E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: রাজনীতির শিকার

যে কোনও রাজ্য বা দেশের উন্নতির মাপকাঠির অন্যতম শর্ত হিসাবে সেখানে কর্মসংস্থানের চিত্রটিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:১১

‘কাজ কোথায়’ (১৮-৮) শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে কিছু কথা। কাজের অনিশ্চয়তা সম্পর্কে কোন দলটিরই বা চিন্তা আছে? তাদের মধ্যে কেবলই রাজনৈতিক চাপানউতোর চলছে। ভোটব্যাঙ্কের ভাবনাই তাদের কাছে মুখ্য। শুধুমাত্র গরিব অসহায় মানুষের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য রাজনীতির বড়ই অভাব আজ সমগ্র দেশ জুড়ে। আমাদের রাজ্যে যদি উপযুক্ত কাজের অভাব না থাকত, কেউই নিজের ঘর-বাড়ি ছেড়ে ভিন রাজ্যে স্বেচ্ছায় কাজের সন্ধানে যেতেন না। এখন কাজহারা এই সব মানুষের অনিশ্চিত জীবনে দারিদ্রের জ্বালার স্থায়ী সমাধান কী ভাবে হবে, তা নিয়ে কোনও রাজনৈতিক দলেরই কি বিকল্প ভাবনা আছে?

যে কোনও রাজ্য বা দেশের উন্নতির মাপকাঠির অন্যতম শর্ত হিসাবে সেখানে কর্মসংস্থানের চিত্রটিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। অথচ, রাজ্যের বর্তমান শাসক দল এই বিষয়ে কোনও দিশা দেখাতে পারেনি, যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তাই মানুষকে অনুগত রাখার রাজনীতিকে আশ্রয় করে সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিকের জন্য সেই চিরাচরিত কায়দার জনমোহিনী অনুদানের রাজনীতির শরণাপন্ন হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে তা মানবিক মনে হলেও রাজ্য কোষাগার ও ভবিষ্যতের কথা ভেবে তা কতটা বাস্তবোচিত ও যুক্তিযুক্ত, প্রশ্ন ওঠাটাই স্বাভাবিক। এই সমস্ত পরিযায়ী শ্রমিককে বিতাড়নের পিছনে যেমন সাম্প্রদায়িক রাজনীতি, তেমনই বিষয়টির স্থায়ী সমাধান নিয়ে পরিকল্পনার অভাবও লক্ষ করা যাচ্ছে। বরং, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে প্রশাসন এই শ্রমিকদের সাময়িক অনুদানের নামে সংখ্যালঘু মানুষের মন জয়ের চেষ্টাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। এই মেরুকরণের ফাঁদে পা না দিয়ে অন্যান্য বিরোধী দল এবং প্রতিটি শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষেরই প্রতিবাদ করা উচিত, এই ভাবে বেছে বেছে মূলত সংখ্যালঘু বাঙালিদের বিভিন্ন রাজ্য থেকে বিতাড়িত করার জন্য। পাশাপাশি শাসক দলের বিরুদ্ধেও প্রশ্ন তুলে সুসংহত প্রতিবাদের মাধ্যমে তাদের বাধ্য করা উচিত যাতে রাজ্যে কর্মসংস্থানের অভাব ঘোচাতে তারা সচেষ্ট হয়। অনুদান দিয়ে গরিব মানুষদের অনুগত রাখার অনৈতিক প্রচেষ্টা থেকে সরে এসে দীর্ঘমেয়াদি ভাবে শিল্পের সাধনায় মনোনিবেশ করাটাই কাম্য।

অশোক দাশ, রিষড়া, হুগলি

শুধুই অন্ধকার

‘কাজ কোথায়’ শীর্ষক সম্পাদকীয় প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। মনে পড়ে, এক সময় গণপ্রজাতন্ত্রী চিনের মানুষ (ছাত্র-গবেষক-সাংবাদিকরা) মনে করেছিলেন যে, সিঙ্গুরে জমিহারাদের জন্য আরও বেশি ক্ষতিপূরণ দেওয়া উচিত ছিল এবং তা দিতে হত অনেক আগেই। কমিউনিস্ট মতাদর্শে বিশ্বাসী চিনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি সমর্থন-সহানুভূতির খবর আমাদের আশ্চর্য করেছিল।

আনন্দবাজার পত্রিকায় একটি প্রতিবেদনে জানা গিয়েছিল, রাজ্যে ঘাস কাটার চাকরিতে ভিড় করেছেন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীরা। এর থেকেই বোঝা যায় যে, বর্তমান সময়ে পশ্চিমবঙ্গে শিল্পের চালচিত্রটির কেমন ভগ্নদশা! এরই মাঝে বাঙালি পরিযায়ী শ্রমিকদের ভিন রাজ্য থেকে বিতাড়ন শুরু হয়েছে। চিন্তিত মুখ্যমন্ত্রী বঙ্গীয় পরিযায়ীদের রাজ্যে ফিরে আসতে বলেছেন। এবং তাঁদের জন্য যথাসম্ভব সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি মতো শ্রমিকদের এককালীন ভাতা দেওয়া হবে রাজ্য সরকারের তরফে। বিকল্প কাজের ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা প্রতি মাসে এই ভাতা পাবেন। রেশন কার্ড, স্বাস্থ্যসাথী কার্ডও দেওয়া হবে। বঙ্গের পরিযায়ী শ্রমিকের দল অধিকাংশই সংখ্যালঘু। শাসক তৃণমূল কংগ্রেস এবং রাজ্য সরকার চায় পরিযায়ী শ্রমিকেরা রাজ্যে ফিরুন। স্বভাবতই বলা যায় যে, জনবাদী রাজনীতির দুয়ারে দাঁড়িয়ে সংখ্যালঘু পরিবারগুলি এবং শ্রমিকদের আসন্ন বিধানসভা ভোটের প্রাক্কালে কাছে টানা রাজ্যের শাসক দলের অন্যতম উদ্দেশ্য। কিন্তু প্রশ্ন হল, অনুদানভিত্তিক এই জনবাদী রাজনীতির দুয়ারে দাঁড়িয়ে আরও কত দিন একটি দল হিসাবে অপ্রতিরোধ্য হতে পারবেন তাঁরা? তাঁদের রাজত্ব দীর্ঘকালের জন্য কায়েম করতে পারবেন? ভারতের নাগরিক হিসাবে পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকশ্রেণির বিবিধ প্রদেশে কাজ করতে যাওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু ভিন রাজ্যে বঙ্গীয় সংখ্যালঘু পরিযায়ীদের হটিয়ে দেওয়ার ঘটনায় রাজ্য যদি নিজেদের বড় অসহায় প্রতিভাত করে এবং রাজ্যে শিল্প না থাকা অবস্থায়ও তাঁদের দিকে শুধুই অনুদানের হাতটি বাড়িয়ে দেয়, তা হলে বলতে হয় যে, এই অনুদান এখন কেবলই মনোলোভা রাজনীতির অন্যতম উপকরণ!

ভারতের মতো বৃহৎ একটি দেশে সর্বত্র কাজের জোগান সমান নয়। তা ছাড়া শিল্প না থাকার কারণে এ রাজ্যে কাজের সুযোগ কম এবং মজুরির হারও অন্য উন্নত রাজ্যগুলির চেয়ে ঢের কম। তাই তাঁরা রাজ্য ছেড়ে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে ভারতের নানা দিকে ছড়িয়ে পড়বেন এটাই স্বাভাবিক। চুক্তিভিত্তিক এই সকল শ্রমিকের দল মালিকদের সঙ্গে দরদস্তুর করার শক্তিটুকুও পান না। অসময়ে ছুটি বা অধিক দিন ছুটির ক্ষেত্রে কাজ হারানোরও ভয় থাকে। সেই সঙ্গে রয়েছে বাড়ি ফেরার খরচ। তাই শুধুমাত্র নাগরিক হিসাবে ভোটদানের স্বার্থে তাঁরা ঘরমুখী হতে চান না। পরিযায়ী ও তাঁদের পরিবারের প্রয়োজনগুলি পঞ্চায়েত ব্যবস্থা তথা রাজ্য সরকারের দ্বারা উপেক্ষিত হয়। তার অন্যতম কারণ ভোটের ময়দানে একটি পৃথক শক্তি হিসাবে তাঁরা আত্মপ্রকাশ করতে পারেন না। ভোটের ময়দানে তাঁরা রাজনৈতিক নেতৃবর্গের নিকট মূল্যবান গোষ্ঠী হিসাবে মর্যাদা পান না। দূরভোট ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশের তথা রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক হিসাবে রাষ্ট্র তাঁদের কথা ভাবে না। তাই কি আসন্ন বিধানসভা ভোটের অনতিদূরে ঘরে ফিরলে তাঁদের জন্য নানান ভাতা এবং সরকারি সাহায্যের কথা ঘোষণা?

বামেরাও তাঁদের দায় এড়াতে পারেন না। বাম আমলে ভূমিসংস্কার, গ্রামীণ ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের ফলে সত্তরের দশক থেকে শুরু করে আশির দশকের শেষ পর্যন্ত বাংলার জমির উপর কৃষকদের অধিকার আরও জোরালো হয়েছিল। সকলেই ভেবেছিলেন কৃষির হাত ধরেই পশ্চিমবঙ্গে অগ্রগতির চাকা ঘুরবে। আর এক দিকে ‘গরিব খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষের পক্ষে লড়াই’-এর স্লোগান রাজ্যে শ্রমিকের অধিকার রক্ষা করতে পারেনি। রাজ্যে শিল্প তখনই পিছনের সারিতে চলে যায়। পরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পশ্চিমবঙ্গে শিল্পোন্নয়নের মুখ হয়ে উঠতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তত দিনে বিরোধী দল ক্ষমতার গন্ধ পেয়ে গিয়েছিল। অনেক দেরিতে বাম সরকারের শিল্প-দরদের পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধীরা আন্দোলনের জমি মজবুত করে ফেলেন। রাজ্যবাসী ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী রাজনীতির পাকেচক্রে পড়েও শিল্পায়নের সূর্যোদয় দেখার স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি ঘুরে যায়। রাজ্যের শিল্পায়নে নবজাগরণের দ্বারা বৃহৎ এবং অনুসারী শিল্প স্থাপনের মাধ্যমেই শ্রমিকদের মুখে হাসি ফুটে উঠতে পারত। কিন্তু, কেন বার বার মনে হয় যে শিল্পসাধনায় মনোনিবেশ করা যেন বরাবরই শাসকের স্বভাববিরুদ্ধ?

সঞ্জয় রায়, দানেশ শেখ লেন, হাওড়া

বিপদের পথ

দমদম হনুমান মন্দির থেকে দমদম স্টেশন ও জপুর সংলগ্ন ক্রসিংয়ে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চলে। হনুমান মন্দির ও জপুরের ঢোকার রাস্তার মুখে যানজটও ভয়াবহ। এ ক্ষেত্রে দমদম হনুমান মন্দির থেকে দমদম স্টেশনগামী গাড়ি এবং জপুরের রাস্তায় ফিরতি গাড়ি বা নাগেরবাজার অভিমুখী গাড়ির অনিয়ন্ত্রিত গতিবেগ প্রায়ই দুর্ঘটনার পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। আমার নিজের সঙ্গেই দু’-দু’বার দুর্ঘটনা হতে পারত। ভাগ্যের জোরে বেঁচে গিয়েছি।

সামনেই পুজো। যানজটের সমস্যা আরও বাড়বে। আর ট্র্যাফিক গার্ড থাকা সত্ত্বেও তাঁর নজর এড়িয়ে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চলা বন্ধ হচ্ছে না-ই বা কেন? দ্রুত এই সমস্যার সমাধানের আবেদন জানাই।

সোহিনী দত্ত, কলকাতা-৭৪

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

migrant labour

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy