Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

সম্পাদক সমীপেষু: দুয়ারে যখন গণচিতা

প্রতি বছর আমরা ২২ এপ্রিল ধুমধাম করে ‘আর্থ ডে’ পালন করি। পালন করছি পরিবেশ দিবস, জীববৈচিত্র দিবস। এ সব শুধু পালনই করা হয়, আমাদের হৃদয় স্পর্শ করে না।

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২০ ০০:২২
Share: Save:

জয়া মিত্রের ‘পুড়বে কয়লা, জ্বলবে মানুষ’ (২৫-৭) লেখাটি প্রাসঙ্গিক ও মনোগ্রাহী। প্রকৃতির কাছে আমরা কত অসহায়, প্রকৃতি তা আবার বুঝিয়ে দিল। আজকের কোভিড-১৯ মানবসমাজের সীমাহীন লোভের পরিণাম। সঙ্কেত ছিল বহু দিন থেকেই। ২০১২ সালে স্পিলওভার: অ্যানিম্যাল ইনফেকশনস অ্যান্ড দ্য নেক্সট হিউম্যান প্যানডেমিক বইতে ডেভিড কোয়ামেন এমন অতিমারির ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। কিন্তু কোনও রাষ্ট্র বা নেতা তাঁকে বেশি আমল দেয়নি। আমরা ভুলে গিয়েছি স্টিফেন হকিং-এর সেই কথা, যা শোরগোল ফেলে দিয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, নিজের অস্তিত্ব বাঁচাতে হলে মানুষকে ৬০০ বছরের মধ্যে পাড়ি দিতে হবে অন্য গ্রহের সন্ধানে।

কী হবে বীরভূমের ওই জঙ্গল সাফ করে? গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর কুফল জেনেও নিজেদের দরজায় গণচিতার আয়োজন করব? প্রতি বছর আমরা ২২ এপ্রিল ধুমধাম করে ‘আর্থ ডে’ পালন করি। পালন করছি পরিবেশ দিবস, জীববৈচিত্র দিবস। এ সব শুধু পালনই করা হয়, আমাদের হৃদয় স্পর্শ করে না। তাই পরিবেশ ধ্বংস করে নিজেদের অস্তিত্ব বিপন্ন করার নেশায় না মেতে, সময় এসেছে নতুন করে ভাবার। পৃথিবীর অন্যান্য জীব ও উদ্ভিদ আমাদের অনেক আগে এসেছে। পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলেছে ওরাই। ওদেরও বাঁচার অধিকার আছে।

বরুণকুমার শাসমল

দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

কয়লার বিকল্প

জয়া মিত্রের নিবন্ধটি পড়ার পর কয়েকটি প্রশ্ন উঠে আসছে। একটা সমীক্ষায় জানা গিয়েছিল যে, বীরভূমের মহম্মদবাজারে জমির অনেক নীচে সঞ্চিত কয়লার পরিমাণ প্রায় ২১০ কোটি টন, যা উত্তোলনের খরচ আনুমানিক ৫০ হাজার কোটি টাকা। শোনা যাচ্ছে, আপাতত ১১০০ একর জমি অধিগ্রহণের ব্যবস্থা হচ্ছে। এই জমিতে জনজাতির হাজার তিনেক মানুষের বাস, যাঁরা নাকি কোনও অর্থ বা কর্মসংস্থানের আশ্বাসে তাঁদের জায়গা ছাড়তে রাজি নন। এখন প্রশ্ন হল, জঙ্গল সাফ করে তার টপ সয়েল কেটে খোলামুখ খনি তৈরি করে ক’জনের কর্মসংস্থান সম্ভব? গরিব মানুষের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন শ্রম-নিবিড় শিল্প। বর্তমানে উন্নত প্রযুক্তির যুগে তার দিন শেষ হয়ে আসছে। সে ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিশ্রুতির মূল্য কতটুকু?

এই প্রকল্প রূপায়িত হওয়ার পরে পরিবেশের যে ক্ষতি হবে, সে ব্যাপারে আমি লেখকের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। এই কয়লার বেশির ভাগ ব্যবহার করা হবে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে। কিন্তু পরিবেশ রক্ষার জন্য জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের বিরোধিতা কি আদৌ সম্ভব? সৌরশক্তির ব্যবহারে ইদানীং অনেক গতি এসেছে ঠিকই, কিন্তু তা হলেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার ব্যবহার এখনও অনেক বছর ধরে চলবে।

সৌরশক্তি ব্যবহারে পশ্চিমবঙ্গ খুব বেশি এগোতে পারবে না, কারণ সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে যে ‘এসপিভি’ প্রযুক্তি কাজে লাগানো হয়, তার জন্যেও প্রচুর জমি লাগে। পশ্চিমবঙ্গ-সমেত গোটা পূর্ব ভারতে সূর্যরশ্মির বিচ্ছুরণও কম। তাই কেউ লগ্নি করতে উৎসাহিত হয় না।

অনিলেশ গোস্বামী

শ্রীরামপুর, হুগলি

আলুর ছ্যাঁকা

২১ জুলাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করলেন, তিনি যত দিন মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন তত দিন মানুষ বিনামূল্যে রেশন পাবে। পর দিন বাজারে আলু কিনতে ঢুকে মাথায় হাত। বিনামূল্যে রেশন পেয়ে যে টাকা বাঁচল, এক কেজি আলু কিনতে তার দ্বিগুণ অর্থ গুনতে হচ্ছে। সরকার বিনামূল্যে রেশন দিচ্ছে, আর অসৎ ব্যবসায়ীরা আলু মজুত করে সরকারের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছে।

তপন সাহা

বালুরঘাট, দক্ষিণ দিনাজপুর

আকুপাংচার

‘ড্রাগনের সঙ্গে চাই আদানপ্রদান’ (২০-৭) প্রসঙ্গে দু’টি বিষয় উল্লেখ করতে চাই। এক, ভারত ও চিনের বর্তমান উগ্র জাতীয়তাবাদী কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে দুই দেশের আন্তর্জাতিকতাবাদের ইতিহাস তুলে ধরা খুবই দরকার। ১৯৩৮ সালে জাপানি সাম্রাজ্যবাদের আক্রমণের বিরুদ্ধে সংগ্রামরত চিনের কমিউনিস্ট পার্টির আবেদনে সাড়া দিয়ে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ভারতের মানুষের চাঁদায় কেনা চিকিৎসা সরঞ্জাম-সহ পাঁচ জন ডাক্তারের এক মেডিক্যাল মিশন চিনে পাঠান। বহু প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে তাঁরা যুদ্ধক্ষেত্রে পৌঁছে আহত গ্রামবাসী ও সৈনিকদের চিকিৎসা করেন। তিন জন কিছু দিন পর অসুস্থ হয়ে ফিরে আসেন। তরুণ ডাক্তার কোটনিস যুদ্ধের মধ্যেই চিকিৎসা করতে করতে অসুস্থ হয়ে প্রাণত্যাগ করেন। বিজয় বসু ১৯৪৩ সালে দেশে ফিরে আসেন।

১৯৪৯ সালে স্বাধীনতার পর নতুন চিন সরকার এই মিশন ও তার সদস্যদের সম্মান ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে। কোটনিস চিনে এতটাই সম্মানিত যে, তাঁর নামে সেখানে গড়া হয়েছে ‘কোটনিস স্মৃতি আন্তর্জাতিক শান্তি হাসপাতাল’। তাঁর জীবনী রয়েছে চিনের স্কুলের পাঠ্যবইতে। স্কুলপড়ুয়া এবং পর্যটকদের নিয়মিত তাঁর ও ডাক্তার বেথুনের সমাধিস্থল দেখতে আনা হয়। ভারতে ১৯৪৬ সালে গড়া কোটনিস স্মৃতিরক্ষা কমিটি কিছু দিন পরেই কোথায় হারিয়ে যায়।

১৯৭৩ সালে ডাক্তার বসুর চিনে আমন্ত্রণও প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের একটি চমৎকার দৃষ্টান্ত। ১৯৬২-র যুদ্ধের পর চিনা সরকারের এই পদক্ষেপ কূটনৈতিক দিক থেকে তিক্ততাকে মুছে দিল। চিন সরকার মেডিক্যাল মিশন এবং তার প্রবীণ সদস্যকে যে সম্মান প্রদর্শন করল, তা অভাবনীয়। ভারত সরকার চিন সফর অনুমোদন করার ঐতিহাসিক মুহূর্তে ডাক্তার বসুকে সভাপতি করে কোটনিস স্মৃতিরক্ষা কমিটি পুনরুজ্জীবিত হয়। কিন্তু বহু আবেদন সত্ত্বেও ভারতে ডাক্তার কোটনিসের জীবনীর স্থান হয়নি পাঠ্যপুস্তকে।

দুই, ভারত ও চিনের চিকিৎসা বিজ্ঞানের আদানপ্রদানের দীর্ঘ ঐতিহ্য আছে। চিনের হাসপাতালে সমন্বিত চিকিৎসা হয়, যেখানে আয়ুর্বেদ, আকুপাংচার, চিনের দীর্ঘ ঐতিহ্যসম্পন্ন নিজস্ব রীতির চিকিৎসার সঙ্গে অ্যালোপ্যাথি ব্যবহার করা হয়। আবার ভারতে ‘সূচিকাভরণম্’ বলে প্রাচীন গ্রন্থে যার উল্লেখ আছে, সম্ভবত তা চিনের ৫০০০ বছরের পুরনো আকুপাংচার চিকিৎসার সমগোত্র চিকিৎসাশাস্ত্র। তবে চিন আকুপাংচার চিকিৎসা ও গবেষণার ব্যাপক প্রচলন ঘটিয়েছে। সারা বিশ্বের চিকিৎসাকর্মীদের আকুপাংচার শিক্ষা দিয়েছে চিন। ফলে অ্যালোপ্যাথির পরে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মানুষ এই চিকিৎসাই করায়। উল্লেখ্য, ১৯৫৮ সালে ডাক্তার বিজয় বসুকে চিনে আমন্ত্রণ করে আকুপাংচার শিক্ষা দেয় নতুন চিনের সরকার, কারণ ভারতের মতো গরিব দেশে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন এই চিকিৎসা বিশেষ কার্যকর হতে পারবে। ডাক্তার কোটনিস স্মৃতিরক্ষা কমিটির সদস্য, এবং বিজয় বসুর ছাত্রদের তৈরি মৌড়িগ্রামের আকুপাংচার হাসপাতালের চিকিৎসক হিসেবে জানি, ডাক্তার বসুর ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও প্রশিক্ষণে আজ ভারতে বহু আকুপাংচার চিকিৎসক ও প্রশিক্ষক রয়েছেন। কিন্তু ভারত সরকার এই চিকিৎসাকে স্বীকৃতি দেয়নি। দিয়েছে শুধুমাত্র দু’টি রাজ্য— পশ্চিমবঙ্গ ও মহারাষ্ট্র।

চন্দনা মিত্র

মৌড়িগ্রাম স্টেশন পাড়া, হাওড়া

গেরুয়া কেন?

নির্বাচন দফতর নতুন সংশোধিত ভোটার কার্ড দিচ্ছে। আশ্চর্য, ভোটার কার্ডের রং গেরুয়া করা হয়েছে। তার উপর নামধাম হালকা কালিতে লেখা, যা খালি চোখে পড়া সহজ নয়। ফটোকপি করলে তা পাঠোদ্ধার করা বেশ কষ্টকর। জন্মতারিখ এ বার কার্ডের পিছনে দেওয়া হয়েছে। সাদা কাগজে কালো কালি দিয়ে বড় বড় অক্ষরে লেখা হোক। নাম, ধামের সঙ্গে জন্মতারিখও থাক প্রথম পাতায়।

সৈয়দ আনসার উল আলাম

দাসপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,

কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Coronavirus in India COVID-19
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE