Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
readers letters

খাওয়ার জল আনতে গিয়ে পুলিশের লাঠি, অন্য লড়াই সরশুনার ‘সেল্‌ফ’-এর!

এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।এই লকডাউন পরিস্থিতিতে পাঠকদের থেকে তাঁদের অবস্থার কথা, তাঁদের চারপাশের অবস্থার কথা জানতে চাইছি আমরা। সেই সূত্রেই নানান ধরনের সমস্যা পাঠকরা লিখে জানাচ্ছেন। পাঠাচ্ছেন অন্যান্য খবরাখবরও। সমস্যায় পড়া মানুষদের কথা সরকার, প্রশাসন, এবং অবশ্যই আমাদের সব পাঠকের সামনে তুলে ধরতে আমরা ম‌নোনীত লেখাগুলি প্রকাশ করছি।

এঁরা ভিন রাজ্যে গিয়ে এখন আক্ষরিক অর্থেই বন্দি। প্রতীকী ছবি।

এঁরা ভিন রাজ্যে গিয়ে এখন আক্ষরিক অর্থেই বন্দি। প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২০ ১৬:২০
Share: Save:

চিঠি-১: হায়দরাবাদে আটকে রয়েছি, কাজ বন্ধ, খাওয়ার টাকা নেই

আমার তিন ভাই বীরভূমের সিউড়ি সদর মহকুমার খয়রাশোল ব্লকের নাকড়াকোন্দা, পাচড়া,তারাপুর, দুবরাজপুরের বাবুবেড়া গ্রামের বাসিন্দা। হায়দরাবাদে কাজ করতে এসে আটকে পড়েছি। আমাদের কাজ বন্ধ। খাওয়ার জন্য টাকাপয়সা যা ছিল, সব শেষ হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় কী করব, ভেবে পাচ্ছি না। আমাদের বাড়ি যাওয়ার ব্যবস্থা করুন। না হলে খাবার খেতে কিছু টাকাপয়সা দিয়ে সাহায্য করুন। আমরা না খেয়ে মরে যেতে বসেছি।

সরেন দাস, মোবাইল-৬২৯৭২৬০২৬৫, ইমেল-sarendas24@gmail.com

চিঠি-২: খাওয়ার জল আনতে গেলে পুলিশের লাঠি খেতে হচ্ছে!

গত ৩ মার্চ আমরা ৫ জন সিএমসি ভেলোরে এসেছি আমার স্ত্রীর চিকিৎসা করানোর জন্য। তার পর থেকে এখানে আটকে পড়েছি। গত ১৫ দিন যদিও শুধু চাল আর ডাল পাওয়া যেত, এখন তা-ও পাওয়া যায় না। এমনকী, খাওয়ার জলও পাওয়া যায় না। জল আনতে গেলে পুলিশের লাঠি খেতে হচ্ছে। আমার স্ত্রীর অবস্থা ভীষণ খারাপ! যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি ফেরাটা খুব জরুরি। দয়া করে বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করুন।

ভেলোরে চিকিৎসা করাতে গিয়ে এঁরাই আটকে পড়েছেন। ছবি-লেখক।

মলয় দাস, ফোন- ৮৭৬৮২২২৩২৫

চিঠি-৩: এক অন্য লড়াই দেখাচ্ছে সরশুনার ‘সেল্‌ফ’

এক সমান্তরাল যুদ্ধ চলছে। চলছে টিঁকে থাকার লড়াই। এক দিকে মহামারীর বিরুদ্ধে আর অন্য দিকে অনাহারের বিরুদ্ধে। প্রথমটির জন্য দাওয়াই ঘরবন্দি থাকা। কিন্তু দ্বিতীয় যুদ্ধের ময়দানে পাশে চাই অনেক মানুষ। রাজ্যে লকডাউনের কোপে প্রতি দিন রোজগারের রাস্তা হারিয়ে ফেলছে বহু মানুষ। এই সব পথহারা মানুষের যাতে অনাহারে এই যুদ্ধে হেরে যেতে না হয়, তার বন্দোবস্ত করতে এগিয়ে এল বেহালার সরশুনা এথিক্যাল লাইফ ফাউন্ডেশন (সেল্‌ফ)। সরশুনা স্যাটেলাইট টাউনশিপে তাদের জনসংযোগ কার্যালয়েই দশ দিন ধরে ভোর বেলা থেকে শুরু হচ্ছে সেলফ-এর দেবব্রত রায়, প্রীতম ব্যানার্জিদের রাজসূয় যজ্ঞ।

সরশুনার ‘সেল্‌ফ’-এর অন্য লড়াই। ছবি-লেখক।

প্রত্যেক দিন ১০০ জন অসহায় গরিব মানুষকে ভাত-ডাল-তরকারির সাথে কখনও ডিম, চিকেন আবার কখনও পায়েসেরও ব্যবস্থা করছে সেল্‌ফ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র নির্দেশিকা মেনেই এতগুলো মানুষের খাবার তৈরিতে সেল্‌ফের সদস্যদের সাথে মুখে মাস্ক আর হাতে গ্লাভস পরে হাত লাগাচ্ছেন বহু মানুষ, কেউ বাড়ি থেকেই পাশে থাকছেন টাকা বা রান্নার সামগ্রী পাঠিয়ে। তবে সামনের দিনে এই কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে দরকার আরও বহু মানুষের সাহায্য। তবেই অন্তত একটা যুদ্ধে জয়ী হব আমরা।

তাপস রায়, শকুন্তলা পার্ক, বেহালা, মোবাইল-৮৪২০৫০৯৪৩৪, ইমেল- nilavo1995@gmail.com

চিঠি-৪: দুঃস্থদের ত্রাণে পদক্ষেপ পুরুলিয়ার একটি গ্রামে

পুরুলিয়া জেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম। নাম শ্রীমনপুর। গ্রামটার নাম আমিও আগে শুনিনি। প্রথম শুনলাম এক জন স্থানীয় সাংবাদিকের কাছ থেকে।করোনার থাবায় সারা বিশ্ব তছনছ হয়ে যাচ্ছে। সারা বিশ্বে মৃত্যুর মিছিল আর হাহাকার। বাদ যায়নি আমাদের দেশও। গ্রামটার বিশেষ বৈশিষ্ট হল, সবাই অত্যন্ত দরিদ্র যাদের পেশা ভিক্ষাবৃত্তি। আর এই গ্রামের বহু মানুষ এখনো কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত। মনটাকে নাড়া দিল

এই দুর্দিনের সময় এদের পাশে একটু দাঁড়ালে হয়। অফিসের সবাইকে ডেকে মনের কথাটা বললাম। সাড়াও পেলাম। সবাই রাজি।

প্রায় ২৭,০০০ টাকা চলে এল হাতে। সাত কুইন্টাল চাল, চার কুইন্টাল আলু আর হাফ কুইন্টাল লবণ কেনা হয়ে গেল।

কিন্তু ওই দুঃস্থ মানুষের কাছে পৌঁছনো যাবে কী করে! এগিয়ে এলেন সেই স্থানীয় সাংবাদিকই। ওখানকার স্থানীয় নেতাজী সুভাষ ক্লাব এগিয়ে এল।

ওঁদের হাতে তুলে দিলাম আমাদের অতি সামান্য দান। আমার সহকর্মীরা আমায় ধন্যবাদ দিলেন। কিন্তু এটা ধন্যবাদ পাওয়ার জন্য নয়।

শুধু ঈশ্বরকে বললাম যাদের সামর্থ আছে তারা যেন মানুষের এই দুর্দিনে মানুষের ধর্ম পালন করে আর আমরাও বার বার যেন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সঙ্গতি অর্জন করতেপারি। স্থানীয় পত্রিকার সেই সাংবাদিককে আমাদের ভালবাসা আর ক্লাবের সবাই যাঁরা আমাদের এই আর্ত মানুষের পাশে সামান্য হলেও দাঁড়াতে সুযোগ করে দিয়েছেন তাঁদেরও ধন্যবাদ।

গণেশ চন্দ্র মাইতি, সুপার, পুরুলিয়া স্পেশাল কারেকশনাল হোম

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE