Advertisement
E-Paper

আমিও বিপদে আছি আমেরিকায়, কিন্তু চিন্তা হচ্ছে দেশের জন্য

এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা মনোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।নিজের দেশের জন্য বেশি চিন্তা হচ্ছে। পৃথিবীর মধ্যে ভারতের জনঘনত্বই সবচেয়ে বেশি। ওখানে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেলে সামলানো যাবে না।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২০ ১৮:০২
খাঁ খাঁ করছে গোটা শহর। —নিজস্ব চিত্র।

খাঁ খাঁ করছে গোটা শহর। —নিজস্ব চিত্র।

আমেরিকার ইন্ডিয়ানায় যে শহরে আমরা থাকি তার নাম সাউথ বেন্ড। চেনা জায়গাটা কয়েক দিন ধরেই কেমন যেন অচেনা হয়ে গিয়েছে। আমি পূর্ব বর্ধমানের ছেলে। আমার ছেলেবেলা, বড় হয়ে ওঠা সবই পশ্চিমবঙ্গে। ২০১৯-এর জুনে স্ত্রীকে নিয়ে এখানে আসি। পুরোপুরি একটা নতুন পরিবেশ হলেও আমাদের মানিয়ে নিতে খুব একটা অসুবিধা হয়নি। তার কারণ হল এখানকার মানুষের ব্যবহার আর অপরিচিত মানুষকে আপন করে নেওয়ার মানসিকতা।

এখানে শনি আর রবি, সপ্তাহে দু’দিন ছুটি থাকে। এই দু’টো দিন সবাই প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে হইহই করে সময় কাটায়। সমস্ত রেস্তরাঁ-পানশালাগুলিতে ভিড় থাকে। কিন্তু মার্চের শুরু থেকে এই চেনা ছবিটাই ধীরে ধীরে বদলে যেতে লাগল। ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে আমেরিকায় যখন প্রথম করোনা ধরা পড়ল, তখন এখানকার সরকার বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে খুব একটা উদ্বিগ্ন হওার প্রয়োজন নেই বলা হয়েছিল। যে কারণে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় ‘ইউনিভার্সিটি অব নোত্র দাম’, এলাকার সমস্ত অফিস, রেস্তরাঁ সবকিছুই স্বাভাবিক ছিল।

তার পরই বিভিন্ন প্রজেক্ট নিয়ে বিদেশে যাওয়া ছাত্রদের আচমকা ফিরিয়ে আনা হল। নির্দেশ দেওয়া হল, বিনা প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বেরনো যাবে না। স্নাতকস্তরের পড়ুয়া, যাঁরা কোনও গবেষণার সঙ্গে যুক্ত নয়, বাধ্যতামূলক ভাবে তাঁদের সকলকে বাড়ি ফিরে যেতে বলা হল। আমরা যাঁরা গবেষণার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদেরও জানিয়ে দেওয়া হল, পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। সকলকে তৈরি থাকতে হবে। যে কোনও মুহূর্তে ল্যাবে ঢোকা নিষিদ্ধ হয়ে যেতে পারে।

আরও পড়ুন: জীবাণুনাশক স্প্রে করা হল এ ভাবে? ভয়ঙ্কর ভিডিয়ো, বিতর্কে যোগী সরকার​

তখনই বুঝতে পারছিলাম যে, খুব শীঘ্র লকডাউন হতে চলেছে। ২০ মার্চ মেয়র জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলে আমাদের সেই ধারণাই সত্য প্রমাণিত হয়। জরুরি অবস্থা ঘোষণা হওয়ার পর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়, এলাকার সমস্ত অফিস, রেস্তরাঁ বন্ধ হয়ে য়ায়। রাস্তাঘাটে দু’একটা যানবাহন দেখা গেলেও, সকলকে বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়। তাতে অজানা আতঙ্ক চেপে বসে মানুষের মনে। প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে বাড়িতে মজুত করতে শপিং মলে ভিড় জমাতে শুরু করেন সকলে, যার ফলে এখন ওই শপিংমলগুলি একেবারে ফাঁকা। টয়লেট পেপার, টিস্যু, হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। অ্যামাজন এবং ওয়ালমার্ট থেকে অনলাইন শপিং করতে গেলেও সমস্যা হচ্ছে। যাও বা কিছু পাওয়া যাচ্ছে, সব কিছুরই দাম অত্যন্ত চড়া।

আরও পড়ুন: করোনা সাহায্যে হাত গুটিয়ে এঁরা অনেকে, দিলেনও অবশ্য অনেকেই​

সাউথ বেন্ডে এখনও পুরোপুরি লকডাউন ঘোষণা হয়নি। তেমনটা হলে পরিস্থিতি হয়ত আরও খারাপ হবে। আজ লেখাটা যখন লিখছি, ইন্ডিয়ানাতে আক্রান্তের সংখ্যা ১৫০০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। আগামী দিনে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে চলেছে। বাড়ি থেকে বাবা-মা বলছিলেন দেশে ফিরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আমাদের মনে হল, যেখানে আছি সেখানেই থেকেযাওয়া ভাল। তবে নিজের দেশের জন্য বেশি চিন্তা হচ্ছে। পৃথিবীর মধ্যে ভারতের জনঘনত্বই সবচেয়ে বেশি। ওখানে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে গেলে সামলানো যাবে না। কিন্তু এই মুহূর্তে প্রার্থনা ছাড়া আর কীই বা করতে পারি আমরা।

ডঃ দীপায়ন চক্রবর্তী

ইউনিভার্সিটি অফ নোত্র দামের পোস্ট ডক্টরাল গবেষক

Letters To The Editor Readers Feedback On Lockdown Coronavirus US Indiana
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy