Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Asit Sen

সম্পাদক সমীপেষু: অন্য মানিক

অতীতের পথ ধরে চললে দেখা যাবে, সুচিত্রা সেনের কেরিয়ারে তিনটি সেরা অভিনয় ছিল অসিত সেন পরিচালিত ছবিতেই।

শেষ আপডেট: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৭:৫৬
Share: Save:

‘স্বর্ণযুগের আর এক মানিক অসিত সেন’ (পত্রিকা, ৫-২) প্রবন্ধ প্রসঙ্গে আমার এই চিঠি। একই আকাশে দুই মানিক। মিল অবশ্য শুধু নামেই। এক মানিক অর্থাৎ সত্যজিৎ রায়, যাঁর মূল লক্ষ্য ছিল বাস্তবধর্মী ছবি নির্মাণ। আর অন্য মানিক অসিত সেন, যিনি সিদ্ধহস্ত ছিলেন আবেগধর্মী ছবি তৈরিতে। তাঁর ছবি বাংলা ও হিন্দি দু’ভাষাতেই সফল। সিনেমাকে তিনি দিয়েছেন অবিস্মরণীয় কিছু গান। চটকদার পরিচালক ছিলেন না অসিত সেন। কিন্তু বেশির ভাগ ছবিতেই তিনি বর্ণনামূলক সেতু হিসাবে প্যানিং শট এবং ল্যাপ ডিসলভ-এর ব্যবহার করতেন। তাঁর নির্মিত প্রথম বাংলা ছবি চলাচল (১৯৫৬) বক্স অফিসে তুমুল সাড়া ফেলেছিল। তিনি প্রায় ২০টি হিন্দি এবং বাংলা ছবি পরিচালনা করেন।

অতীতের পথ ধরে চললে দেখা যাবে, সুচিত্রা সেনের কেরিয়ারে তিনটি সেরা অভিনয় ছিল অসিত সেন পরিচালিত ছবিতেই। তার মধ্যে দীপ জ্বেলে যাই মুক্তি পায় ১৯৫৯ সালে। অন্যটি, একই ছবির দু’টি ভাষায় সংস্করণ। বাংলায় উত্তর ফাল্গুনী (১৯৬৩) এবং হিন্দিতে মমতা (১৯৬৬)। লক্ষণীয়, এই তিনটি ছবির কোনওটিতে উত্তম কুমার ছিলেন না নায়কের চরিত্রে। ১৯৬৯ সালে দীপ জ্বেলে যাই-এর হিন্দি সংস্করণ খামোশি ছবিতে ওয়াহিদা রহমানকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন অসিত সেন।

আনোখি রাত ছবিটির মাধ্যমে হিন্দি ছবির পরিচালনায় আত্মপ্রকাশ করেন অসিত সেন। বলা হয়ে থাকে, এটিই প্রথম ভারতীয় ছবি, যেখানে দু’জন সঙ্গীত পরিচালক কাজ করেছিলেন। তাঁর ছবির বেশির ভাগই প্রচলিত সাহিত্য থেকে নেওয়া। অভিনেতাদের থেকে নিখুঁত অভিনয় বার করে আনার দক্ষতা ছিল যথেষ্ট। ভাল গান ও দৃশ্যায়ন ছিল তাঁর বিশেষ সম্পদ। ১৯৮৫ সালে তাঁর শেষ ছবি প্রতিজ্ঞা মুক্তি পায়। জীবনের শেষ কিছু বছর সিনেমা জগৎ থেকে তিনি গুটিয়ে নিয়েছিলেন নিজেকে। ছায়াছবির ইতিহাসে অসিত সেনের ভূমিকা নিয়ে গবেষণা করার জন্য তাঁর কিছু মূল্যবান ছবি তিনি রেখে গিয়েছেন চলচ্চিত্র গবেষক দলের জন্যে। ২০০১ সালের ২৫ অগস্ট বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি আর এক মানিক অসিত সেন চলে যান দুরারোগ্য কর্কট রোগে আক্রান্ত হয়ে।

উৎপল মুখোপাধ্যায়

চন্দননগর, হুগলি

শতবর্ষ আগে

সেই দিনটা ছিল ২৮ মাঘ, ১৩২৮ বঙ্গাব্দ (১০ ফেব্রুয়ারি ১৯২২)। উত্তরপ্রদেশের কানপুরে বাঙালিদের অন্যতম প্রতিষ্ঠান ‘বঙ্গসাহিত্য সমাজ’-এর বার্ষিক সভায় বহির্বঙ্গের কয়েক জন বঙ্গসাহিত্যসেবীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। উদ্দেশ্য, “বহির্বঙ্গের বাঙালিদের মাতৃভাষার প্রতি ঔদাসীন্য দূর করা এবং বাংলার সাহিত্য সংস্কৃতির সঙ্গে একাত্মতা স্থাপন— বিষয়ে উপায় নির্ধারণ।” সভার আহ্বায়ক ‘সমাজ’-এর কর্ণধার সমাজসেবী ডা. সুরেন্দ্রনাথ সেন। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সে দিন সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন, লখনউয়ের অতুলপ্রসাদ সেন, রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায়, রাধাকমল মুখোপাধ্যায়। কানপুরের শচীন্দ্রনাথ ঘোষ, চন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, নেপালেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায়, বিমলচন্দ্র মুখোপাধ্যায়, মহেন্দ্রচন্দ্র রায় প্রমুখ। সভায় অতুলপ্রসাদ সেন সভাপতিত্ব করেন এবং তাঁর ভাষণে (‘প্রবাসে বঙ্গ সাহিত্য চর্চ্চা’) বহির্বঙ্গে বাঙালিদের ‘সাহিত্যের উন্নতিকল্পে’ একটি ‘প্রাদেশিক সাহিত্য সম্মিলনী’ গঠনের প্রস্তাব দেন। তাঁর পরিকল্পনা ছিল, “প্রাদেশিক সাহিত্য সম্মিলনীতে সম্বৎসরে একবার সাহিত্যপ্রেমী বাঙালীরা সম্মিলিত হইয়া সাহিত্যালোচনা করিবে এবং সাহিত্য প্রচার সম্বন্ধে সদুপায় উদ্ভাবন করিবে।” এর সঙ্গে ওই ‘সাহিত্য সম্মিলনী’ থেকে একটি সচিত্র মাসিক পত্রিকা প্রকাশের কথাও তিনি বলেছিলেন।

এই প্রস্তাবকে মান্যতা দিয়ে সে দিন গঠন করা হয় ‘উত্তর ভারতীয় বঙ্গ সাহিত্য সম্মিলন’। পরের বছর ১৯-২০ ফাল্গুন, ১৩২৯ (৩-৪ মার্চ, ১৯২৩) সালে বারাণসীতে সেখানের ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’-এর সহযোগিতায় রবীন্দ্রনাথের সভাপতিত্বে এই সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন হয়। সেই থেকে এই সাহিত্য সম্মেলন বঙ্গে ও বহির্বঙ্গের নানা জায়গায় তাদের বার্ষিক অধিবেশন করে আসছে। উত্তরা (১৩৩২) নামে একটি মাসিক পত্রিকাও সম্মেলনের মুখপত্র রূপে প্রকাশিত হয়। অতুলপ্রসাদ ছাড়া রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়, রাধাকমল মুখোপাধ্যায়, রাধাকুমুদ মুখোপাধ্যায়, সরলাদেবী চৌধুরাণী, প্রমথ চৌধুরী, প্রফুল্লচন্দ্র রায়, অনুরূপা দেবী-সহ সাম্প্রতিক কালের বহু বিদ্বজ্জন ও সাহিত্যসেবী এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং এখনও আছেন। তবে পরে এই সম্মেলনের নাম পরিবর্তিত হয় ‘প্রবাসী বঙ্গ সাহিত্য সম্মিলন’ (১৯২৫-৫২) এবং ‘নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন’ (১৯৫৩-বর্তমান সময়) নামে।

সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে বাঙালিদের এটি একটি বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান। এর কর্মকাণ্ড বিস্তৃত ও ব্যাপক। মূল উদ্দেশ্যটি হল, বহির্বঙ্গে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা ও প্রসারে সহায়তা করা। সারা ভারতে সম্মেলনের শাখা আছে শতাধিক। এই বছর এই সাহিত্য সম্মেলনের শতবর্ষ বাঙালিদের কাছে এক গর্বের বিষয়। এই উপলক্ষে বর্ষব্যাপী দেশ জুড়ে নানা রকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বহু বিশিষ্ট জন ও সম্মেলনের কর্তাদের উপস্থিতিতে ‘মঙ্গলঘট’ স্থাপনের মধ্য দিয়ে তার শুভ সূচনা হল গত ১১ ফেব্রুয়ারি শতবর্ষ আগের রবীন্দ্র-স্মৃতিধন্য বারাণসীতে।

অমরনাথ করণ

কলকাতা-১৩৫

ধারাবাহিক শিক্ষা

সমাজ সচেতনতার জন্য বিনোদনের অনেক মাধ্যমের মধ্যে টিভি একটি অন্যতম মাধ্যম। টিভির অনেক অনুষ্ঠানের মধ্যে ধারাবাহিকের একটা ভূমিকা আছে, যা মানুষের বিনোদনের একটা অঙ্গ। কিন্তু বাংলা সিরিয়ালে এখন যা দেখানো হচ্ছে, তা দেখতেও ভয় পাই। একান্নবর্তী পরিবার মানেই সেখানে নানা
কুচক্রীর ভিড়, সংসার নষ্ট করার জন্য এক ভাই অপর ভাইয়ের অনিষ্ট করছে, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক, এবং আরও নানা নমুনা। কোথাও দেখানো হচ্ছে এক বিধায়কের নানা অবৈধ কাজ, টাকা ছিনতাই, নারী অপহরণ, গুন্ডা পোষা। কোথাও আবার দেখানো হচ্ছে, এক মানসিক প্রতিবন্ধীর উপর তার ভাইয়ের বার বার চাবুক দিয়ে আঘাত করা, সৎমার চড়-থাপ্পড়, সকলে মিলে অপমান করা। এর থেকে আমরা কী শিক্ষা পাচ্ছি? সমাজকে উন্নত করার জন্য এই ধারাবাহিকগুলোর কি কোনও ভূমিকা নেই?

রণেন মুখোপাধ্যায়

মেমারি, পূর্ব বর্ধমান

শীতে সার্কাস

শীতকাল এলেই আমরা অধীর আগ্রহে চেয়ে থাকতাম বাড়ি সংলগ্ন বড় মাঠটির দিকে, যেখানে প্রতি শীতে এক মাস ধরে বিরাট তাঁবু পড়ত। বিভিন্ন সার্কাস দল আসত। অলিম্পিক সার্কাস, নিউ এম্পোরিয়াম সার্কাস, এশিয়ান সার্কাস ইত্যাদি অনেক নাম। জোকারের হাস্যকৌতুক, খেলোয়াড়দের রং-বেরং পোশাক পরে নানা রকম জিমন্যাস্টিক্স, যেমন— ট্র্যাপিজ়ের খেলা, দমবন্ধ করা ব্যালান্সের খেলা দর্শকদের মুগ্ধ করত। বাঘ ও সিংহের খেলা আইনত এখন বন্ধ। আগে বাঘ, সিংহ, ঘোড়া, হাতি, জলহস্তি ও নানা রকম বিদেশি পাখির হরেক রকম খেলা আমরা অবাক হয়ে দেখতাম। দিনে তিনটে করে শো চলত। বিশেষ অর্কেস্ট্রা সহযোগে শো শুরু হত ও মাঝে মাঝে অর্কেস্ট্রার সুন্দর বাজনা খেলায় এক অন্য মাত্রা আনত। ১৯৯৮ সাল থেকে বন্যপ্রাণীর খেলা বা প্রদর্শন আইনত বন্ধ হওয়ার পর থেকেই সার্কাসের দুঃখের দিনের শুরু। বহু মানুষের রুজিরোজগার বন্ধ হয়ে যায়। অনেক সার্কাস কোম্পানি তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে থাকে। এখনকার ছোট ছেলেমেয়েদেরও যেন সার্কাস নিয়ে আগ্রহ কম। সরকারও সার্কাসের ব্যাপারে আগ্রহী নয়।

সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়

চুঁচুড়া, হুগলি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Asit Sen cinema
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE