে যাতায়াত করতে হবে। এক দিকে ‘শাইনিং ইন্ডিয়া’, অন্য দিকে ভারত। এক দিকে ০.৭৫ শতাংশ রেললাইনে বুলেট চলবে ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে, অন্য দিকে সাধারণের জন্য বরাদ্দ ট্রেন-মেট্রো ঘণ্টার পর ঘণ্টা লেটে চলবে বা দুর্ঘটনার কবলে পড়বে।
২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে একটি বিজ্ঞাপন অনেকেরই মনে আছে। দেখানো হচ্ছে, দুই মহিলা (রাজস্থানে) জল আনতে বহু দূর গিয়েছেন; কিন্তু সেখানে গিয়েও জল পাচ্ছেন না। তখন বসে পড়ে এক মহিলা অন্য জনকে বলছেন, তাঁদের এই কষ্ট শীঘ্রই দূর হবে, কারণ ‘ইসকি বাদ মোদী সরকার’। পাঁচ বছর পরে রাজস্থানের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির পরাজয় হয়েছে। গ্রীষ্মে রাজস্থানে ট্রেন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অন্য কথা বলে। স্টেশনে কোনও দূরপাল্লার ট্রেন দাঁড়ালেই কাতারে কাতারে মানুষ ট্রেনের দিকে ছুটে আসেন, কোনও চুরি-ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্য নিয়ে নয়, ট্রেন থেকে জল নিতে। সেই অঞ্চলে বহু বর্গকিমিতে কোনও জলের ব্যবস্থা নেই। গ্রীষ্মকালে গ্রামের স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ালে লোক এখনও ছুটছে জল আনতে— এটাই বাস্তব, এটাই ভারত। আর বুলেট ট্রেনের প্ল্যাটফর্মে টিকিট ছাড়া অন্য কেউ ঢুকতেই পারবে না— ও সব জল নেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।
সুদীপ্ত চক্রবর্তী
ঝিলপাড়, হুগলি
চ্যানেল যোগ
আমার বয়স ৭০ বছর। গত আট বছর যাবৎ টাটা স্কাই-এর গ্রাহক। গত ২৬-১১-২০১৮, আমি ৫৭০ টাকা দিয়ে দুটো টিভি সেটের জন্য এক মাসের জন্য টাকা জমা করি। আমার সুইচ অফ ডেট দেখানো হয় ২৭-১২-২০১৮। কিন্তু দু’দিন পর টিভি স্ক্রিনে দেখি, আমার সুইচ অফ-এর তারিখ আর দু’তিন দিনের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে কাস্টমার কেয়ারে ফোন করলে বলা হয়, কেউ আপনার আইডি-তে চ্যানেল যোগ করে দিয়েছে। তাও ছ’মাসের জন্য! এবং আমার পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বর ছাড়া কোনও এজেন্ট বা ব্যক্তি চ্যানেল যোগ বা বিয়োগ করতে পারে কি?
মিতা ঘোষাল
টুনু মুখার্জি সরণি
সেই বিগ্রহ
একটা পুরনো ‘দেশ’ পত্রিকার একটি লেখা পড়ছিলাম। রচনাটির নাম ‘সহস্রান্তিক’ (১০০১-২০০০) হাজার বছরের ঘটনাবলির বিবরণ। ‘‘১২৫০-৬০ এই পর্বে ওড়িশার রাজা লাঙ্গুলিয়া নরসিংহদেব কোনারকের সূর্য মন্দিরটি নির্মাণ করেন। ১৭ শতকের গোড়ার দিকে দিল্লির বাদশাহ সেলিমের সময়ে ওড়িশার সুবাদার বাখর খাঁর অত্যাচারের ভয়ে মন্দিরের মূল বিগ্রহ ‘মৈত্রাদিত্য বিরিঞ্চদের’ পুরীর পুরুষোত্তম মন্দিরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেই বিগ্রহ আর পাওয়া যায়নি।’’
কয়েক বছর আগে পুরীর মন্দির দর্শন করতে গিয়ে মন্দিরের মধ্যে অন্য দেবতাদের মন্দিরও দর্শন করি। একটি মন্দির আছে ‘চন্দ্র-সূর্য’-এর মন্দির। ভিতরে গিয়ে দেখলাম, মূর্তি নয়, পটে পুজো হয়। পান্ডাকে জিজ্ঞাসা করায় তিনি বললেন, ভাঙা মূর্তি পুজো করা যায় না, তাই মূর্তির সামনে পটে পুজো হয়।
আমার বটুয়ায় একটি ছোট টর্চ ছিল। তার সাহায্যে পটের পিছনের মূর্তিটি দেখার চেষ্টা করি। কালো গ্রানাইট স্টোনের, প্রমাণ মানুষ সমান উঁচু একটি মূর্তি। ভাল দেখতে পেলাম না। কিন্তু একটা অদ্ভুত ব্যাপার— মূর্তির পায়ে জুতো। আমাদের তেত্রিশ কোটি দেবদেবীর মধ্যে একমাত্র সূর্যদেবই জুতো পরেন। তবে কি, না-খুঁজে পাওয়া বিগ্রহটিই এখানে লুকিয়ে রাখা আছে?
শান্তি পান
উত্তরপাড়া, হুগলি
জঞ্জাল পুড়ছে
গত এক বছর ধরে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, সোদপুর থেকে কল্যাণী পর্যন্ত বিস্তৃত কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের দু’ধারে সংলগ্ন পুরসভা ও পঞ্চায়েতগুলি সংগৃহীত আবর্জনা ফেলছে ও সেগুলো আগুন দিয়ে পোড়াচ্ছে। পুরো রাস্তার দু’পাশে প্রচুর জনবসতি রয়েছে। এ ভাবে আবর্জনা ফেলে তা পুড়িয়ে ফেলার ফলে সমগ্র অঞ্চলের পরিবেশ ভয়ঙ্কর ভাবে দুষিত হয়ে পড়ছে। চার পাশ অস্বাস্থ্যকর ধোঁয়ায় ও উৎকট গন্ধে ভরে থাকে সব সময়। বিশেষত শীতকালে এই দূষণ ভয়াবহ আকার নিয়েছে। প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্য পোড়ানো হচ্ছে, কোনও নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই।
সোহম মণ্ডল
কলকাতা-১১০
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy