Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: স্টাইল দায়ী কেন?

কিছু খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত বিষয়, যেমন স্টাইল, চুল, ট্যাটু নিয়ে বার বার অনেক খোঁচা দেওয়া হয়েছে। এমনটা কিন্তু কাম্য নয়। পৃথিবীর সব খেলায়, বড় বড় খেলোয়াড়রা প্রায়ই অনেক রকম ফ্যাশন করে থাকেন।

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:১৩
হার্দিক পাণ্ড্য

হার্দিক পাণ্ড্য

ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজ়ে ভারতীয় ক্রিকেটাররা খুব ভাল খেলতে পারেননি। আপনাদের খেলার রিপোর্টে সঙ্গত ভাবেই বেশ কিছু খেলোয়াড়ের তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। কিন্তু তার সঙ্গে কিছু খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত বিষয়, যেমন স্টাইল, চুল, ট্যাটু নিয়ে বার বার অনেক খোঁচা দেওয়া হয়েছে। এমনটা কিন্তু কাম্য নয়। পৃথিবীর সব খেলায়, বড় বড় খেলোয়াড়রা প্রায়ই অনেক রকম ফ্যাশন করে থাকেন। ভারতীয় ক্রিকেটাররা অালাদা কিছু করেননি। তা ছাড়া খেয়াল রাখতে হবে, এ দেশের অনেকেই ভারত ব্যর্থ হলে উন্মত্ত হয়ে যান। এ ধরনের উস্কানিমূলক মন্তব্য তাঁদের ক্ষোভে ঘৃতাহুতির কাজও করতে পারে।

স্বপন কুমার ঘোষ

কলকাতা-৩৪

বঙ্কিম অবিদ্বেষী

‘সাম্প্রদায়িক বঙ্কিম’ (২৮-৮)শীর্ষক চিঠিতে লেখক বলেছেন ‘বন্দে মাতরম্’-এ হিন্দু ধর্মের পৌত্তলিকতাকে তুলে ধরা হয়েছে, এটি নাকি অন্য অনেক ধর্মের পরিপন্থী! বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত ‘‘আমার সোনার বাংলা...’’ কি মাতৃ-কল্পনা নয়? রবীন্দ্রনাথ তো এখানে বলেছেন ‘‘মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি।’’ তা মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশের ধর্মবিশ্বাসের পরিপন্থী কি? বঙ্কিমের দুর্গা-কল্পনা যে সম্মিলিত শক্তির একাত্মতার পরিচায়ক, বুঝতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। বন্দে মাতরম্-এ কোনও দেবদেবীর পুজো করা হয়নি, দেশবন্দনা হয়েছে মাত্র।

‘আনন্দমঠ’-এর দ্বিতীয় সংস্করণে বঙ্কিম ‘ইংরেজ সেনার’ পরিবর্তে ‘যবন সেনা’ ব্যবহার করেছেন, এক জন রাজকর্মচারী হয়ে ব্রিটিশ-বিরোধিতা করার সময় কৌশলী হয়েছেন। যেমন দ্বিজেন্দ্রলাল রায় তাঁর ‘দুর্গাদাস’, ‘মেবার পতন’, ‘প্রতাপ সিংহ’ প্রভৃতি রচনায় কৌশলী হয়েছিলেন।

বঙ্কিমের সমস্ত ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা ছিল। ‘সীতারাম’-এ তিনি মক্কা ও কাশীকে এক করে দেখেছেন। ফকিরের মুখ দিয়ে বলিয়েছেন, ‘‘...তুমি যদি হিন্দু মুসলমান সমান না দেখ, তুমি রাজ্য রক্ষা করিতে পারিবে না।... সেই এক জনই হিন্দু মুসলমান সৃষ্টি করিয়াছেন, উভয়েই তাঁহার সন্তান, উভয়ই তোমার প্রজা।’’ ‘রাজসিংহ’ উপন্যাসের উপসংহারে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য দেখাতে চেয়েছেন। বঙ্কিম-জীবনীকার অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য লিখেছেন, ‘‘আনন্দমঠের সন্ন্যাসীরা মুসলমান রাজশক্তির বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হলে আমরা বলি বঙ্কিম মুসলমান বিদ্বেষী ছিলেন, বঙ্কিম উপন্যাসের শেষে মহাপুরুষের মুখ দিয়ে হিন্দু ধর্মের সুতীব্র সমালোচনা করে হিন্দু সন্তানদের হাত থেকে রাজ্য শাসনের অধিকার কেড়ে নিলে আমরা তাঁকে হিন্দু বিদ্বেষী বলি না কেন? হিন্দু ধর্মের ত্রুটি-বিচ্যুতি-দুর্বলতার সমালোচনা করলে যদি হিন্দু বিদ্বেষী না হন, তবে অত্যাচারী মুসলমান রাজ শাসনের বিরুদ্ধাচারণ করলেই সাম্প্রদায়িক আখ্যায় কলঙ্কিত হতে হবে কেন?’’

‘বঙ্গদেশে কৃষক’ প্রবন্ধে বঙ্কিম একই সঙ্গে হাসিম শেখ এবং রামা কৈবর্ত, মুসলমান ও হিন্দু প্রজার দুর্দশার ছবি আঁকেন। তিনি বলেছেন ‘‘ছয় কোটি সুখী প্রজা দেশের মঙ্গল এবং শ্রীবৃদ্ধি সূচিত করিবে।’’ যখন বিদ্যাসাগর বহুবিবাহ রদ করার জন্য শাস্ত্রীয় বিধান দিচ্ছিলেন, বঙ্কিম বলেছিলেন, বাংলার অর্ধেক মুসলমান, পুরুষের বহুবিবাহ যদি খারাপ হয়, হিন্দু শাস্ত্রের বিধানের দোহাই কেন দেওয়া হবে? নৈতিকতার যুক্তি দেওয়া হোক, হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে সবার জন্য আইন হওয়া উচিত। গোপাল চন্দ্র রায় তাঁর ‘বঙ্কিমচন্দ্রের বিচারক জীবনের গল্প’ বইতে ম্যাজিস্ট্রেট থাকাকালীন হিন্দু-মুসলিম বিভাজন না করে বঙ্কিমের কাজ করার ঘটনা তুলে ধরেছেন।

আশিস আচার্য

পাথরপ্রতিমা, দ. ২৪ পরগনা

বিক্ষিপ্ত উক্তি

‘বন্দে মাতরম্‌’ গানে সাম্প্রদায়িকতা কোথায়, হিন্দু দেবদেবীর বন্দনাই বা কোথায়? এখানে দেশই সন্তান দলের মা, একমাত্র ঈশ্বর। দেশই দুর্গা, কালী, জগদ্ধাত্রী। দেশচর্চার এমন তুলনাহীন নজির বিশ্বে আর কোথায়? বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামী ড. রেজাউল করিম এ সম্পর্কে বলেছেন, “ত্বং হি দুর্গা দশপ্রহরণধারিণী’ হইতে আরম্ভ করিয়া সঙ্গীতের সর্ব শেষ কলিটির বিরুদ্ধে সর্বাপেক্ষা অধিক আপত্তি উঠিয়াছে। বলা হইতেছে কোনও মুসলমান ইহা গাহিতে বা বলিতে পারে না। কিন্তু জিজ্ঞাসা করিতে পারি কি, যাঁহারা এ রূপ অভিযোগ করেন, তাঁহারা এই কলিগুলির অর্থ হৃদয়ঙ্গম করিবার এতটুকুও প্রয়াস পাইয়াছেন? এই কলিগুলিতে কি আছে? ইহার অর্থ যদি এই হয়— মাতঃ দুর্গে, মাতঃ লক্ষ্মী, মাতঃ সরস্বতী! তোমায় আমি পূজা করি, তোমায় আমি বন্দনা করি, স্তব করি তবে বলিব নিশ্চয় ইহা মুসলমানের নিকট আপত্তিকর। কিন্তু উহাতে এ রকম কোনও কথা বলাই হয় নাই... ইহা প্রকারান্তরে পৌত্তলিকতার প্রতি বক্রোক্তি, হিন্দু দেবদেবীর প্রতি ব্যঙ্গের ইঙ্গিত। ইহাতে দেশ-মাতাকে দেব-দেবী অপেক্ষাও বড় বলা হইয়াছে... দেশই আমার দুর্গা, দেশই আমার লক্ষ্মী, দেশই আমার সর্বস্ব...”

বঙ্কিমচন্দ্রের ধর্মচিন্তা ও স্বাদেশিকতার স্বরূপ এবং দেশ-কাল-পাত্র সমাজ ও পারিপার্শ্বিকতাকে সম্পূর্ণ ভাবে উপেক্ষা করে, কেবলমাত্র ‘আনন্দমঠ’ ও অন্যান্য উপন্যাসের কয়েকটি বিক্ষিপ্ত উক্তির ওপর ভিত্তি করে বঙ্কিমচন্দ্রের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক আগ্রাসনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা কতটা মিথ্যে, তা বঙ্কিমের রচনার দ্বারাই বোঝানো যাক। ‘ধর্মতত্ত্ব’-এ তিনি বলছেন, “হিন্দুর কাছে হিন্দু মুসলমান সমান” (২১তম অধ্যায়)। তিনি বলছেন, “যিনি একাধারে শাক্যসিংহ, যীশু খ্রিস্ট, মহম্মদ ও রামচন্দ্র; যিনি...সর্বগুণাধার‌, সর্বধর্মবেত্তা, সর্বত্র প্রেমময়, তিনিই ঈশ্বর হউন বা না হউন, আমি তাঁহাকে নমস্কার করি’’ (৪র্থ অধ্যায়,ধর্মতত্ত্ব)। মুসলমান বিদ্বেষ থাকলে তিনি মহম্মদের নাম উল্লেখ করতেন না।

আওরঙ্গজেব, কতলু খাঁ, মিরজাফর, তকি খাঁ, মতিবিবি এবং বাংলায় মোগল শাসনের তিনি নিন্দা করেছেন। এই বঙ্কিমই আবার আকবর, ওসমান, মিরকাশিম, আয়েষা, দলনী বেগম, মেহরুন্নিসা, চাঁদশা ফকির এবং বাংলায় পাঠান শাসনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।

১২৮০ বঙ্গাব্দের পৌষ সংখ্যা ‘বঙ্গদর্শন’-এ মীর মোশারফ হোসেনের ‘গোরাইব্রীজ অথবা গৌরী সেতু’ নামক কাব্যগ্রন্থের সমালোচনা প্রসঙ্গে বঙ্কিম লেখেন, ‘‘বাঙ্গালা হিন্দু-মুসলমানের দেশ— একা হিন্দুর দেশ নহে। কিন্তু হিন্দু-মুসলমান এক্ষণে পৃথক— পরস্পরের সহিত সহৃদয়তাশূন্য। বাংলার প্রকৃত উন্নতির জন্য নিতান্ত প্রয়োজনীয় যে হিন্দু-মুসলমান ঐক্য জন্মে। যত দিন উচ্চশ্রেণির মুসলমানদিগের এমত গর্ব থাকিবে, যে তাঁহারা ভিন্নদেশীয়, বাঙ্গালা তাহাদের ভাষা নহে, তাঁহারা বাঙ্গালা লিখিবেন না বা বাঙ্গালা শিখিবেন না, উর্দু-ফারসীর চালনা করিবেন, ততদিন সে ঐক্য জন্মিবেনা। কেননা, জাতির ঐক্যের মূল ভাষার একতা।” এই উক্তি কী মুসলিমবিদ্বেষী বঙ্কিমচন্দ্রের উক্তি?

‘সীতারাম’-এর তৃতীয় খণ্ড ঊনবিংশ পরিচ্ছেদে দেখা যাচ্ছে হিন্দু রাজ্য স্থাপনেচ্ছু সীতারামের অমিতাচারে রাজ্য মধ্যে হাহাকার উঠেছে। “এই সব দেখিয়া শুনিয়া চন্দ্রচূড় ঠাকুর এবার কাহাকেও কিছু না বলিয়া তল্পি বাঁধিয়া মুটের মাথায় দিয়া তীর্থযাত্রা করিলেন। ইহজীবনে আর মহম্মদপুর ফিরিলেন না। পথে যিতে যিতে চাঁদশাহ ফকিরের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হইল। ফকির জিজ্ঞাসা করিল “ঠাকুরজি কোথায় যাইতেছেন?” চন্দ্র— কাশী।— আপনি কোথায় যাইতেছেন? ফকির— মোক্কা। চন্দ্র— তীর্থযাত্রায়? ফকির— যে দেশে হিন্দু আছে, সে দেশে আর থাকিব না।’’ এখানে সীতারামের মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী ফকির বলছেন, “যে দেশে হিন্দু আছে, সে দেশে আর থাকিব না।” চরম ঘৃণার সঙ্গে তিনি হিন্দুরাজ্য ত্যাগ করছেন। এ ঘৃণা কার? বঙ্কিমের নয়? তবুও তিনি সাম্প্রদায়িক?

সুমন কুমার মিত্র

লালগোলা বঙ্কিম স্মৃতি চর্চা সমিতি, পাহাড়পুর, মুর্শিদাবাদ

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,

কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

Cricket England Indian Cricket Team হার্দিক পাণ্ড্য
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy